বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বিজ্ঞানীদের ভুলে আবিষ্কৃত হাইব্রিড মাছ 

হাঙ্গেরিয়ান একদল বিজ্ঞানী ভুল করে রাশিয়ান স্টারজোন এবং আমেরিকান প্যাডলফিশ মাছের মতো দেখতে দীর্ঘ নাকওয়ালা এবং চিকন পাখনাযুক্ত এক নতুন হাইব্রিড উদ্ভাবন করেছেন। 

বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি জিনস জার্নালে প্রকাশ করেন যে, তারা দুর্ঘটনাক্রমে দুটি বিপন্ন প্রজাতির মাছের একটি সংকর তৈরি করেছেন। অর্থাৎ স্টারজোন এবং প্যাডলফিশ- উভয় মাছের বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান রয়েছে নতুন সংকর মাছে।  এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘স্টর্ডডলফিশ’। ইতোমধ্যে ১০০টির মতো হাইব্রিডের জন্ম দিয়েছেন তারা। কিন্তু নতুন করে আর একটিও হাইব্রিডের জন্ম দেওয়ার ইচ্ছা নেই বিজ্ঞানীদের। 

এই প্রজেক্টের প্রধান হাঙ্গেরির রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর ফিশারি ও অ্যাকুয়া কালচারের সিনিয়র গবেষণা ফেলো মোজসার দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেন, ‘আমরা মোটেও এমন অদ্ভুত হাইব্রিডাইজেশনের উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ শুরু করিনি। এটি একেবারে অজান্তেই ছিল। নেহায়েত দুর্ঘটনাও বলা যেতে পারে।’ 

রাশিয়ান স্টারজোন যার বৈজ্ঞানিক নাম এসিপেন্সার গ্যালেন্ডেনস্টেডিটি, একদম বিপন্ন একটি প্রজাতি। কিন্তু বিশ্বে ক্যাভিয়ারের সবচেয়ে বড় উৎস হওয়ার কারণে এই মাছটি অর্থনৈতিকভাবে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। লম্বায় প্রায় ৭ ফিট বা ২.১ মিটার পর্যন্ত হয় এই মাছগুলো। এরা মোলাস্কস এবং ক্রাস্টেসিয়ান গোত্রের প্রাণীদের খেয়েই বেঁচে থাকে। 

অন্যদিকে মিসিসিপি এবং আশপাশের এলাকার পানি নিষ্কাশ ব্যবস্থার অন্তর্গত যে খালগুলো মিসিসিপি নদীতে মিশেছে সেগুলোতে একসময় অবাধে বিচরণ করতো আমেরিকান প্যাডলফিশ। মিসিসিপির উপনদীগুলোতেও এদের দেখা মিলত। লম্বায় প্রায় সাড়ে ৮ ফিট বা আড়াই মিটার পর্যন্ত হয় এই মাছগুলো। স্টারজোনের মতোই খুব ধীরগতিতে বৃদ্ধি এবং বিকাশের কারণে তাদেরকেও ওভার ফিশিংয়ের শিকার হতে হয়েছিল। মিশিগান ইউনিভার্সিটি অব জুলজির মিউজিয়ামের তথ্যানুসারে, মিসিসিপির নদীর সঙ্গে যুক্ত সেসব খাল এমনকি উপনদীগুলোতেও এখন আর প্যাডলফিশদের পাওয়া যায় না। 

মোজসার এবং তার সহকর্মীরা কখনও কল্পনা করতে পারেননি এমন কিছু একটা ঘটবে। তারা আসলে রাশিয়ান স্টারজোনের হাইব্রিড উদ্ভাবনের জন্য পরীক্ষা চালাচ্ছিলেন। জিনোজেনেসিস নামক এক প্রকার এসেক্সুয়াল রি-প্রোডাকশনের সাহায্যে চলছিল তাদের পরীক্ষা। জিনোজেনেসিস হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে বিশেষভাবে নিষিক্ত একটি শুক্রাণু ডিম্বাণুর বিকাশের সূত্রপাত করে। কিন্তু এই শুক্রাণু ডিম্বাণুর নিউক্লিয়াসে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়। এর মানে হলো, প্রাপ্ত ফলাফলের সঙ্গে নিষিক্ত শুক্রাণুর ডিএনএ’র কোনো সম্পর্ক নেই। এটি সম্পূর্ণভাবেই মাতৃ ডিএনএ থেকে বিকাশ লাভ করেছে। বিজ্ঞানীরা এই প্রক্রিয়াটির জন্য আমেরিকান প্যাডলফিশের শুক্রাণু ব্যবহার করেছিলেন। আর এরপরই অপ্রত্যাশিত এই ঘটনাটি ঘটে। 

দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের ভাষ্যমতে, এখন পর্যন্ত ১০০টির মতো স্টর্ডডলফিশ বেঁচে আছে। এই হাইব্রিডগুলোর মধ্যে কিছু আছে যারা স্টারজোন এবং প্যাডলফিশের ৫০/৫০ মিশ্রণ। আরও কিছু আছে যেগুলো দেখতে প্রায় অনেকটা স্টারজোনের মতোই। তবে সবগুলো হাইব্রিডই মাংসাশী।

বেশিরভাগ হাইব্রিড প্রজাতি যেমন- সিংহ আর বাঘের মিশ্রণে উদ্ভাবিত লাইগার এবং ঘোড়া আর গাধার মিশ্রণে উদ্ভাবিত খচ্চর, এরা নিজেদের বংশবৃদ্ধি করতে অক্ষম। ধারণা করা হচ্ছে, স্টর্ডডলফিশও এর ব্যতিক্রম হবে না। 

বিজ্ঞানীরা উদ্ভাবিত হাইব্রিডগুলোর বিশেষ যত্ন নিচ্ছেন। তবে পরবর্তীতে আর একটাও হাইব্রিড স্টর্ডডলফিশ জন্ম দেওয়ার আগ্রহ নেই তাদের। কারণ এই সংকরটি নদ-নদীতে ছড়িয়ে পড়লে বাস্তুসংস্থানের বিপর্যয় ঘটার সম্ভাবনা আছে।

   

ঢাকা/ফিরোজ