বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

অস্ত্র ও বোমা শনাক্তে ওয়াই-ফাই

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ডেস্ক : ওয়াই-ফাই প্রযুক্তি দারুন। আপনি হয়তো স্মার্টফোন, কম্পিউটার বা অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইসে ইন্টারনেট ব্যবহারে নিয়মিত ওয়াই-ফাই ব্যবহার করেন। কিন্তু খুব শিগগির এই একই প্রযুক্তি জনবহুল স্থানে আপনার জীবনও রক্ষা করবে। কানাডার নিউ ব্রান্সউইক প্রদেশের রুটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের একটি গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, ব্যাগের মধ্যে থাকা বোমা, অস্ত্র বা রাসায়নিক বিস্ফোরক শনাক্তে ওয়াই-ফাই প্রযুক্তি কার্যকরী এবং ব্যয় সাশ্রয়ী। কমিউনিকেশন এবং নেটওয়ার্ক সিকিউরিটি বিষয়ে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত আইইই কনফারেন্সে এই গবেষণাপত্রটি সেরা গবেষণার পুরস্কার জিতেছে। যদিও এ সম্মেলনে মূলত সাইবার সিকিউরিটি বিষয়ক। গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, সবচেয়ে বিপজ্জনক বস্তু ধাতু অথবা তরল উপাদানের হয়ে থাকে। এই উপাদানগুলো ওয়াই-ফাই সিগন্যালে একটি উপায়ে ইন্টারফেয়ার করে, যা গবেষকরা শনাক্ত করতে পেরেছেন। কোনো ব্যক্তির ব্যাগে বহন করা বোমা, অস্ত্র বা বিস্ফোরক ডিভাইস সাধারণত এ ধরনের উপাদানে তৈরি হয়ে থাকে এবং প্রায়ই কাগজ বা ফাইবার দিয়ে মোড়ানো থাকে, ওয়াই-ফাই সিগন্যাল খুব সহজেই এর মধ্যে দিয়ে যেতে পারে। গবেষণার জন্য তারা একটি ‘ওয়াই-ফাই ওয়েপন ডিটেকশন সিস্টেম’ তৈরি করেছিলেন এটা দেখার জন্য যে, কাছাকাছি থাকা কোনো সামগ্রী বা উপাদান অতিক্রম করার সময় ওয়াই-ফাই সিগন্যালে কি ঘটে। ১৫ ধরনের সামগ্রী এবং ৬ ধরনের ব্যাগের ওপর গবেষকরা তাদের সিস্টেম পরীক্ষার পর দেখতে পেয়েছেন যে, এটি নিরাপদ এবং বিপজ্জনক বস্তুগুলোর মধ্যে পার্থক্য ৯৯ শতাংশ সময় করতে পারে। এটি বিপজ্জনক পদার্থ শনাক্ত ৯০ শতাংশ করেছে, সঠিকভাবে ধাতু শনাক্ত করেছে ৯৮ শতাংশ সময় এবং তরল পর্দাথ শনাক্ত করেছে ৯৫ শতাংশ সময়। স্ট্যান্ডার্ড ব্যাগপ্যাকে রাখা বস্তু ৯৫ শতাংশ সঠিকতার সঙ্গে শনাক্ত করতে পারে এই সিস্টেম। ব্যাগে রাখার আগে বস্তুকে কিছু দিয়ে আবৃত করা হলে, শনাক্তের হার ৯০ শতাংশে নেমে আসে। বর্তমানে বেশিরভাগ বিমানবন্দরে সন্দেহজনক আইটেমগুলো চেক করার জন্য এক্সরে বা সিটি স্ক্যানিং প্রযুক্তি ব্যবহার হয়। বিমানবন্দরের এই যন্ত্রগুলো কোনো পাবলিক প্লেসে স্থাপন করা বেশ কঠিন এবং ব্যয়বহুল। উদাহারণস্বরুপ কোনো কনসার্ট কিংবা উৎসবের স্থানের কথা বলা যেতে পারে। এ ধরনের পাবলিক ভেন্যুতে জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যাগ তল্লাশিতে বিমানবন্দরে ব্যবহৃত ব্যাগ চেকিং যন্ত্র স্থাপন করাটা সহজ ব্যাপার নয়। তাই পাবলিক ভেন্যুতে নিরাপত্তা বাহিনী ম্যানুয়ালি ব্যাগ চেক করে থাকে, যদিও ম্যানুয়ালি ব্যাগ চেক করাটা সবসময় ফলপ্রসূ নয়। গবেষণাপত্রটির সহ-লেখক ইয়িঙ্গ ইয়িঙ্গ (জেনিফার) চ্যান বলেন, ‘বড় কোনো পাবলিক প্লেসে বিমানবন্দরে ব্যবহৃত স্ক্রিনিং যন্ত্রপাতি স্থাপন করা বেশ ব্যয়বহুল। ফলে সেসব স্থানে ব্যাগ চেক করার জন্য সবসময় লোকবলের প্রয়োজন হয়। লোকবল কমাতে আমরা একটি পরিপূরক পদ্ধতি তৈরি করতে চেয়েছি।’ গবেষকদলটি বর্তমানে তাদের ওয়াই-ফাই ওয়েপন ডিটেকশন সিস্টেমটির সঠিকতা আরো বাড়ানোর লক্ষ্যে কাজ করছেন। যাতে এটি একটি বস্তুর আকৃতি আরো ভালোভাবে শনাক্ত করতে পারে এবং ব্যাগে বহন করা তরলের পরিমান অনুমান করতে পারে। এর মাধ্যমে ভবিষ্যতে এটি কোনো খেলাধুলার ইভেন্ট, উৎসব বা সন্ত্রাসী হামলার অন্যান্য সম্ভাব্য লক্ষ্যস্থানগুলোতে একটি আদর্শ নিরাপত্তা ব্যবস্থা হয়ে উঠবে। তথ্যসূত্র : ফিউচারিজম রাইজিংবিডি/ঢাকা/২১ আগস্ট ২০১৮/ফিরোজ