বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নকল স্মার্টফোন চেনার উপায়

অনেকসময়ই স্মার্টফোন কেনার পর দেখা যায় যে জিনিসটি আসল নয়। কষ্টের টাকায় কেনা স্মার্টফোনটি যদি নকল বের হয় তবে সেটা মোটেও সুখকর বিষয় হবার কথা নয়। নকল ফোন কেনা থেকে বাঁচতে সেরা উপায় হচ্ছে অফিশিয়াল অফলাইন/অনলাইন স্টোর থেকে ফোনটি কেনা। কিন্তু অনেকেই আনঅফিসিয়াল স্টোর থেকে ফোন কিনে থাকেন। এক্ষেত্রে ফোনটি আসল নাকি নকল, তা বোঝার কিছু উপায় তুলে ধরা হলো এ প্রতিবেদনে।

* বাহ্যিক ডিজাইনে মনোযোগ দিন: নকল ফোন শনাক্ত করার সবচেয়ে সুস্পষ্ট জায়গা হলো বাহ্যিক ডিজাইন। আসল মডেলের মতো ক্লোন মডেলে এতো সলিড এবং ক্লিকি বাটন দেখতে পাওয়া যায় না। বাটনগুলো সাধারণত ভুল জায়গায় লাগানো থাকে, স্ক্রিনের ব্যাজেল বেশি মনে হয়, অথবা ক্যামেরা হাউজিং দেখেই মনের মধ্যে সন্দেহ জেগে যায়। কিন্তু অনেক ডিভাইস রয়েছে যেগুলোকে মাস্টার কপি বা মাস্টার ক্লোন বলা হয়, এই ফোনগুলোর বাহ্যিক ডিজাইন দেখে নকল বলে ঘোষণা করা অনেকটা অসম্ভব, শুধু সেগুলো তখনই বুঝা যায় যখন ব্যবহার করতে শুরু করবেন।

আনঅফিশিয়াল শপ থেকে ফোন কেনার সময় অবশ্যই ফোনটি অন করে দেখে নেবেন পূর্বে, ভালো করে যাচাই করে দেখুন স্ক্রিন কোয়ালিটি। স্ক্রিন কোয়ালিটি থেকে অনেক কিছু বুঝা যায়। তারপরে ফোনটির ইউআই ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে নিন। ফোনটির অফিশিয়াল আইকন কিরকম সেটা চেক করে দেখুন, প্রয়োজনে ইউটিউব থেকে দেখে নিন ফোনটি আসল ইউআই। ফোনের মধ্যে প্রি-ইনস্টল থাকা অ্যাপগুলোর দিকে লক্ষ্য দিন, যদি দেখেন একে বারেই উদ্ভট অ্যাপ ইনস্টল করা রয়েছে সেক্ষেত্রে ফোনটি নকল হতে পারে।

ফোনটি ব্যবহার করে পারফরম্যান্স চেক করুন। ক্লোন ফোনগুলোতে পুরোনো আর দুর্বল প্রসেসর লাগানো থাকে, পাশাপাশি ব্যাড অপটিমাইজেশনের ফলে ফোন প্রচুর ল্যাগ করে, স্লো এবং গরম হয়ে যায়। এমন কিছু খেয়াল করলে ফোনটি কেনা থেকে বিরত থাকুন।

* আইএমইআই নম্বর চেক করুন: আপনার ফোনটি আসল নাকি নকল সেটা বোঝার জন্য আপনার ফোনের আইএমইআই নম্বর চেক করতে পারেন। যদিও এতে শতভাগ নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয় যে আপনার ফোনটি আসল হবেই, অ্যান্ড্রয়েড ফোনগুলোতে আইএমইআই নম্বরও ক্লোন করা যায়, সুতরাং হতেই পারে নকল ফোনটির আইএমইআই নম্বরটিও নকল। কিন্তু তারপরেও চেক না করার কোনো কারণ নেই।

বেশিরভাগ ফোনের বাক্সের স্টিকারে আইএমইআই নম্বর লেখা থাকে বা ফোনটি অন করে *#০৬# কোডটি চাপলে সেই ফোনের আইএমইআই নম্বর পাওয়া যাবে। এবার এই নম্বরটি imei.info ওয়েবসাইটে গিয়ে প্রবেশ করান, তারপরে ওই আইএমইআই নম্বরটির সাহায্যে ফোন মডেল নামটি শো করবে, যদি ফোনের মডেল আপনার ফোনটির সঙ্গে ম্যাচ না করে, তবে ফোনটি ক্লোন বা নকল ফোন হতে পারে।

