বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আলোক বর্ষ কতটা লম্বা?

লাইট ইয়ার বা আলোক বর্ষ জোতির্বিজ্ঞানের একক। মহাকাশে বিশাল দূরত্ব পরিমাপের জন্য এই একক ব্যবহার করা হয়। মহাকাশে সবকিছুরই দূরত্ব অনেক বেশি, তাই সেখানে কিলোমিটার-মাইলে হিসাব করা সহজ ব্যাপার নয়। সে জন্যই মহাকাশে দূরত্ব পরিমাপে প্রচলিত এককের চেয়েও অনেক বড় এই দৈর্ঘ্যের একক ব্যবহার করা হয়।

শুন্যস্থানে আলো অর্থাৎ কোনো বাধা না পেয়ে আলো এক বছরে যতটুকু দূরত্ব অতিক্রম করে তাকে এক আলোক বর্ষ দূরত্ব বলে। উল্লেখ্য, আলোর গতি প্রতি সেকেন্ডে ২,৯৯,৭৯২ মাইল। এক আলোক বর্ষ ৫.৯ ট্রিলিয়ন মাইলের সমান।

মহাকাশের হিসাব-নিকাশের জন্য শুধু আলোক বর্ষ ব্যবহার করা হয় না। আরো বড় এককও ব্যবহার করা হয়। কেননা গ্যালাক্সির বিভিন্ন অংশের দূরত্ব নির্ণয় করতে গেলে এই আলোক বর্ষ বা লাইট ইয়ার দিয়েও ঠিক হিসাব করা যায় না। তখন ব্যবহার করা হয় কিলো আলোক বর্ষ (১,০০০ আলোক বর্ষ)। আবার পাশাপাশি গ্যালাক্সির হিসাব করতে গেলে কিংবা গুচ্ছ গ্যালাক্সির হিসাব করতে গেলে এই কিলো আলোক বর্ষও ছোট হয়ে যায়। তখন ব্যবহার করা হয় মেগা আলোক বর্ষ (১,০০০,০০০ আলোক বর্ষ)। আবার সুপারগ্যালাক্টিক বিষয়াষয়ের দূরত্ব মাপার সময় মেগা আলোক বর্ষও হার মেনে যায়। তখন ব্যবহার করা হয় গিগা আলোক বর্ষ (১,০০০,০০০,০০০ আলোক বর্ষ)।

বিজ্ঞানীরা আন্তঃছায়াপথীয় বিশাল দূরত্ব ছোট অংকের মাধ্যমে প্রকাশ করার জন্য আলোক বর্ষের ব্যবহার করে থাকেন। উদাহরণস্বরুপ পৃথিবী থেকে এন্ড্রোমেডা ছায়াপথটি প্রায় ২.৫ মিলিয়ন আলোক বর্ষ দূরে। বিজ্ঞানীরা আলোর বিকিরণের মাধ্যমে নক্ষত্রের বয়সও নিরুপন করে থাকেন। অর্থাৎ তাদের আলো পৃথিবীতে পৌঁছাতে কত সময় নেয় সেটাও মুখ্য বিষয়। উদাহরণস্বরুপ সূর্যের আলো পৃথিবীতে পৌঁছাতে আট মিনিট সময় নেয়। অর্থাৎ সূর্যোদয়ের আট মিনিট পরে আমরা সূর্যকে দেখতে পাই। সেইভাবে মিল্কিওয়ের নক্ষত্রগুলো পৃথিবীর কাছে ১০০০,০০০ আলোক বর্ষ পরে দৃশ্যমান হয় নির্দিষ্ট সময় পরে এবং মজার ব্যাপার হলো পৃথিবীর বয়সে তা মাত্র ২০ বার ঘটেছে।

ইতিহাস

প্রাচীন গ্রীক সময় থেকেই বিজ্ঞানীদের ভেতর আলোক গতি নিয়ে বিতর্ক চলে আসছে। ডেনমার্কের বিজ্ঞানী ক্রিস্টেন্সেন রোমার বলেন, আলোর গতি একটি ধ্রুব রাশি। জার্মান জোতির্বিজ্ঞানী ফ্রেডরিখ উইলহেম সর্বপ্রথম আলোক বর্ষের সঠিক পরিমাপের ধারণা দেন এবং প্যরালাক্স ব্যবহার করে পৃথিবী ও একটি নক্ষত্রের দূরত্ব পরিমাপে সমর্থ হন। তিনি দেখান যে এ দূরত্ব ৬৬০,০০০ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল একক যেটা ৬.১×২০১৩ মাইলের সমান। এবং একইসঙ্গে বলা যায় যেটা ১০.৩ আলোক বর্ষের সমান। ১৯ শতকের দিকে বিজ্ঞানীরা আলোক বর্ষের ব্যবহার শুরু করেন। কিন্তু জোতির্বিদরা সাধারণত ৩.২৬ আলোক বর্ষকে একক হিসেবে ধরে থাকেন। এছাড়া মুদ্রণশিল্পে মহাজাগতিক দূরত্ব নির্ণয়ে আলোক বর্ষের ব্যবহার রয়েছে।

মহাবিশ্বের সবকিছুর দূরত্ব পরিমাপ সম্ভব তার থেকে বিকিরিত আলোক রশ্মি থেকে। অর্থাৎ আলোক রশ্মিটা পৃথিবীতে পৌঁছাতে কত সময় নেয়। আলোর গতি যদি সঠিকভাবে জানা থাকে তাহলে এই বিশাল দূরত্ব পরিমাপ সহজ হয়ে যায়। যেমন পৃথিবী থেকে প্রক্সিমা সেঞ্চুরি ৪.২৪ আলোক বর্ষ, সুপারনোভা ৪০০০ আলোক বর্ষ এবং অ্যান্ড্রোমেডা ২.৩ মিলিয়ন আলোক বর্ষ দূরে রয়েছে।

তথ্যসূত্র: ওয়ার্ল্ড অ্যাটলাস