খেলাধুলা

প্রেরণায় ভাস্বর এক কিংবদন্তী

ইয়াসিন হাসান: ক্যারিবীয় সাগরের দ্বীপরাষ্ট্র সেন্ট লুসিয়ার বড় তারকা ড্যারেন স্যামি। ২০১৬ টি-টোয়িন্ট বিশ্বকাপের পরের কথা। ক্রিকেট ইতিহাসে চতুর্থ ক্রিকেটার হিসেবে ড্যারেন স্যামি জোড়া ‘বিশ্বকাপজয়ী’অধিনায়ক হিসেবে মাত্রই নাম লিখিয়েছিলেন।

 

ঘরের ছেলেকে সম্মান জানিয়ে দ্বীপের একমাত্র আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম স্যামির নামে নামকরণ করার ঘোষণা দেন দ্বীপরাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী কেনি ডি অ্যান্থনি। পৃথিবীর যেকোনো ক্রিকেটারের জন্য এ এক বিরল সম্মান। কিন্তু সেই সম্মান পাওয়ার কিছুদিন পরই বড় দুঃসংবাদ পেতে হয় স্যামিকে। মাত্র ৩০ সেকেন্ডের একটি ফোন, সেখানেই শেষ স্যামির ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্যারিয়ার!

   

স্যামিকে একটি ফোনে জানিয়ে দেওয়া হয়,‘তুমি আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক থাকছ না। আমাদের দলে থাকার মত পারফরম্যান্স তোমার নয়।’ ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচক কমিটির চেয়ারম্যানের সঙ্গে স্যামির কথোপকথনের স্থায়িত্বকাল মাত্র ৩০ সেকেন্ডের। দল থেকে বাদ পড়ে স্যামি হারালেন চুক্তি। এখন টি-টোয়েন্টির ‘ফেরিওয়ালা’। যেখানে ডাক পাবেন সেখানেই খেলবেন। এখন যেমনটা খেলছেন বিপিএলে।

 

২০১০ সালের এপ্রিলে অধিনায়কত্বটা যখন পান, বেশ বড় চ্যালেঞ্জই ছিল তাঁর সামনে। কারণ পরের বছরই ছিল ওয়ানডে বিশ্বকাপে। নতুন দল নিয়ে স্যামি খুব একটা ভালো করতে পারেনি। তবুও আস্থা রেখেছিল বোর্ড। সেই আস্থার প্রতিদান ২০১২ সালেই দেন স্যামি। ক্লাইভ লয়েডের পর স্যামির হাত ধরে উইন্ডিজ পায় শিরোপা। তিন বছরের ব্যবধানে আবারও স্যামির হাতে সাফল্যের মুকুট। ২০১৬ সালের টি-টোয়েন্টি শিরোপাও জিতে স্যামির ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

   

স্যামি যেখানে গিয়েছেন সেখানেই ভালোবাসা ছড়িয়ে দিয়েছেন। নিজ দেশে ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে সেইন্ট লুসিয়া জুকসকে প্লে’অফে নিয়েছেন স্যামি। ব্যাট-বল হাতে স্যামির পারফরম্যান্স ছিল ২১২ রান ও ৮ উইকেট। পাকিস্তান সুপার লিগে পেশোয়ার জালমীর হয়ে একই সাফল্য স্যামির। শিরোপার স্বাদ পাননি কিন্তু দলকে সঠিকপথে নেতৃত্ব দিয়ে স্যামি ধাপেধাপে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। ব্যতিক্রম ছিল শুরু আইপিএলে তার সানরাইজার্স হায়দরাবাদের মিশন।

 

২০১৪ সালে হায়দরাবাদের হয়ে ৪ ম্যাচ নেতৃত্ব দিয়েছিলেন স্যামি। সাফল্য ধরা দেয়নি একটিতেও! অবশ্য সেবার হায়দরাবাদের অবস্থা ছিল যাচ্ছেতাই। শেখর ধাওয়ানের দল ষষ্ঠ স্থানে থেকে মিশন শেষ করে। জয় পরাজয়ের অনুপাত ছিল ৬:৮। এছাড়া বিগ ব্যাশে হোবার্ট হ্যারিকেন্সের হয়ে স্যামি খেলেছেন বেশ দাপট নিয়েই। এবারের বিপিএলে তার যাত্রার খবর তো সবারই জানা।

   

স্যামির সাফল্যের পাতায় আরেকটি পালক যোগ হওয়ার অপেক্ষা। বিপিএলের ফাইনালে আজ স্যামির দলের প্রতিপক্ষ সাকিবের ঢাকা ডায়নামাইটস। একটি পরিসংখ্যান দেওয়া যায়, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ড্যারেন স্যামির দল যতবার ফাইনালে উঠেছে ততবারই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এবারও কি তাই হবে?

 

তবে ড্যারেন স্যামি ও রাজশাহী কিংসের যাত্রাটা মোটেও সুখকর ছিল না। কাগজে-কলমে সবচেয়ে দূর্বল দল নিয়ে সেরা দুইয়ে রাজশাহী। এক ঝাঁক তরুণ, উদ্যমী ও স্বপ্নবাজদের নিয়ে ড্যারেন স্যামি বিপিএলে যাত্রা শুরু। সতীর্থদের মতে স্যামি যেভাবে দল আগলে রেখেছেন, স্বপ্ন দেখিয়েছেন, প্রেরণা জুগিয়েছেন, উৎসাহিত করেছেন তা অন্য কেউ হলে করতে পারত না। ক্রিস গেইল, আন্দ্রে রাসেল কিংবা ডোয়াইন ব্রাভোর মত সাফল্য হয়ত স্যামি দিতে পারবেন না কিন্তু একটি পরিবার তৈরী করতে পারবেন এ অধিনায়ক। যে পরিবার বিশ্বাস করে,‘দশে মিলে করি কাজ, হারি-জিতি নাহি লাজ।’

   

মাঠের ভিতরে এবং মাঠের বাইরে স্যামি অসাধারণ নায়ক। স্বল্প সময়ে যুগান্তকারী সব বড় কাজ করে গেছেন। ক্রিকেট মনে রাখবে স্যামিকে, স্যামির অবদানকে, স্যামির ভালোবাসাকে। যে ভালোবাসা অকৃত্রিম, যে আবদান অগণনীয়। প্রেরণায় ভাস্বর এক জীবন কিংবদন্তী তিনি।

     

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৯ ডিসেম্বর ২০১৬/ইয়াসিন/শামীম