তবে বর্তমানে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন আইএমইআই নম্বর ভেরিফিকেশন সুবিধা চালু করেছে। এই প্রক্রিয়ায় খুব সহজেই জেনুইন ফোন সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারবেন। এক্ষেত্রে মোবাইল ফোন কেনার সময় মেসেজ অপশনে গিয়ে KYD লিখে স্পেস দিয়ে আইএমইআই নম্বর লিখে ১৬০০২ নম্বরে মেসেজ পাঠান। ফিরতি মেসেজে ফোনটির আইএমইআই বিটিআরসির সার্ভারে নিবন্ধিত আছে কি না, তা জানতে পারবেন।  

* ক্যামেরা চেক করুন: নকল ফোনের আরেকটি বড় দুর্বল পয়েন্ট হচ্ছে ক্যামেরা সেকশন। ক্লোন ফোনগুলোর ক্যমেরা একেবারেই বাজে কোয়ালিটির হয়ে থাকে। সুতরাং যদি ফটো কোয়ালিটি একেবারেই বাজে হয় তাহলে আর বলার অপেক্ষা রাখবে না সেটা নকল ফোন।

আসল ওয়েবসাইট চেক করুন, সেখানে দেখুন ফোনটির ক্যামেরা কতো মেগাপিক্সেল বা কতোগুলো ক্যামেরা সেন্সর রয়েছে সেই ফোনে। তারপরে একটু অনলাইন ঘেঁটে দেখুন ফোনটির আসল ক্যামেরার ফটো স্যাম্পলগুলো কেমন, তারপরে আপনার ফোনের সঙ্গে সেগুলোকে তুলনা করুন। যদি দেখেন যে অনলাইন ফটোগুলোর থেকে আপনার ফোনের ক্যাপচার করা ফটো ডিটেইলস অর্ধেকের চেয়েও খারাপ, তাহলে নিশ্চয় আর বাকিটা বুঝতে দেরি হওয়ার কথা না।

* সিপিইউ জেড অ্যাপ ইনস্টল করুন: নকল ফোনে নিম্নমানের প্রসেসর ব্যবহার করা হয়। তাই ফোনের ফিচার অফিসিয়াল ফিচারের সঙ্গে তুলনা করা জরুরি। আর এ কাজটি সহজেই করতে পারবেন সিপিইউ জেড অ্যাপ ইনস্টল করার মাধ্যমে। এই অ্যাপ আপনাকে ফোনের ভেতরে প্রসেসরের কাজ সহ ও নিম্নমানের সফটওয়্যারগুলো সম্পর্কে জানাবে, যা ফোনের পারফরম্যান্স হ্রাস করছে। অ্যাপটি ইনস্টল করার পর সিপিইউ এবং জিপিইউ সেকশন থেকে ফোনের হার্ডওয়্যার বিস্তারিত পরীক্ষা করতে পারবেন। প্রসেসরের পাশাপাশি র‌্যাম, রেজ্যুলেশন প্রভৃতি তথ্য প্রদর্শন করবে এটি। ফিচারগুলো আসল কিনা সেটা মিলিয়ে দেখার জন্য আপনি চাইলে এআইডিএ৬৪ ইনস্টল করে নিতে পারেন।

তবে সাইবার ক্রিমিন্যালরা এখন অনেক বেশি স্মার্ট। এমনকি ফোনে সিপিইউ জেড টাইপের অ্যাপগুলো থেকেও অনেক সময় আসল তথ্য খুঁজে বের করা যায় না। প্রতারকরা নকল ফোনে প্রসেসর মডেল বা সঠিক র‌্যাম পরিমাণ বসিয়ে রাখতে পারে, যেটা আসলে ভুয়া।

* ব্যবহার করুন অ্যানটুটু অফিসার অ্যাপ: এক্ষেত্রে অ্যানটুটু অফিসার অ্যাপ ব্যবহার করতে পারেন। প্রথমে অন্য একটি ফোনে ডাটা অন করে ওয়াইফাই হটস্পট চালু করুন, এবার যে ফোনটি কিনতে চাচ্ছেন সেটাকে হটস্পটের সঙ্গে কানেক্ট করুন। নতুন ফোনে প্লে স্টোর থেকে অ্যানটুটু অফিসার ডাউনলোড করে নিন এবং ইনস্টল করুন, তারপরে আপনার পুরাতন ফোনের ব্রাউজারে গিয়ে y.antutu.com লিংকটি ওপেন করুন, সেখানে একটি কিউআর কোড দেখতে পাবেন, সেটা নতুন ফোনের অ্যানটুটু অফিসার অ্যাপটি ওপেন করে স্ক্যান করুন। কিউআর কোডটি স্ক্যান করা হয়ে গেলে আপনার পুরাতন ফোনে জানিয়ে দেওয়া হবে আপনার ফোনটি আসল নাকি নকল। যদি সবুজ সিগন্যাল দেখানো হয় তাহলে বুঝবেন আপনার ফোনটি আসল যদি লাল সিগন্যাল দেখানো হয় সেক্ষেত্রে আপনার ফোনটি ফেক।