খেলাধুলা

তাদের আউট করা সত্যিই কষ্টকর ছিল

মোস্তফা আরিফ : পুরো  নাম গ্লেন ডোনাল্ড ম্যাকগ্রা। ডাক নাম পিজিয়ন, মানে কবুতর।  তবে ম্যাকগ্রা নামেই বেশি পরিচিত। সাদা কবুতরের মতই ছোট্ট ছোট্ট পায়ে হেলে দুলে বল করতেন। অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন এ পেস বোলার  সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন আজ থেকে আট বছর আগে।

 

১৯৯৩ সালের ১২ নভেম্বর অস্ট্রেলিয়ার ওয়াকা গ্রাউন্ডে প্রতিবেশী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে অভিষেক হয়েছিল ম্যাকগ্রার। তারপর ১৪ বছর এই পিজিয়ন দাপটের সাথে পেস বোলিং জগতে বিশ্ব চষে বেড়িয়েছেন। সর্বশেষ টেস্ট খেলেছেন ২০০৭ সালের  ২ জানুয়ারী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে, সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে (এসসিজি)।

 

ম্যাকগ্রা ১৪ বছরে ১২৪টি টেস্ট খেলেছেন, উইকেট পেয়েছেন ৫৬৩টি। ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন ২৫০টি, ঝুলিতে উইকেট জমা করেছেন ৩৮১টি। ক্যারিয়ারে অনেক বিখ্যাত ব্যাটসম্যানকে মোকাবেলা করেছেন। তবে দু’জনকে তিনি সবার ওপরে স্থান দিয়েছেন। তার একজন হলেন ভারতের শচীন টেন্ডুলকার এবং অপরজন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্রায়ান চার্লস লারা।

 

এ দু’ব্যাটসম্যানই ম্যকগ্রার দৃষ্টিতে সেরা। তার মতে, ‘তারা অনন্য, অসাধারণ। তাদের উইকেট পাওয়া ছিল আমার জন্য বড়ই চ্যালেঞ্জ।’ শচীন এবং লারাকে নিয়ে ক্রিকেটনেক্সট-এ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ম্যাকগ্রা তার নিজস্ব মূল্যায়ন এবং ক্রিকেট ক্যারিয়ার সম্পর্কে  বেশ কিছু তথ্য তুলে ধরেছেন। তার আকর্ষনীয় অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো:

 

প্রশ্ন : পেস বোলিংকে কিভাবে মূল্যায়ন করেন?

ম্যাকগ্রা : পেস বোলিং হচ্ছে ক্রিকেটের আর্ট বা ছন্দ। সুন্দর ও শৈল্পিকতার পুরোটাই জুড়ে রয়েছে পেস বোলিংয়ে। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ক্রিকেট খেলার স্বপ্ন দেখতাম, ইচ্ছা ছিল পেস বোলার হওয়ার। ব্যাটসম্যান নয়, সেরা পেস বোলার হওয়াই ছিল আমার আরাধনা। কারণ, আমি মনে করি বোলাররাই ম্যাচ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রাখেন।

 

অনেকেই আমার এ কথায় দ্বিমত পোষণ করবেন, তারা হয়ত বলবেন ব্যাটসম্যানরাই ম্যাচের ভাগ্য নিয়ন্ত্রক। ব্যাটসম্যান কিছুই করতে পারবে না যতক্ষণ না বোলার বল ডেলিভারি দেবেন। আর সে ডেলিভারিতে ব্যাটসম্যান আউট হতে পারেন।  নিখুঁত পেস বোলিংয়ের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, লাইন-লেন্থ ঠিক হলে ব্যাটসম্যান কাবু হতে বাধ্য। আমি মনে করি পেস বোলাররাই সবচেয়ে বেশি বুদ্ধিমান। তারা বুদ্ধি ও কৌশল দিয়েই ম্যাচের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।

 

প্রশ্ন : আপনার এ ধ্যান ধারণা মেনে নিলেও বলতে হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক ব্যাটসম্যান, বোলার নন...?

ম্যাকগ্রা: আমি আপনার সাথে একমত। যখন অধিনায়ক ব্যাট করে তখন সে বুঝতে পারে তার এবং দলের জন্য কি প্রয়োজন। তার দৃষ্টিভঙ্গী প্রখর হয়। দলকে সেভাবে পরিচালনা করতে পারেন। আবার দল যখন ফিল্ডিংয়ে থাকে তখন অধিনায়কই জানেন কখন কোন বোলারকে ব্যবহার করতে হবে। তাই অধিনায়ক সাধারণত ব্যাটসম্যান থেকেই করা হয়।

 

প্রশ্ন : বোলিংয়ে কাকে অনুসরণ করেছেন?

ম্যাকগ্রা : কাউকে আদর্শ হিসেবে কখনও মেনে নিইনি। আমি আমার স্টাইল অনুসরণ করেছি মাত্র। আমার শারীরিক গঠন খুবই স্বাভাবিক ছিল, বল করতে কখনই সমস্যা হত না।

 

প্রশ্ন : প্রত্যেক বোলারের জীবনে ভালো এবং মন্দ দিন থাকে, আপনার ক্যারিয়ারে এ রকম মুহুর্তের কথা জানাবেন কি?

ম্যাকগ্রা : ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে বেশ বাজে সময় কাটিয়েছি সেটা আর বলতে চাই না। আর সুন্দর মুহুর্ত আছে অগনিত।

 

প্রশ্ন : কোনো ব্যাটসম্যান যখন আপনার বল হিট করে সীমানা পার করতেন তখন আপনার কেমন লাগত?

ম্যাকগ্রা : কোনো ব্যাটসম্যানকে আমি কৃতিত্ব দিতে চাই না। কারণ, আমি বাজে বল না করলে তিনি নিশ্চয়ই বাউন্ডারি হাঁকাতে পারতেন না। সে জন্য সব সময় চেষ্টা করতাম ভালো বল করার। এটা আমার নৈতিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।

 

প্রশ্ন : কোনো সেট ব্যাটসম্যানকে আউট করতে কি পরিকল্পনা গ্রহণ করতেন?

ম্যাকগ্রা : আমার নিজস্ব কিছু পরিকল্পনা ছিল। প্রত্যেকটি ম্যাচের আগে দলগতভাবে  আমরা তৈরী হই। প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানের ব্যাপারে ভিডিও ফুটেজ দেখে থাকি। তার দুর্বল দিক চিহ্নিত করেই সেভাবে বল করা হয়। অন্য কোনো পরিকল্পনা নেই।

 

প্রশ্ন : আপনার দৃষ্টিতে কে বা কারা সেরা ব্যাটসম্যান?

ম্যাকগ্রা : শচীন টেন্ডুলকার এবং ব্রায়ান লারা সেরা ব্যাটসম্যান। তাদের আউট করা সত্যিই কষ্টকর ছিল। তাদের উইকেট পাওয়া ছিল আমার জন্য বড়ই চ্যালেঞ্জ।

   

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৯ জুন, ২০১৫/মোস্তফা আরিফ/সন্তোষ/পরাগ