বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

স্যামসাং গ্যালাক্সি সিরিজের মোবাইলের বিবর্তন (শেষ পর্ব)

মো. রায়হান কবির : অ্যান্ড্রয়েড স্যামসাংয়ের মোবাইলের বাজারকে এনে দেয় অভাবিত সাফল্য এবং বিশ্বব্যাপী সুনাম।

 

তাই স্যামসাংয়ের অ্যান্ড্রয়েড সিরিজ বা গ্যালাক্সি সিরিজ নিয়ে দুই পর্বের বিশেষ প্রতিবেদনের আজ থাকছে শেষ পর্ব।

 

স্যামসাং গ্যালাক্সি সিরিজ শুরুর গল্পটা প্রথম পর্বে প্রকাশ করা হয়েছে। পড়ুন: । 

 

পরবর্তী অংশ: স্যামসাং অ্যান্ড্রয়েড ফোন দিয়ে তাদের জয়যাত্রা অব্যাহত রাখে পরবর্তী বছরগুলোতেও। যদিও তারা অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে ‘টাইজেন’কে অ্যান্ড্রয়েডের বিকল্প হিসেবে দাঁড় করাতে চেয়েছিল। কিন্তু টাইজেন মোবাইল বাজারে খুব একটা সাড়া ফেলতে পারেনি। গ্যালাক্সি এসটু বের করার পর তারা পরবর্তী সেটটি বের করতে এক বছরের কিছু সময় বেশি নেয়।

 

২০১২ সালের মে মাসের ৩ তারিখে আসে তাদের গ্যালাক্সি এসথ্রি। এই মোবাইলে স্যামসাং প্রথম ‘আই র্ট্যাকিং’ সফটওয়্যার ব্যবহার করে। আর অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে ব্যবহার করে অ্যান্ড্রয়েড ৪.০.৪ অর্থাৎ অ্যান্ড্রয়েড আইসক্রিম স্যান্ডউইচ। এর ডিসপ্লের সাইজও বেড়ে হয় ৪.৮ ইঞ্চি। এছাড়াও স্যামসাং এই ফোনে আরেকটি নতুন ফিচার যোগ করে ‘এস-বিম’। যেটা দিয়ে শুধুমাত্র স্যামসাংয়ের ডিভাইসগুলোর মধ্যে ডাটা আদান-প্রদান করা যায়।

 

২০১৩ সালের ১৪ মার্চ স্যামসাং নিয়ে আসে গ্যালাক্সি সিরিজের চতুর্থ ফোন। গ্যালাক্সি এস ফোর নামের এই সেটটিকে স্যামসাং ‘ফ্যাবলেট’ নামে ব্র্যান্ডিং করে। মানে ফোন প্লাস ট্যাবলেট অর্থাৎ ফ্যাবলেট। এই ফোনের পর্দাও বেড়ে দাঁড়ায় ৫ ইঞ্চি। অ্যান্ড্রয়েড জেলিবিন সংস্করণের এই ফোনে ব্যবহার করা হয় ডুয়েল ভিডিও ক্যাপচারিং মোড। মানে এই ফোনের মাধ্যমে দুটো ক্যামেরা (সামনের ও পিছনের) দিয়ে একই সঙ্গে ভিডিও করার সুবিধা দেয় স্যামসাং।

 

২০১৪ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি স্যামসাং নিয়ে আসে তাদের গ্যালাক্সি সিরিজের পরবর্তী সেট। এই ফোনের বিশেষত্ব ছিল এই ফোন ধুলো ও পানি প্রুফ। অর্থাৎ এই ফোন তিন ফুট পর্যন্ত পানির নিচেও সচল থাকে এবং এর ভেতরে পানি ঢুকেনা। স্যামসাং গ্যালাক্সি এস ফাইভ অ্যান্ড্রয়েড কিটক্যাট সংস্করণ ব্যবহার করে এবং এই ফোনের মাধ্যমে স্যামসাং ফিঙ্গারপ্রিন্ট সিকিউরিটি সিস্টেম চালু করে। তাছাড়া এই ফোনে আলট্রা পাওয়ার সেভিং মোড অপশনও দেয়া হয়। যাতে করে মোবাইলের ১০% পর্যন্ত পাওয়ার বা ব্যাটারি সেভ করা সম্ভব হয়।

 

২০১৫ সালে স্যামসাং দেখায় তার আসল চমক! এই বছর স্যামসাং আনে তাদের প্রথম ‘বাঁকানো’ পর্দার মোবাইল সেট। একই সঙ্গে দুটি ফ্ল্যাগশিপ ফোন লঞ্চ করে স্যামসাং। প্রথমটি স্যামসাং গ্যালাক্সি এস সিক্স এবং পরেরটি স্যামসাং গ্যালাক্সি এস সিক্স এজ। স্যামসাং গ্যালাক্সি এস সিক্স এজ ফোনের পর্দাই সেই কাঙ্ক্ষিত বাঁকানো পর্দার সেট। এই ফোনের ফিচারের চেয়ে স্টাইল ছিল বেশি। মেটালের সঙ্গে গ্লাসের সমন্বয়ে তৈরি করা হয় এর ফ্রেম। তাছাড়া এই ফোনে পূর্বের ফোনের (এস ফাইভ) বেশ কিছু ফিচার ক্যারিফরওয়ার্ড হয়। যেমন ধুলো ও পানি প্রুফ। এটিই স্যামসাংয়ের এ যাবতকালের সবচেয়ে আলোচিত ফোন। এই ফোন স্মার্টফোনের জগতে অন্যতম সেরা ফোনের একটি বলে বিবেচিত হয়। তাছাড়া গত বছরের সেরা স্মার্টফোনেরও অ্যাওয়ার্ডও পায় এটা।

