বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সবচেয়ে ‘অপছন্দের’ ১০ ভিডিও

মনিরুল হক ফিরোজ : ইউটিউব একটি অদ্ভুত এবং চমৎকার জায়গা। অ্যাডাল্ট ব্যতীত আর সব ধরনের ভিডিও দেখার জন্য বিশ্বে সবচেয়ে জনপ্রিয় এই সাইটটি। ভিডিওর জনপ্রিয়তা নির্ধারণের জন্য ইউটিউব ২০১০ সালে ফাইভ স্টার স্কেল রেটিং সিস্টেমটি বাদ দিয়ে সহজ লাইক/ডিজলাইক বাটন যুক্ত করে। কারণ বেশিরভাগ মানুষ হয় এক স্টার রেটিং নয়তো ফাইভ স্টার রেটিং ব্যবহার করতো, যা আরো অনেক অনুমান তৈরি করে। কিন্তু এই পরিবর্তনের ফলে সর্বাধিক লাইকপ্রাপ্ত কিংবা ডিজলাইকপ্রাপ্ত ভিডিওগুলো আলোচনার আকর্ষণীয় বিষয়ে পরিণত হয়েছে। জেনে নিন, ইউটিউবে সর্বাধিক ডিজলাইক (অপছন্দ) পাওয়া ১০টি ভিডিও। ১০. গোস্টবাস্টার্স - অফিসিয়াল ট্রেইলার (এইচডি)

ভিডিওটি দেখা হয়েছে : ৪ কোটি ২৫ লাখ ২৫ হাজারের বেশি সংখ্যকবার।

লাইকের সংখ্যা : ২ লাখ ৯৬ হাজারের বেশি

ডিজলাইকের সংখ্যা: ১০ লাখ ৩৬ হাজারের বেশি।

 

বিখ্যাত মুভি সিরিজ ‘গোস্টবাস্টারস’-এর নতুন মুভির ট্রেইলারটি, ইউটিউবে যতগুলো মুভির ট্রেইলার রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ডিজলাইক পাওয়া ট্রেইলার। আশির দশকের বিখ্যাত এই মুভি সিরিজটির মূল মুভিটি মুক্তি পায় ১৯৮৪ সালে এবং সিক্যুয়াল মুক্তি পায় ১৯৮৯ সালে। ২০১৬ সালে সিনেমাটির রিমেক মুক্তি পায়। কিন্তু তার আগে ইউটিউবে প্রকাশিত এই কমেডি রিমেক সিনেমাটির ট্রেইলার অনেকেই অপছন্দ করে ট্রেইলারে হাস্যরসের অভাব থাকায়।

 

৯. অ্যানাকোন্ডা- নিকি মিনাজ

ভিডিওটি দেখা হয়েছে : ৬৫ কোটি ৪৭ লাখ ৪ হাজারের বেশি সংখ্যকবার।

লাইকের সংখ্যা : ২৮ লাখ ৯৪ হাজারের বেশি।

ডিজলাইকের সংখ্যা: ১২ লাখ ৮৫ হাজারের বেশি।

২০১৪ সালের ১৯ আগস্ট ইউটিউবে আপলোড হয় মার্কিন পপ গায়িকা নিকি মিনাজের ‘অ্যানাকোন্ডা’ মিউজিক ভিডিও। এই মিউজিক ভিডিওর মাধ্যমে শরীরী আবেদনে ঝড় তোলেন তিনি। রাতারাতি বিশ্ব তারকায় পরিণত হন। অ্যানাকোন্ডা মিউজিক ভিডিওটি ইউটিউবে দেখা হয়েছে ৬৪ কোটির বেশি সংখ্যকবার। এবং লাইক পেয়েছে প্রায় ২৯ লাখ। নিকি মিনাজের এই মিউজিক ভিডিওটি অপরটিকে সর্বাধিক ডিজলাইক পাওয়া ভিডিওর তালিকায় ঠাইঁ হওয়ার ব্যাপারে অনুমান করা হচ্ছে যে, অনেকে এটিকে জঘন্য এবং নারী-অধ:পতিত ‘সংগীত’ হিসেবেও মনে করেছেন।

