বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শিশুদের ইমিউন সিস্টেম বদলে দিচ্ছে করোনো সম্পর্কিত নতুন রোগ

নতুন একটি রোগ শনাক্ত হয়েছে, যা শিশুদের মধ্যে দেখা যায়। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের সঙ্গে সম্পর্কিত নতুন রোগটি শিশুদের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতায় ব্যাপক পরিবর্তন ঘটায়।

গবেষকরা দেখতে পেয়েছেন, অ্যাকিউট পেডিয়াট্রিক ইনফ্ল্যামেটরি মাল্টিসিস্টেম সিন্ড্রোম (পিআইএমএস-টিএস) সহ কম বয়সী যেসব  রোগীরা অস্থায়ীভাবে সার্স-কোভ-২ ভাইরাসে সংক্রামিত হয়েছে, তাদের শরীরে সাইটোকাইনের মাত্রা বেড়ে গেছে এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইকারী শ্বেত রক্ত কণিকা ‘লিম্ফোসাইটস’ এর মাত্রা হ্রাস পেয়েছে।

যদিও সাইটোকাইন সংক্রমণ দমন করতে ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সহায়তা করে, কিন্তু এই অণুগুলো শরীরে বেশি মাত্রায় তৈরি হলে মারাত্মক প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে, যা রোগীর জন্য প্রাণঘাতী হতে পারে।

বিজ্ঞানীদের মতে, নেচার মেডিসিন জার্নালে প্রকাশিত তাদের এই গবেষণার ফল এ ধরনের রোগীদের উপযুক্ত চিকিৎসা আবিষ্কারে সহায়ক হবে।

গবেষণাপত্রটির অন্যতম লেখক ইভলিনা লন্ডন চিল্ড্রেন’স হসপিটালের ডা. মাইকেল কার্টার বলেন, ‘পিআইএমএস-টিএস আক্রান্ত শিশুদের সহায়তায় এই গবেষণা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি অসুস্থতাকালীন সময়ে শিশুদের শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থায় পরিবর্তনগুলো নিরীক্ষণের পাশাপাশি এই রোগ থেকে নিরাময় এবং ভবিষ্যতে পিআইএমএস-টিএস আক্রান্ত শিশুদের জন্য নির্দিষ্ট ইমিউন চিকিৎসা উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে।’

পিআইএমএস-টিএস রোগের লক্ষণের মধ্যে ত্বকে র‌্যাশ বা ফুসকুড়ি, জ্বর এবং পেটে ব্যথা অন্তর্ভুক্ত। এই রোগ রক্তনালীতে মারাত্মক প্রদাহ সৃষ্টি করে, যা হার্টের ক্ষতির কারণ হতে পারে।

বিজ্ঞানীরা পিআইএমএস-টিএস আক্রান্ত ২৫ জন শিশুর রক্তের নমুনা বিশ্লেষণ করেছেন এবং তা সুস্থ শিশুদের নমুনার সঙ্গে তুলনা করেছেন। গবেষকরা দেখতে পেয়েছেন, পিআইএমএস-টিএস আক্রান্ত শিশুদের শরীরে সাইটোকাইনের মাত্রা বেড়েছে এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইকারী শ্বেত রক্ত কণিকা হিসেবে লিম্ফোসাইটসের মাত্রা হ্রাস পেয়েছে, যা শিশুরা সুস্থ হয়ে উঠলে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।

এর আগে ধারণা করা হয়েছিল, এই রোগের সঙ্গে শিশুদের আরেক রোগ কাওয়াসাকি রোগের অনেকটাই মিল রয়েছে। তবে গবেষকরা বলছেন যে, পিআইএমএস-টিএস সিন্ড্রোম, পেডিয়াট্রিক ইনফ্ল্যামেটরি সিন্ড্রোম থেকে  আলাদা হতে পারে।

গবেষণার নেতৃত্বদানকারী গবেষক গাইজ অ্যান্ড সেন্ট থমাস এনএইচএস ফাউন্ডেশন ট্রাস্টের ইনটেনসিভ মেডিসিন কেয়ারের কনসালটেন্ট ডা. মনু শঙ্কর-হরি বলেন, ‘নতুন এই রোগে গুরুতর অসুস্থ শিশুদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা পরিবর্তন হওয়ার বিষয়টি আমাদের গবেষণা প্রথমবারের মতো তুলে এনেছে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পরিবর্তন হওয়ার এই ব্যাপারটি জটিল।’

তিনি আরো বলেন, ‘যদিও এই রোগের সঙ্গে কাওয়াসাকি রোগের মিল রয়েছে, তবে ইমিউন সিস্টেমে যে ধরনের পরিবর্তনগুলো আমরা লক্ষ্য করেছি তাতে বলা যায়, পিআইএমএস-টিএস হলো করোনাভাইরাস সংক্রমণের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি স্বতন্ত্র রোগ।’