বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

অ্যামেচার রেডিও লীগের অচলাবস্থা কাটানোর উদ্যোগ

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ডেস্ক : অ্যামেচার রেডিও চর্চাকারীদের নিয়ে দেশের একমাত্র সংগঠন বাংলাদেশ অ্যামেচার রেডিও লীগ (বিএআরএল)। দীর্ঘদিন ধরে সংগঠনটিতে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। কার্যনির্বাহী কমিটির মেয়াদ পার হয়ে যাবার পরেও নির্বাচন আয়োজন না করা এবং ৩১ জন সদস্যকে অ্যাডহক কমিটি কর্তৃক সদস্যপদ বাতিলের সিদ্ধান্তে এই অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এই সংকট নিরসনে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন সাধারণ সদস্যরা। শুক্রবার বিকালে ঢাকার বীর উত্তম সির আর দত্ত রোডের বাংলাদেশ টেলিভিশন ক্যামেরা জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে অতিরিক্ত সাধারণ সভায় সাধারণ সদস্যরা এই দাবি জানান। এই সভায় বাংলাদেশ অ্যামেচার রেডিও লীগের সাধারণ সদস্যরা অভিযোগ করেন, বিএআরএল-এর সর্বশেষ কার্যনির্বাহীর কমিটির মেয়াদ ছিল ২০১৪-২০১৬ সাল পর্যন্ত। নানা কারণে এই কমিটি তাদের মেয়াদকালে দেশে অ্যামেচার রেডিও বা হ্যাম চর্চায় তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে যাবার পরও তারা প্রায় দেড় বছর ক্ষমতা ধরে রেখেছিলেন। সদস্যদের চাপে এক পর্যায়ে তারা নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের ক্ষমতা হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নেন। এজন্য অসাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় একটি বিতর্কিত অ্যাডহক কমিটির কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। এই কমিটিকে দায়িত্ব দেয়া হয় নির্বাচন আয়োজন করার। পরবর্তীতে অ্যাডহক কমিটি বিতর্কিত লোকদের নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিযুক্ত করেছেন। এছাড়াও অ্যাডহক কমিটি অন্যায়ভাবে ৩১ জন সদস্যের সদস্যপদ বাতিল করেছে। সভায় সদস্যরা দাবি করেন, অ্যাডহক কমিটি যে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে সেই নির্বাচন কমিটির মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। এজন্য অবিলম্বে বিএলআরএল-এর নির্বাহী কমিটির সদস্যরা জরুরি সভা ডেকে অ্যাডহক কমিটিকে বিলুপ্ত ঘোষণা করে সকল সদস্যদের সম্মতিক্রমে নতুন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ নিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজক করা হোক। সভায় বিএআরএলএর সাধারণ সদস্য অনুপ কুমার ভৌমিক বলেন, ‘বিএআরএল-এর সংবিধান অনুযায়ী অ্যাডহক কমিটি গঠন করার নিয়ম নেই। তারপরও এই কমিটি গঠন করে তাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল নির্বাচন আয়োজন করার। কিন্তু তারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে ৩১ জন সদস্যকে অন্যায়ভাবে তাদের সদস্য পদ বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে। এমনকি তারা বিতর্কিত লোকদের দিয়ে নির্বাচন আয়োজনের জন্য নির্বাচন কমিটি গঠন করেছে। অ্যাডহক কমিটির এই নিয়ম বর্হিভূত কার্যক্রমের বিরোধীতা করেছেন বিআরএল-এর সভাপতি সুমন আহমেদ সাবিরও। সেজন্য তিনি এই কমিটি ও সংগঠন থেকে নিজেকে বিরত রেখেছেন।’ সংগঠনটির ২০১৪-২০১৬ মেয়াদের কার্যকরী সদস্য সৈয়দ সামসুল আলম বলেন, ‘বিএআরএল-এর গত কমিটিতে আমি ছিলাম। এই কমিটির হয়ে দাপ্তরিক কাজ আমি করেছি। সংগঠনটি কার্যনির্বাহী কমিটি তিন বছরেরও বেশি ক্ষমতায় ছিল। এই তিন বছরে ৩৬টির বেশি সভা আয়োজন করার কথা থাকলেও কোরাম সংকটের কারণে তা হয়ে ওঠেনি। নানা কারণে গত কমিটি হ্যামদের উন্নয়নে কাজ করতে পারেনি। এই ব্যর্থতা নিয়ে তারা যে অ্যাডহক কমিটি গঠন করেছে সেই কমিটিও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। আমরা চাই এই অ্যাডহক কমিটি বিলুপ্ত করে নতুনভাবে নির্বাচনের আয়োজন করা হোক।’ সর্বশেষ কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক সোহরাব ইভান সভায় বলেন, ‘বাংলাদেশ অ্যামেচার রেডিও লীগের অচলাবস্থা কাটানোর জন্য সাধারণ সদস্যদের নিয়ে এ সভার আয়োজন করা হয়েছে। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে যে, আমাদের অভিযোগগুলো লিখিত আকারে অ্যাডহক কমিটির প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে জমা দেবো। আশা করি তিনি আমাদের অভিযোগগুলো আমলে নিয়ে যে ৩১ জন সদস্যের সদস্য বহাল রেখে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ দেবেন। অন্যথায় সাধারণ সদস্যরা সংবিধান অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।’ সভায় আরো বক্তব্য রাখেন-সাধারণ সদস্য উজ্জ্বল, শহিদুল্লাহ কায়সার, লিমন প্রমুখ। এতে সংগঠনটির সাধারণ সদস্য ছাড়াও কল সাইন প্রাপ্ত নতুন পুরাতন হ্যাম এবং গণমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ অ্যামেচার রেডিও লীগ বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এবং ইন্টারন্যাশনাল অ্যামেচার রেডিও ইউনিয়ন (আইএআরইউ) এর স্বীকৃত একটি স্বেচ্ছাসেবী ও অলাভজনক সংগঠনক। এর মূল উদ্দেশ্যই হলো দেশে অ্যামেচার রেডিও চর্চা অব্যাহত রাখা। রাইজিংবিডি/ঢাকা/৫ মে ২০১৮/ফিরোজ