 

৮. উই ক্যান নট স্টপ- মাইলি সাইরাস

ভিডিওটি দেখা হয়েছে : ৭৪ কোটি ৩৯ লাখ ৫৭ হাজারের বেশি সংখ্যকবার।

লাইকের সংখ্যা : ২৭ লাখ ২১ হাজারের বেশি।

ডিজলাইকের সংখ্যা: ১২ লাখ ৮৯ হাজারের বেশি।

মাইলি সাইরাসের বিখ্যাত গানগুলোর একটি হচ্ছে, উই ক্যান নট স্টপ। গানটির মিউজিক ভিডিও ইউটিউবে প্রকাশ করা হয় ২০১৩ সালের ১৯ জুন। দারুণ গানের এই ভিডিওটি অনেকে অপছন্দ করার কারণ হতে পারে মাইলির যৌনতাপূর্ণ আচরণ।

 

৭. রেকিং বল- মাইলি সাইরাস

ভিডিওটি দেখা হয়েছে : ৮৭ কোটি ১৯ লাখ ৪৫ হাজারের বেশি সংখ্যকবার।

লাইকের সংখ্যা : ৩৫ লাখ ১৪ হাজারের বেশি।

ডিজলাইকের সংখ্যা : ১৩ লাখ ৫৩ হাজারের বেশি।

২০১৩ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ইউটিউবে প্রকাশিত মাইলি সাইরাসের এই মিউজিক ভিডিওটি যেমন জনপ্রিয়তার চূড়ায় পৌঁছে তেমনি বিতর্কের ঝড় তোলে। ভিডিওটি সকলের মনোযোগ কাড়ে রেকিং বলের দৃশ্যে মাইলি সাইরাস সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে হাজির হওয়ায়। রেকিং বল গানটি মাইলি সাইরাসের বিখ্যাত গানগুলোর মধ্যে একটি। মুক্তি পাওয়ার প্রথম দিন ১ কোটি ৯৩ লাখ বার দেখা হয়েছিল এই ভিডিও এবং মাত্র ৩ মাসের মধ্যে ৩৭ কোটি ১০ লাখের বেশিবার গানটি দেখা হওয়ায়, ২০১৩ সালে ইউটিউবে সবচেয়ে বেশি সংখ্যকবার দেখা ভিডিওর রেকর্ড গড়ে রেকিং বল। তবে নগ্নতার কারণে ভিডিও সমালোচিত।

 

৬. সোয়েট শার্ট- জ্যাকব সারটরিয়াস

ভিডিওটি দেখা হয়েছে : ৩ কোটি ৯৫ লাখ ৫৯ হাজারের বেশি সংখ্যকবার।

লাইকের সংখ্যা : ৫ লাখ ৮৫ হাজারের বেশি।

ডিজলাইকের সংখ্যা : ১৬ লাখ ১১ হাজারের বেশি।

ইন্টারনেটে যে কারো তারকা হয়ে ওঠার সুযোগ রয়েছে, তাই ইন্টারনেট ব্যক্তিত্বের ভিডিও এই তালিকায় থাকাটা স্বাভাবিক। কেননা ইন্টারনেটে মানুষ শুধুমাত্র তারকাদের ভিডিও দেখে না। প্রচলিত তারকার বাইরেও ইন্টারনেট তারকাও অনেক। তেমনি একজন হচ্ছেন ১৪ বছর বয়সী জ্যাকব। এই কিশোর সোশ্যাল মিডিয়ায় তারকা হয়ে ওঠে বিভিন্ন জনপ্রিয় গানের লিপ-সিঙ্ক ভিডিও তৈরি করে। ২০১৬ সালের ৭ জুন, জ্যাকব তার প্রথম একক গান সোয়েট শার্ট ইউটিউবে প্রকাশ করে। মিউজিক ভিডিওটির গল্প স্কুল জীবনের প্রেম নিয়ে।

