বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

অবশেষে মঙ্গলে উড়ল হেলিকপ্টার

দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে মঙ্গল গ্রহে উড়ল নাসার মার্স হেলিকপ্টার ইনজেনুইটি। ঐতিহাসিক এই ঘটনার কথা সোমবার (১৯ এপ্রিল) বিকেলে জানিয়েছে নাসা। ১৯০৩ সালে উড়োজাহাজ উড়িয়ে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন রাইট ব্রাদার্স। এবার নাসার কল্যাণে বিশ্ব সাক্ষী হলো আরেক বিস্ময়কর ঘটনার- এই প্রথম পৃথিবীর বাইরের কোনো গ্রহে উড়ল হেলিকপ্টার।

গত ৮ এপ্রিল মঙ্গল গ্রহে উড়ার কথা ছিল ইনজেনুইটির। কিন্তু কারিগরি সমস্যার কারণে কয়েক দফা অভিযান পেছানো হয়। সর্বশেষ গত শনিবার নাসা জানায়, সোমবার (১৯ এপ্রিল) মঙ্গল গ্রহে হেলিকপ্টারের প্রথম ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে।

দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে সফল হলো সোমবারের অভিযান। নাসা জানিয়েছে, হেলিকপ্টার ইনজেনুইটির প্রথম উড্ডয়ন সফল হয়েছে। ১০ ফুট উঁচুতে উঠে মঙ্গল গ্রহের পৃষ্ঠদেশের লালচে ধুলোর ছবি তুলেছে ইনজেনুইটি। ৩০ সেকেন্ডের মতো উড়েছে এই কপ্টার। এই প্রথম পৃথিবী ছাড়া অন্য কোনো গ্রহের পৃষ্ঠদেশে হেলিকপ্টার উড়ল। তাও আবার এটি একটি পাওয়ার্ড এবং কন্ট্রোলড ফ্লাইট। ১৯০৩ সালে মার্কিন দুই ভাই অরভিল রাইট ও উইলবার রাইট পৃথিবীতে প্রথমবারের মতো ১২ সেকেন্ড উড়োজাহাজ উড়িয়েছিলেন। সেই তুলনায় মঙ্গল গ্রহে নাসার ৩০ সেকেন্ড হেলিকপ্টার ওড়ানোর সাফল্য মোটেও কম কিছু নয়। 

এই হেলিকপ্টারটিকে পারসিভারেন্স রোভারের ভেতরে করে মঙ্গল গ্রহে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি মঙ্গল গ্রহের ‘জেজোরো ক্রেটার’ নামক এলাকায় নিরাপদে অবতরণ করে নাসার মঙ্গলযান পারসিভারেন্স রোভার। গত বছরের জুলাইয়ে পৃথিবী থেকে উড়াল দেয়ার সাত মাস পর ৪৭ কোটি মাইল পথ পাড়ি দিয়ে মঙ্গল গ্রহে পা রাখার জটিল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সক্ষম হয় পারিসিভারেন্স। 

মঙ্গলে প্রাণের অস্তিত্ব কখনো ছিল কিনা, তা খতিয়ে দেখার সবচেয়ে উপযুক্ত এলাকা জেজোরো ক্রেটার। মঙ্গলের এই এলাকায় ফেব্রুয়ারিতে অবতরণের পর থেকেই গবেষণা চালাচ্ছে পারসিভারেন্স। এবার গবেষণায় যুক্ত হতে যাচ্ছে হেলিকপ্টার ইনজেনুইটি।  

জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলছেন, স্পেসফ্লাইটের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে ইনজেনুইটি। ৪ পাউন্ড ওজনের এই কপ্টারের চারটি কার্বন-ফাইবার ব্লেডগুলো সোমবার সকালেই ঘুরতে শুরু করেছিল। এক মিনিটে ২৫০০ বার ঘুরতে পারে এই ব্লেড, তাও আবার উল্টো দিকে। পৃথিবীতে যেসব হেলিকপ্টার রয়েছে তার থেকে ইনজেনুইটির গতি অন্তত পাঁচ গুণ বেশি। আর সেই জন্যেই মঙ্গল গ্রহের অত্যন্ত হালকা এবং পাতলা মার্সিয়ান অ্যাটমোসফিয়ারেও এই ব্লেডের ঘূর্ণন শক্তির সাহায্যেই কপ্টার ইনজেনুইটি উড়েছে।

মঙ্গল গ্রহের পৃষ্ঠদেশে রোটরক্রাফট টেকনোলজি কাজ করে কিনা, প্রথম উড্ডয়নে এটা পর্যবেক্ষণ করাই ছিল নাসার ইনজেনুইটি হেলিকপ্টারের কাজ। এই মার্স হেলিকপ্টারের তলায় লাগানো রয়েছে দুটি ক্যামেরা। এই ক্যামেরাতেই স্টিল ইমেজ বা স্থিরচিত্র রেকর্ড করা হয়েছে।

মঙ্গল গ্রহে নাসার নতুন এই অভিযানের অংশ হিসেবে মঙ্গলপৃষ্ঠে হেলিকপ্টারটি ৩ থেকে ৫ মিটার উঁচুতে উড়ে অন্তত ৫০ মিটার এলাকা অনুসন্ধান চালাবে। প্রতিটি ফ্লাইটের জন্য সময় লাগবে দেড় মিনিট। মঙ্গলে রাতের বেলায় উষ্ণতা নেমে যায় মাইনাস ৯০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এক্ষেত্রে কপ্টারটির সৌর সেল ব্যাটারিকে রিচার্জ করে চালু রাখবে।  তবে হেলিকপ্টার বলা হলেও আসলে এটি একটি ক্ষুদ্র ড্রোন।