বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মহাকাশে আরো এক স্টেশন!

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ডেস্ক : পৃথিবীতে বসে মহাকাশ নিয়ে যে গবেষণাগুলো করা সম্ভব নয়, সেই গবেষণাগুলো করা হয়ে থাকে মহাকাশে অবস্থিত আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে বসে। এটি মহাকাশচারীদের জন্য একটি বাসযোগ্য কৃত্রিম উপগ্রহ। এখানে অবস্থান করে মহাকাশের অজানা বিষয়ের রহস্য ভেদ করার গবেষণা করে থাকেন মহাকাশচারীরা। ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩৫৪ কি.মি ওপরে অবস্থিত আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন পৃথিবীর কক্ষপথে ঘুরপাক করে। এটি প্রতিদিন ১৫.৭ বার পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে। এসব তথ্য আমাদের সকলেরই জানা। নতুন খবর হচ্ছে, মহাকাশে স্থাপিত হতে যাচ্ছে বসবাসযোগ্য আরো একটি স্টেশন। সঙ্গে বিস্ময়কর তথ্য হচ্ছে, নতুন মহাকাশ স্টেশনটি পৃথিবী নয়, বরঞ্চ চাঁদকে প্রদক্ষিণ করবে! রাশিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যৌথ উদ্যোগে তৈরি করছে ‘ডিপ স্পেস গেটওয়ে’ নামক নতুন এই স্টেশন, যা চাঁদের কক্ষপথে স্থাপন করা হবে। এটি মানুষকে সুযোগ দেবে পৃথিবীর বাইরে অতীতের তুলনায় আরো বেশি দূরে যাওয়ার। বাসযোগ্য এই স্থান চাঁদের চারপাশে কক্ষপথে ঘুরবে এবং মহাকাশে আরো গভীরে গবেষণা করার সুযোগ তৈরি হবে। পাশাপাশি চাঁদ থেকে পৃথিবীতে ফিরতি মিশন এবং মঙ্গল গ্রহে মিশন পরিচালনা করা যাবে।

 

চাঁদের কক্ষপথে স্টেশন স্থাপনের প্রথম মডিউল ২০২৪ সালে সম্পন্ন হতে পারে এবং মডিউলটির নির্মাণ শুরু হবে ২০২২ সালে। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের মতো নতুন এই স্টেশনটি বিশ্বব্যাপী মহাকাশচারীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। বুধবার, অ্যাডিলেডে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক মহাকাশচারী সম্মেলনে এক বক্তব্যে রাশিয়ার মহাকাশ সংস্থার প্রধান কর্মকর্তা রসকসমস ইগোর কোমারোভ বলেন, ‘আমরা একমত হয়েছি যে আমরা যৌথভাবে এই প্রকল্পে অংশগ্রহণ করবো এবং আন্তর্জাতিক চন্দ্র কক্ষপথ স্টেশন ডিপ স্পেস গেটওয়ে নির্মাণ করবো।’ স্পুটনিক নিউজকে তিনি বলেন, ‘প্রথম পর্যায়ে আমরা চাঁদের কক্ষপথে বসবাস করা যায় এমন একটি অংশ তৈরি করবো, যেটির ভবিষ্যত লক্ষ্য হবে চাঁদে পূর্ণ প্রযুক্তির বাস্তবায়ন। পরবর্তীতে আমরা মঙ্গলের কক্ষপথেও বাসযোগ্য স্টেশন নির্মাণ করবো।’ এই প্রকল্পে ভারত, চীন ছাড়াও বিআরআইসিএস দেশগুলোর (ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা) অন্য সদস্যরাও যোগ দিতে পারে। ২০১৬ সালে চাঁদের কক্ষপথে স্টেশন স্থাপনের পরিকল্পনা প্রথম প্রকাশ করা হয়েছিল, দীর্ঘ অপেক্ষা শেষে যেটির বাস্তবায়নের ঘোষণা এবার দেওয়া হলো। ২০২২ সালে নাসার স্পেস লঞ্চ সিস্টেম (এসএলএস) ব্যবহার করে ডিপ স্পেস গেটওয়ে লঞ্চ করা হতে পারে। গেটওয়েতে এমন একটি সিস্টেম ব্যবহার করা হবে যা বাণিজ্যিক মহাকাশ যানগুলোকে স্টেশনে অবস্থান করার করার সুবিধা দেবে। পাশাপাশি ডিপ স্পেস যানগুলো সেখান থেকে মানুষকে মঙ্গল গ্রহে যাওয়ার সুযোগ দেবে। এছাড়াও ডিপ স্পেস যানগুলো মহাকাশচারীদের সৌর সিস্টেমের কাছাকাছি যাওয়ার জন্য উপযোগী করে তৈরি করা হচ্ছে।

 

এই স্টেশন থেকে ভবিষ্যতে ক্রুরা মঙ্গল গ্রহের পৃষ্ঠে ল্যান্ডার অবতরণ করতে সক্ষম হতে পারে। চাঁদের কক্ষপথে থাকাকালীন অন্যান্য বৈজ্ঞানিক ও রোবটিক মিশন পরিচালনা করতে পারে। চাঁদের কাছাকাছি অবস্থান করার পরিকল্পনার নেতৃস্থানীয় মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা চলতি বছরের মার্চ মাসে এক বিবৃতিতে জানিয়েছিল, সেখানে মহাকাশচারীগণ মঙ্গলের পাশাপাশি অন্যান্য গভীর স্থানগুলোর গন্তব্যস্থলে চ্যালেঞ্জিং মিশনের জন্য প্রয়োজনীয় সিস্টেমগুলো পরীক্ষা করবে।’ নাসার সাম্প্রতিক বিবৃতিতে জানানো হয়, ‘চাঁদের কাছাকাছি অবস্থানের জায়গাটি এমন, যা সত্যিকার অর্থে গভীর স্থানের পরিবেশ। যেটিতে মানুষ পাঠানো ছাড়াও ধীরে ধীরে সৌর জগতের আরো গভীরে প্রবেশ করাটা সম্ভব হবে। চাদেঁর পৃষ্ঠে রোবটিক মিশন পরিচালনার সুযোগ দেবে এবং প্রয়োজনে মাস কিংবা সপ্তাহের পরিবর্তে ১ দিনে পৃথিবীতে ফেরত আসা সক্ষম হবে।’ সেখানে যাওয়ার বাহনগুলোর অভ্যন্তর খুবই সুরক্ষিতভাবে ডিজাইন করা হচ্ছে যেন ডিপ স্পেসের কঠোর পরিবেশে মহাকাশচারীরা সম্পূর্ণ নিরাপদ থাকতে পারে। গেটওয়েটি নিজস্ব একটি সোলার ইলেকট্রিক প্রপুলেশন (এসইপ) সিস্টেম দ্বারা চালিত হবে, নতুন এই প্রযুক্তি ডেভেলপ করছে নাসা। তথ্যসূত্র : ডেইলি মেইল পড়ুন : *   

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭/ফিরোজ