 

৫. গ্যাংনাম স্টাইল- সাই

ভিডিওটি দেখা হয়েছে : ২৭৫ কোটি ৮০ লাখ ২৬ হাজারের বেশি সংখ্যকবার

লাইকের সংখ্যা : ১ কোটি ১৯ লাখ ৯১ হাজারের বেশি।

ডিজলাইকের সংখ্যা : ১৬ লাখ ৯৩ হাজারের বেশি।

ভাইরাল ভিডিওর সংজ্ঞা বলা যেতে পারে, গ্যাংনাম স্টাইল ভিডিওকে। ২০১২ সালের ১৫ জুলাই ইউটিউবে প্রকাশিত দক্ষিণ কোরিয়ার গায়ক সাই-এর গ্যাংনাম স্টাইল পুরো বিশ্বকে ভক্ত বানিয়েছিল। ইউটিউবে এই ভিডিও গড়েছে কয়েকটি অনন্য রেকর্ড। যেমন: ইউটিউবের ইতিহাসে এই ভিডিও সর্বপ্রথম ১০০ এবং ২০০ কোটি ভিউয়ের মাইলফলক অর্জন করেছে। এছাড়া এটি ইউটিউবে এখন পর্যন্ত সর্বাধিক দেখা ভিডিও। গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডেও নাম রয়েছে গ্যাংনাম স্টাইল ভিডিওটির। এটি বিশ্বে যে পরিমান মানুষ পছন্দ করেছে, তার তুলনায় অপছন্দের এই সংখ্যাটা আসলে খুবই সামান্য।

 

৪. কোরটেনডো ও বোটাও ডু ইউটিউব

ভিডিওটি দেখা হয়েছে : ২ কোটি ২৬ লাখ ৬৪ হাজারের বেশি সংখ্যকবার।

লাইকের সংখ্যা : ৬ লাখ ৯০ হাজারের বেশি।

ডিজলাইকের সংখ্যা : ২২ লাখ ৭৯ হাজারের বেশি।

ইউটিউবে থেকে যারা টাকা আয় করেন তাদের বলা হয় ইউটিউবার। এমনই একজন ইউটিউবার হচ্ছেন, ব্রাজিলের আরুয়ান ফেলিক্স। তার ইউটিউব চ্যানেল ১ লাখ সাবস্ক্রাইবার অর্জন করায় তিনি ইউটিউব কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে রুপার প্লেক অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছিলেন। ইউটিউবে যাদের চ্যানেল ১ লাখ সাবস্ক্রাইবার পায়, তাদেরকে ইউটিউব কর্তৃপক্ষ এই বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ অ্যাওয়ার্ড দিয়ে  থাকে।

আওয়ান ফেলিক্সের লক্ষ্য তার চ্যানেলকে ১ লাখ সাবস্ক্রাইবারকে দ্রুত থেক্রে ১ মিলিয়ন সাবস্ক্রাইবারে উন্নীত করা। তাই তিনি এমন এক ভিন্ন উপায় অবলম্বন করেন, যা সবাইকে হতবাক করে দেয়। ইউটিউব কর্তৃপক্ষের দেয়া অ্যাওয়ার্ড করাত দিয়ে কেটে নষ্ট করে ফেলার ভিডিওটি আপলোড করে সে। ২০১৫ সালের ২২ ডিসেম্বর আপলোড করা তার এই ভিডিওটি (যার ইংরেজি হচ্ছে কাটিং দ্য ইউটিউব বাটন) প্রকাশের একদিন পরেই ভাইরাল হয়। এটা দেখাটা খুবই অদ্ভূত যে কেউ তার অ্যাওয়ার্ড ধ্বংস করছে, যা অর্জন করা খু্বই কঠিন, কিন্তু তার এই কৌশল কাজে লেগেছে বলতে হয়। বর্তমানে তার চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা ৪২ লাখের বেশি।

