বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশ অনুকরণীয় : শিল্পমন্ত্রী

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক : শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেছেন, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রার এক অনুকরণীয় মডেল। মঙ্গলবার রাজধানীর বিসিক মিলনায়তনে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে শিল্প মন্ত্রণালয় আয়োজিত তিন দিনব্যাপী বিজয় মেলা-২০১৮ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। শিল্পমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রাজ্ঞ নেতৃত্বে বাংলাদেশ সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনের পর এসডিজি (টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) অর্জনের পথে দ্রুত সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে এগিয়ে চলেছে। এ অর্জনের পেছনে সমৃদ্ধ শিল্প খাত ইতিবাচক অবদান রাখছে। গত ১০ বছরে বাংলাদেশের শিল্প, সেবা ও কৃষিসহ সকল খাতে উৎপাদনশীলতা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। ইতোমধ্যে জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান ৩৩ দশমিক ৭১ শতাংশে উন্নীত হয়েছে, যা ২০০৭-১৮ অর্থবছরে ছিল ১৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ। শিল্প মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. আবদুল হালিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য বলেন বিসিক চেয়ারম্যান মুস্তাক হাসান মোহাম্মদ ইফতেখার। আমির হোসেন আমু বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ায় বাঙালিরা এখন শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও ব্যবসা-বাণিজ্যের মালিক হয়েছেন। বাংলাদেশ স্বাধীনের আগে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালি শিল্পপতি বলতে তেমন কেউ ছিল না। তখন এ ভূখণ্ডে যেসব কলকারখানা ছিল, তার প্রায় সবই ছিল পশ্চিম পাকিস্তানিদের মালিকানায়। এমনকি শিল্প কারখানার ব্যবস্থাপনাতেও বাঙালিদের কোনো অবস্থান ছিল না। ১৯৫৭ সালে বঙ্গবন্ধু ইপ্সিক তথা বর্তমান বিসিক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাঙালি শিল্প উদ্যোক্তা তৈরির পথ সুগম করেছেন। শিল্পমন্ত্রী আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুর একটি নির্দেশনায় গোটা নিরস্ত্র বাঙালি জাতি সশস্ত্র যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। বঙ্গবন্ধুর অসীম সাহস ও নেতৃত্বের দৃঢ়তার ফলে দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। স্বাধীনতা অর্জনের পর অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু যখন দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচিকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন, তখনই বাংলাদেশকে নব্য পাকিস্তান বানানোর অসৎ উদ্দেশে তাকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। আমির হোসেন আমু বলেন, আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে অনেক এগিয়ে গেছে। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল ৫৪৩ মার্কিন ডলার। এটি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৭৫১ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। একই সময় দারিদ্র্যের হার ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে ২১ দশমিক ৮ শতাংশ। প্রবৃদ্ধির হার ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ, রপ্তানির পরিমাণ ১০ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ৩৬ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বেড়ে ৩৩ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, জিডিপির আকার ৪ লাখ ৮২ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা থেকে বেড়ে প্রায় ২০ লাখ কোটি টাকা, বৈদেশিক বিনিয়োগ ০.৭৪৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বেড়ে প্রায় ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি বাজেটের আকার ৬১ হাজার ৫৭ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা, এডিপির আকার ১৯ হাজার কোটি টাকা থেকে বেড়ে ১ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ ৩৭৩ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ৬৪ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা, দানাদার শস্য উৎপাদন ১ কোটি ৮০ লাখ মেট্রিক টন থেকে বেড়ে ৪.২ কোটি মেট্রিক টন, বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৪ হাজার ৯০০ মেগাওয়াট থেকে বেড়ে ২০ হাজার মেগাওয়াট এবং মুদ্রাস্ফীতি ৭.১৬ শতাংশ থেকে কমে ৫.১ শতাংশ হয়েছে। উল্লেখ্য, তিন দিনব্যাপী এ বিজয় মেলা আগামী ১৩ ডিসেম্বর শেষ হবে। এতে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিজ নিজ পণ্য, প্রযু্ক্তি ও সেবা প্রদর্শন করছে। মেলা প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। রাইজিংবিডি/ঢাকা/১১ ডিসেম্বর ২০১৮/নাসির/রফিক