বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

স্টার্টআপদের নিয়ে ‘ফুড ফর ন্যাশন’ প্ল্যাটফর্ম

সারাবিশ্বে যখন প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে ঠিক সে সময় থেকেই দেশের তথ্য ও প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে ‘ফুড ফর ন্যাশন’ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম গঠন করে সরকার। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের আওতায় বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের অধীনে ‘উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন একাডেমী প্রতিষ্ঠাকরণ প্রকল্পের (আইডিয়া) এই প্ল্যাটফর্মে সংযুক্ত হয় বেশ কয়েকটি তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান। দেশের কৃষকের কাছ থেকে ন্যায্যমূল্যে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে কৃষি পণ্য সংগ্রহ ও সরবরাহ করার উদ্যোগ নেয় এই প্ল্যাটফর্মটি। এই কার্যক্রমের প্রথম থেকেই চালডাল, ট্রাক লাগবে, ডিজিটাল আড়ৎদারসহ অনেক প্রতিষ্ঠান কাজ করে যাচ্ছে।

চলমান কার্যক্রমের অংশ হিসেবে স্টার্টআপ বাংলাদেশের নতুন উদ্যোগ ‘ডিজিটাল আড়ৎদার’ কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শনিবার মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলাধীন সাপের চান গ্রামের কৃষকদের মাঠ থেকে সরাসরি কৃষি পণ্য সমূহ (যেমন: কাচা মরিচ ঢেড়শ, শশা, ঝিংগা, চাল কুমড়া, করলা ইত্যাদি) ঢাকার কাওরান বাজার মূল্যে ক্রয় করে দেশের অনলাইন মার্কেটিং শপ চালডাল, সুপারশপ মিনাবাজারে সরবরাহ করে। এর ফলে কৃষকগণ ফসলের জমিতেই ঢাকার মূল্য পাচ্ছে ও এতে তাদের শ্রম ঘন্টা সাশ্রয় হচ্ছে, পরিবহন খরচও লাগছে না এবং একই সাথে মধ্যসত্ত্ব ভোগীর দৌড়াত্ব না থাকায় কৃষকরাও অত্যন্ত খুশি। ‘ডিজিটাল আড়ৎদার’ এর কার্যক্রমে সরকারের ডাক বিভাগ তাদের পরিবহন বিনা মূল্যে প্রদান করেন। এর ফলে কৃষকের ফসল জমি থেকে সরাসরি ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেওয়া যাবে আরো সহজে।

এর পাশাপাশি লকডাউনে বিনা মাশুলে রাজধানীতে কৃষিপণ্য পৌঁছে দিতে ‘কৃষক বন্ধু ডাক সেবা’ উদ্বোধন করেছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। ঢাকায় বেইলী রোডে তাঁর সরকারি বাসভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে শনিবার মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার ঝিটকা বাজার থেকে কৃষকবন্ধু ডাক সেবার উদ্বোধন করেন। এ করোনাকালীন সময়ে ডাক বিভাগ তাদের এই পরিবহন সেবাটি অব্যাহত রেখে সহযোগিতা করবেন বলে তিনি জানান এবং একই সাথে এই প্রকার উদ্যোগ নেওয়ায় তিনি শুভকামনা জানান।

মন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাদের কৃষি উৎপাদনকে সচল ও সজিব রাখতে এবং কৃষি উৎপাদনের মধ্য দিয়ে দেশে যাতে খাদ্য সংকট না হয় সেজন্য কৃষিখাতের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। ডাক বিভাগের পক্ষ থেকে আমরা এই অভিপ্রায় বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখতে চাই। আমরা উপলব্ধি করছি যে, লকডাউনে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় কৃষকের উৎপাদিত কৃষিপণ্য নিয়ে কৃষক সবচেয়ে বেশি বিপন্ন অবস্থায় আছে। কৃষক পণ্য উৎপাদন করছে কিন্তু এই পণ্য বাজারজাত করতে পারছেন না। শাকসবজি পচনশীল পণ্য দীর্ঘ দিন ধরেও রাখা যায় না। প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদের বিদ্যমান সংকটে বিনা মাশুলে রাজধানী ঢাকায় পণ্য পৌঁছে দিয়ে তাদের পাশে থাকার আমরা চেষ্টা করছি।’

অনুষ্ঠানে ঢাকা থেকে অনলাইনে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো. নূর-উর-রহমান এবং ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সুধাংশু শেখর ভদ্র এই সময় ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে সংযুক্ত ছিলেন।

‘ডিজিটাল আড়ৎদার’ এর এই কার্যক্রমে মাঠ পর্যায়ে উপস্থিত ছিলেন ফাউন্ডার নূরূন নাহার, কো ফাউন্ডার কামরুল আহসান। আরো উপস্থিত ছিলেন ডাক অধিদপ্তরের পরিচালক (ডাক) এস এম হারুনুর রশীদ, ডেপুটি পোস্ট মাস্টার জেনারেল (পোস্টাল ডিভিশন ডাক, ঢাকা) মো. মাসুদ পারভেজ, ডেপুটি পোস্ট মাস্টার জেনারেল (সিনিয়র পোস্ট মাস্টার, ঢাকা জিপিও) খন্দকার শাহীনুর সাব্বির, হরিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জহিরুল হক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবিনা ইয়াসমিন, ডাক অধিদপ্তরের সহকারি পোস্ট মাস্টার জেনারেল শাখা কর্মকর্তা (পরিকল্পনা) শংকর কুমার চক্রবর্তী, নগদের হেড অব মার্কেট ডেভেলপমেন্ট মো. সোলায়মান সুখন সহ আরো অনেকে।

আইডিয়া প্রকল্পের আওতাধীন বিভিন্ন স্টার্টআপদের সেবা সমূহ সমন্বয় করে দেশের এই কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুতি গ্রহণে বিশেষ কৌশল গ্রহণ করছে ‘স্টার্টআপ বাংলাদেশ’ এর ব্যানারে আইডিয়া প্রকল্প।

স্টার্টআপদের নিয়ে গঠিত এই নতুন প্ল্যাটফর্মটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছেন আইডিয়া প্রকল্পের পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) সৈয়দ মজিবুল হক।

 

ঢাকা/ফিরোজ