 

৩. ফ্রাইডে- রেবেকা ব্ল্যাক

ভিডিওটি দেখা হয়েছে : ১০ কোটি ৪৩ লাখ ৬৭ হাজারের বেশি সংখ্যকবার।

লাইকের সংখ্যা : ৬ লাখ ৫১ হাজারের বেশি।

ডিজলাইকের সংখ্যা : ২৪ লাখ ৯৬ হাজারের বেশি।

২০১১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত এই মিউজিক ভিডিওটি যুক্তরাষ্ট্রের ১৪ বছর বয়সী কিশোরী রেবেকা ব্ল্যাককে রাতারাতি তারকায় পরিণত করে। রেবেকার মা লস অ্যাঞ্জেলেসের আর্ক মিউজিক কোম্পানির হাতে চার হাজার মার্কিন ডলার তুলে দিয়েছিল মেয়ের গানের একটি মিউজিক ভিডিও তৈরি করে দেওয়ার জন্য। তারই ফসল ‘ফ্রাইডে’, যা ইউটিউবে মুক্তির মাত্র ১ সপ্তাহের মধ্যে ভিউ হয়েছিল ৩০ মিলিয়ন। তবে অনেকে গানটির অদ্ভূত লিরিক, কন্ঠে অত্যাধিক অটো টিউন ব্যবহার- এসব কারণে কঠোর সমালোচনাও করেছিল। এই ভিডিওটির জনপ্রিয়তা বলা যায় তরুণদের পথ দেখিয়েছে ইউটিউব তারকা হয়ে ওঠার।  

 

২. অফিসিয়াল কল অব ডিউটি : ইনফিনিট ওয়ারফেয়ার রিভেল ট্রেইলার

ভিডিওটি দেখা হয়েছে : ৩ কোটি ৭০ লাখ ২৬ হাজারের বেশি সংখ্যকবার।

লাইকের সংখ্যা : ৫ লাখ ৬৮ হাজারের বেশি।

ডিজলাইকের সংখ্যা : ৩৪ লাখ ৪৯ হাজারের বেশি।

গেমের দুনিয়াতে শুটিং গেম হিসেবে জনপ্রিয় হলো কল অব ডিউটি৷ এ সিরিজের সব গেমই গেমারদের প্রিয়৷ কল অফ ডিউটি-এর সর্বশেষ সংস্করণ ‘ইনফিনিট ওয়ারফেয়ার’। গত বছরের ২ মে ইউটিউবে প্রকাশিত ‘ইনফিনিট ওয়ারফেয়ার’ এর ট্রেইলার হতাশ করে গেমারদের।

 

১.  বেবি ফিচারিং লুডিক্রাস- জাস্টিন বিবার

ভিডিওটি দেখা হয়েছে : ১৫৪ কোটি ৪৭ লাখ ৫৮ হাজারের বেশি সংখ্যকবার।

লাইকের সংখ্যা : ৫৮ লাখ ১৫ হাজারের বেশি।

ডিজলাইকের সংখ্যা : ৭২ লাখ ৯৬ হাজারের বেশি।

ইউটিউবের সবচেয়ে বেশি অপছন্দের ভিডিওর তালিকায় শীর্ষে রয়েছে। এই ভিডিওটি অপছন্দের রাজা হওয়ার যুক্তিযুক্ত কারণও অবশ্য রয়েছে। প্রথমতো এটি বিবারের একটি পপ সংগীত, ছোট্ট বাচ্চা মেয়ের মতো শুনিয়েছে বিবারের কন্ঠ, গানের লিরিক ভালো না, আর লুডিক্রাস এটাকে আরো হিপটপ সংগীতে পরিণত করেছে।

 

তথ্যসূত্র: মেকইউজঅব

   

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/ফিরোজ