বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আইসিটি সেক্টরে একসঙ্গে কাজ করবে বাংলাদেশ ও তুরস্ক

বাংলাদেশের হাই-টেক পার্কগুলোতে বিনিয়োগসহ আইসিটি খাতে আগামী দিনগুলোতে যৌথভাবে কাজ করবে বাংলাদেশ ও তুরস্ক। মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর ২০২০) বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের সভাকক্ষে এক মতবিনিময় সভায় আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক একথা বলেন। বাংলাদেশে নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মুস্তফা ওসমান তুরান সভায় যোগদান করেন। তুরস্কের রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের আইটি খাতের উন্নয়নে তার দেশের অংশগ্রহণের সম্ভাব্য ক্ষেত্রগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। আইসিটি প্রতিমন্ত্রী অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সঙ্গে তুরস্কের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরো জোরদার হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। 

মতবিনিময় সভায় তুর্কি প্রতিনিধিদের স্বাগত জানান বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (সচিব) হোসনে আরা বেগম। পরিচিতি পর্বের পর আইসিটি প্রতিমন্ত্রী পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনায় বাংলাদেশের উদীয়মান অর্থনীতির চিত্র এবং ক্রমবিকাশমান আইসিটি ইন্ডাস্ট্রিতে দুই দেশের অংশীদারত্বের ভিত্তিতে কাজ করার সুযোগ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।

জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যে ধর্মীয় ও সংস্কৃতির সমন্বয়ে ঐতিহাসিক ও অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক রয়েছে। প্রতিবছর আমাদের অর্থনৈতিক বন্ধন আরও দৃঢ় হচ্ছে। বৈশ্বিক আইসিটি শিল্প দ্রুত প্রসারিত হচ্ছে, ২০১৯ সাল পর্যন্ত এক হিসাবে দেখা যাচ্ছে বিশ্বব্যাপী আইসিটি ইন্ডাস্ট্রির বাজার ৫.৯ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। যেখানে সামগ্রিকভাবে আইসিটি ইন্ডাস্ট্রিতে প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ। দিন দিন এই বাজারটি এতোটাই প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠছে যে, কেবল সঠিক জায়গায় স্মার্ট বিনিয়োগের মাধ্যমে এখানে টিকে থাকা সম্ভব।   আইসিটি প্রতিমন্ত্রী আরো জানান, গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটিতে ৩৫৫ একর জমিতে বিভিন্ন কোম্পানি কাজ করছে। এখান থেকে উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। মাত্র চার বছরে হাই-টেক পার্কগুলোতে দেশি-বিদেশি বিনেয়োগকারীদের কাছ থেকে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ এসেছে। সম্প্রতি ওরিক্স বায়োটেক লিমিটেড নামীয় একটি চীনা জায়ান্ট বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটি,  কালিয়াকৈরে ৩০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের লক্ষ্যে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে।

তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মুস্তাফা ওসমান তুরান বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়ব এরদোয়ানের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের কথা স্মরণ করেন। অর্থনৈতিকভাবে অমিত সম্ভাবনাময়ী দুই দেশের একসঙ্গে কাজ করার ব্যাপারে তার দেশের প্রেসিডেন্টের আগ্রহের কথা তিনি পুনর্ব্যক্ত করেন। সম্প্রতি (চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি) আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সঙ্গে লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলায় বাংলাদেশ-তুরস্ক কারিগরি ইনস্টিটিউট (বিটিটিআই) উদ্বোধনের চমৎকার অভিজ্ঞতার স্মৃতিচারণ করে তুরস্কের মান্যবর রাষ্ট্রদূত বলেন, ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সঙ্গে তার দেশ আরো কাজ করতে চায়।

বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসনে আরা বেগম বলেন, বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ সারাদেশে ৩৯টি হাই-টেক পার্ক, সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক এবং আইটি ট্রেনিং কাম ইনকিউবেটর স্থাপন করছে। এর মধ্যে পাঁচটি পার্কে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পুর্ণোদ্যমে চলছে। সামস্যাং, নকিয়া, ওয়ালটনসহ আরো বেশ কিছু কোম্পানি কাজ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এখন পর্যন্ত ১০০ টিরও বেশি সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার এবং বায়োটেক কোম্পানি দেশজুড়ে অবস্থিত হাই-টেক পার্কগুলোতে ভূমি ও স্পেস বরাদ্দ নিয়েছে এবং কিছু কোম্পানি উৎপাদন ও বিপণন শুরু করেছে।

মতবিনিময় সভায় আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম, তুরস্ক সরকারের দাতা সংস্থা টার্কিশ কো-অপারেশন অ্যান্ড কো-অর্ডিনেশন এজেন্সির বাংলাদেশের সমন্বয়ক ড. ইসমাইল গুনদৌদু, বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ এর আওতাধীন বিভিন্ন প্রকল্পের পরিচালক ও কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।