 

এবার আসা যাক, স্যামসাং এর নতুন চমক নিয়ে। চলতি বছরের মার্চের ১১ তারিখে বার্সিলোনাতে হতে যাচ্ছে মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস টেক শো। আর সেখানেই স্যামসাং তাদের পরবর্তী আকর্ষণ গ্যালাক্সি এস সিরিজের নতুন ফোন গ্যালাক্সি এস সেভেন ও গ্যালাক্সি এস সেভেন এজ উম্মুক্ত করতে যাচ্ছে। আগের ধারাবাহিকতায় এবারও এই ফোনের পর্দা বড় হতে যাচ্ছে। যেখানে গ্যালাক্সি এস সিক্স বা সিক্স এজ ছিল ৫.১ ইঞ্চির এবার তা বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৫.৫ ইঞ্চিতে। আর সবচেয়ে বড় চমক থাকছে গেমস প্রিয় মানুষদের জন্যে। স্যামসাং বলছে গেমসের জন্যে এর চেয়ে ভালো সেট বর্তমান বাজারে আর দুটো নেই।

 

তাছাড়া এস সেভেনের পর্দা আগের চেয়েও একটু বেশি বাঁকানো হবে! সুতরাং বুঝতেই পারছেন সেভেন এজের বাঁকে বাঁকে লুকিয়ে আছে চমক। ক্যামেরায় যুক্ত হচ্ছে উন্নত টেকনোলোজি। এই ফোনে ২০০ জিবি পর্যন্ত ধারণ ক্ষমতা থাকছে। আর মাইক্রো এসডি কার্ডটি চাইলে আপনি সিমের ট্রেতেও ব্যবহার করতে পারবেন। ব্যাটারিও হবে আগের চেয়ে উন্নত। একটানা ১৫ ঘণ্টা এইচডি কোয়ালিটির ভিডিও দেখা যাবে এক চার্জেই। আর ওয়াটারপ্রুফ টেকনোলজিও হয়েছে আরো উন্নত। ত্রিশ মিনিট যাবত প্রায় ৫ ফুট পানির নিচে নির্বিঘ্নে কাটিয়ে দিতে পারবে।

 

আর ওয়্যারলেস চার্জিং সিস্টেম তো থাকছেই। এতে গেমসকে আরো নিখুঁত ও ব্যাটারি কম খরচের জন্যে উন্নত মানের প্রসেসর ব্যবহার করা হচ্ছে। যা হবে স্মার্টফোনের ইতিহাসেই প্রথম। এই টেকনোলজি বর্তমানে শুধুমাত্র উন্নত মানের পিসি বা গেম কনসোলে ব্যবহার করা হয়। যা ‘ভলকান এপিআই’ নামে পরিচিত। যার পুরো অর্থ হচ্ছে, ভলকান অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রাম ইন্টারফেস। এটা মোবাইল ফোনে গেমসের গ্রাফিক্স আরো স্বচ্ছ এবং ব্যাটারিকে করবে আরো সাশ্রয়ী।

 

এর ক্যামেরার ফোকাস আগের চেয়ে ২৫% বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা কিনা এফ/১.৭ থেকে এফ/১.৯ হচ্ছে। অর্থাৎ এই ফোন ফ্ল্যাশ লাইট ছাড়াই স্বল্প আলোতে ছবি তুলতে সক্ষম। আর ডুয়েল পিক্সেল ফোকাস সিস্টেম এই ফোনের আরেকটি নতুন মাত্রা। যা কিনা শুধুমাত্র ডিএসএলআর বা সিনেমার ক্যামেরায় ব্যবহার করা হচ্ছে।

 

তবে চাঁদের কলঙ্কের মতোই ছোট্ট একটু দাগ থেকেই যাচ্ছে স্যামসাং এর নতুন ফোনে। আর তা হচ্ছে এর ক্যামেরার মেগাপিক্সেল। হ্যাঁ, নতুন ফোনে তা কমে যাচ্ছে! ১৬ মেগাপিক্সেল থেকে এর ক্যামেরা দাঁড়াচ্ছে ১২ মেগাপিক্সেলে। তবে এর কারণ ক্যামেরার এই নতুন টেকনোলোজি। এতে আরো থাকছে ৩৬০ ডিগ্রি এঙ্গেলে ছবি তোলার সুবিধা যাতে প্লেব্যাকও করা যাবে। একে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ক্যামেরা বলা হবে। যার মাধ্যমে ধারণকৃত ফুটেজ সরাসরি ইউটিউব বা ফেসবুকে শেয়ার করা যাবে।

 

ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ক্যামেরা কিন্তু আলাদা ফিচার হিসেবেই থাকছে। এখন দেখার বিষয় বাজারে আসার পর এই ফোন মোবাইলপ্রেমীদের কাছ থেকে কেমন সাড়া পায়।

     

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/ফিরোজ