বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মেরু অঞ্চলে ভারত আয়তনের মতো বরফ গলে গেছে!

সার্জিন শরীফ : অজানা কোনো এক কারণে দক্ষিণ মেরুর অ্যান্টার্কটিকা এবং উত্তর মেরুর আর্কটিক সাগরে ভারতের আয়তনের মতো বিশাল এলাকায় বরফের গলন শুরু হয়েছে। বিজ্ঞানীরা এর কোনো সঠিক কারণ খুঁজে পেতে সক্ষম হননি।

 

যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডোতে অবস্থিত ন্যাশনাল স্নো অ্যান্ড আইস ডাটা সেন্টার (এনএসআইডিসি)-র পরিচালক মার্ক সেরেজ এ সম্পর্কে বলেন, ‘সেখানে যা ঘটছে তা সত্যিই আশ্চর্জনক।’

 

গত নভেম্বরের কয়েকদিন আর্কটিক অঞ্চলের তাপমাত্রা সেখানকার স্বাভাবিক অর্থাৎ ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর থেকে সামান্য বেশি ছিল বলে জানা যায়।

 

বিগত কয়েক বছর ধরে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাব এবং পৃথিবীর উত্তর প্রান্তের বরফের ক্রমাগত সরে যাওয়া স্বত্ত্বেও অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের দক্ষিণ মহাসাগরের বরফ বিস্তৃত হতে শুরু করেছিল। কিন্তু এখন পৃথিবীন উভয় প্রান্তই সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন বিজ্ঞানীদের উদ্বিগ্নতার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, কারণ এটি মানবসৃষ্ট গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি করে।

 

এল নিনো নামক একটি আবহাওয়াভিত্তিক সংস্থা প্রত্যক্ষ করেছে, প্রশান্ত মহাসাগর থেকে ছড়ানো তাপ এবং প্রকৃতির অস্বাভাবিক রূপ পরিবর্তন এসবের জন্য দায়ী। গত কিছু বছর থেকে অ্যান্টার্কটিকার বিস্তৃত সামুদ্রিক বরফ বড় প্রসঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে সেসব মানুষদের জন্যও যারা সন্দেহ করতেন গ্লোবাল ওয়ার্মিং মানব সৃষ্ট একটি ধারণামাত্র।

 

ব্রিটিশ অ্যান্টার্কটিক সার্ভের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা জন টার্নারের মতে, গত নভেম্বরে অ্যান্টার্কটিকায় প্রবাহমান পশ্চিমা ঠান্ডা বাতাসের বেগ সবচেয়ে কম ছিল। সম্ভবত এই কারণেই দক্ষিণ মেরুর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে।

 

অ্যান্টার্কটিকার উচ্চ দ্রাঘিমাংশের ওজন স্তরের পুনর্গঠন এর একটি কারণ হতে পারে। কিন্তু আসলেই সেখানে কি ঘটছে সেটা বোঝা দুষ্কর। টার্নার আরো বলেন, ‘১৯৭৯ সালে যখন আমরা স্যাটেলাইট থেকে তথ্য পাওয়া শুরু করেছিলাম তখন থেকেই দক্ষিণ মহাসাগরের বরফ গলতে শুরু করেছিল। সবাই এর কারণ হিসেবে গ্লোবাল ওয়ার্মিং-কে দায়ী করছিলেন। কিন্তু পরে আবার তা জমাট বাঁধতেও শুরু করেছিল।’

 

এনএসআইডিসি’র তথ্যমতে, অ্যান্টার্কটিকার চারপাশের জমাট বরফ আশঙ্কাজনক হারে গলতে শুরু করেছে। চলতি মাসের শুরুর দিকে ১১.২২ মিলিয়ন বর্গ কি.মি এলাকাজুড়ে বরফ গলে যায়, যা ১৯৮২ সালের রেকর্ডকেও ছাড়িয়ে গেছে। অন্যদিকে এ বছর আর্কটিক সাগরের পরিস্থিতি কিছুটা হলেও স্বস্তিদায়ক। সেখানে এই সময়ের মধ্যে ১০.২৫ মিলিয়ন বর্গ কি.মি. এলাকা জুড়ে বরফ গলেছে, যা ২০০৬ সালের রেকর্ড থেকে কিছুটা কম।

 

পোস্টড্যাম ইনস্টিটিউট ফর ক্ল্যাইমেট ইম্প্যাক্ট রিসার্চ এর অধ্যাপক আন্দ্রেস লেভারম্যান মনে করেন যে, মেরু অঞ্চলের এই অস্বাভাবিক হারে বরফ গলনের পেছনে মানবসৃষ্ট উষ্ণতাই দায়ী।

 

এনএসআইডিসির সেরেজ বলেন, উদ্বেগের কারণ হল অ্যান্টার্কটিকার হচ্ছে একটি ঘুমন্ত হাতির মতো যা সক্রিয়তা লাভ করছে।

 

বিজ্ঞানীরা বলছেন, অ্যান্টার্কটিকার হিমবাহ খুব দ্রুত সমুদ্রের সঙ্গে মিশে যেতে পারে যা সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির স্বাভাবিক গতিকে আরো বাড়িয়ে দেবে যদি সমুদ্রে ভাসমান বরফের পরিমাণ এতটাই কম হয় এবং তা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া কোনোমতেই সম্ভব না হয়।

   

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১২ ডিসেম্বর ২০১৬/ফিরোজ