বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আপনার চেহারাই হবে আপনার পাসপোর্ট

নিয়ন রহমান : ‘আইফোন এক্স’ এর ফেসিয়াল রিকগনেশনের সুবিধা সম্বন্ধে ইতোমধ্যে আমরা অনেকেই অবগত আছি। তবে অচিরেই বিমানবন্দরগুলোতেও এই সুবিধা দেওয়া শুরু হবে। এতে করে যাত্রীদের সময় তো বাঁচবেই, পাশাপাশি বিমানবন্দরগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থাও আরো দৃঢ় হবে। বিশ্বের এক কোণে অবস্থিত অস্ট্রেলিয়ায় যাতায়ত করতে হলে একটা দীর্ঘসময় প্লেনে কাটাতে হয়। ধরুন আপনি লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে সিডনিতে যাবেন, আপনাকে আকাশ পথে থাকতে হবে টানা ১৩ ঘণ্টা। আর যদি নিউ ইয়র্ক থেকে যাত্রা শুরু করেন তাহলে বাড়তি আরো ৫ ঘণ্টা কাটাতে হবে বিমানেই। লন্ডন থেকে অস্ট্রেলিয়া যেতে চাইলে আপনাকে বিমানেই কাটাতে হবে সম্পূর্ণ একটা দিন। এই দীর্ঘ বিমানযাত্রায় অধিকাংশ যাত্রীই ক্লান্ত হয়ে পড়েন এবং অনেকে অসুস্থবোধও করেন। তাই বিমান থেকে নামার পর যাত্রীরা যত দ্রুত সম্ভব বিমানবন্দর ত্যাগ করে অস্ট্রেলিয়ার সমুদ্র সৈকতঘেষা বুক করা হোটেলে উঠে ফ্রেশ হওয়ার চিন্তা করতে থাকেন। কিন্তু বিমানবন্দরে নামার পর পাসপোর্ট চেকিং, ক্লিয়ারেন্স ইত্যাদি ইত্যাদির জন্য আরো ঘন্টাখানেক সময় যাত্রীদের বিমানবন্দরে আটকে থাকতে হয়। এই দিকটি বিবেচনা করে অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ‘স্মার্ট বর্ডার কন্ট্রোল টেকনোলজি’ নিয়ে কাজ শুরু করে। ২০০৭ সালে তারা ‘স্মার্টগেটস’ নামক এক প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করে যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে পাসপোর্ট রিড করতে পারে এবং চেহারার স্ক্যান করে পাসপোর্টধারীর তথ্যগুলো যাচাই করে দেখতে পারে। প্রথমাবস্থায় অস্ট্রেলিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ৮টি বিমানবন্দরে এই সুবিধা চালু করা হয়। শুরু থেকেই দ্রুততম সময়ে এই সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছিল অস্ট্রেলিয়া। ফলশ্রুতিতে দেশটি ২০১৭ সালের মে এবং জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে ক্যানবেরা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিশ্বের প্রথম ‘কন্টাক্টলেস’ ইমিগ্রেশন টেকনোলজির সফল পরীক্ষা চালায়। এই প্রক্রিয়ায় যাত্রীর পাসপোর্টের বদলে একটি স্বয়ংক্রিয় ক্যামেরা যাত্রীর চেহারা স্ক্যান করে তার পরিচয় নিশ্চিত করে। একবার এই সিস্টেমে পাসপোর্টটি স্ক্যান করা হয়ে গেলে পরবর্তীতে আর স্ক্যান করার দরকার পড়ে না। প্রথমবার স্ক্যানের সময় পাসপোর্টধারীর সমস্ত তথ্য এবং ছবি সিস্টেমে সেভ হয়ে যায়। পরের বার থেকে ‘কন্টাক্টলেস ইমিগ্রেশন’ সিস্টেম বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে যাত্রীর চেহারা স্ক্যান করে পাসপোর্টের তথ্যের সঙ্গে যাচাই করে নেয়। পাসপোর্টবিহীন ইমিগ্রেশন পদ্ধতি সারা বিশ্বে খুব দ্রুত চালু হয়ে যাবে বলে আশাব্যক্ত করেছেন প্রযুক্তিবিদরা। এই প্রযুক্তি চালু হলে মানুষকে পাসপোর্ট হারিয়ে যাওয়া নিয়ে আর ভাবতে হবে না। তবে কাগুজে পাসপোর্টে রঙিন সিলগুলোকে অনেকেই মিস করবে।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৯ জুলাই ২০১৮/ফিরোজ