খেলাধুলা

নিউজিল্যান্ড ৬-০ বাংলাদেশ

ইয়াসিন হাসান: প্রথমে ওয়ানডে সিরিজে ৩-০, এবার টি-টোয়েন্টিতেও ৩-০। দুইয়ে মিলিয়ে ৬-০। নিউজিল্যান্ড-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সিরিজের সীমিত ওভারের পারফরম্যান্সের চিত্র এটি। ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইট ওয়াশের পর টি-টোয়েন্টিতে ২-০ ব্যবধানে পিছিয়ে ছিল বাংলাদেশ। রোববার মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে শেষ টি-টোয়েন্টিতে নিউজিল্যান্ড আতিথেয়তা দেয় বাংলাদেশকে। এ ম্যাচে পারফরম্যান্সের সূচক বাড়লেও বাংলাদেশের ভাগ্য পাল্টায়নি। পরাজয়ের বৃত্তে থাকা মাশরাফিরা শেষ ম্যাচেও পেল না অধরা জয়ের স্পর্শ।

টসে জিতে স্বাগতিকদের আগে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানিয়ে ১৯৫ রানের টার্গেট পায় বাংলাদেশ। ৪ উইকেটে ১৯৪ রান করে নিউজিল্যান্ড। জবাবে ৬ উইকেটে ১৬৭ রানের বেশি করতে পারেনি সফরকারীরা। ২৭ রানের হারে পরাজয়ের ষোলকলাপূর্ণ করল বাংলাদেশ। ওয়ানডে সিরিজ ও টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে নিষ্প্রভ হয়ে থাকা টপ অর্ডার ব্যাটিং আজ জ্বলে উঠল পুরোদমে। পারফেক্ট টাইমিংয়ের সঙ্গে হিসেবি ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা ছিল অনন্য। ব্যাটিংয়ে শারীরিক ভাষা দেখেই অনুমান করা যাচ্ছিল এই বুঝি ব্যর্থতার সূর্য্য কাটিয়ে সাফল্যের সূর্য্য উঁকি দিচ্ছে! কিন্তু না, একটু পরই নেমে এল অন্ধকার। লাল-সবুজ জার্সিধারীরা আর আলোর দেখা পেল না। টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা শুরুতে যে ভিত দিয়ে এসেছিল মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানরা পরবর্তীতে কিছুই করতে পারেনি। ফলাফল টি-টোয়েন্টিতেও হোয়াইটওয়াশ বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের ব্যাটিং ও বোলিংয়ের শুরুটা ছিল দূর্দান্ত। পাহাড় সমান লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১০ ওভারে বাংলাদেশের রান ২ উইকেটে ৮৯। সেখানে স্বাগতিকদের রান ছিল মাত্র ৩ উইকেটে ৫৫। শেষ দশ ওভারে বাংলাদেশ স্কোরবোর্ডে যোগ করে মাত্র ৭৮ রান। সেখানে নিউজিল্যান্ড পায় ১৩৯ রান। শেষ দশ ওভারেই যে বাংলাদেশের অসহায় আত্মসমর্পণ, তা স্কোরবোর্ড দেখলেই বোঝা যায়। বাংলাদেশকে একাই হারিয়েছেন ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হওয়া মারকুটে কোরি অ্যান্ডারসন। প্রথম দুই ম্যাচে আলো ছড়াতে না পারলেও শেষ ম্যাচে অ্যান্ডারসন ছিলেন দানবীয় রূপে। মাত্র ৪১ বলে ২ চার ও ১০ ছক্কায় বাঁহাতি এ ব্যাটসম্যানের ব্যাট থেকে আসে ৯৪ রান। ১০ ছক্কা হাঁকিয়ে এক ইনিংসে নিউজিল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ডও গড়েন অ্যান্ডারসন। এ ইনিংসেই শেষ বাংলাদেশ। চতুর্থ উইকেটে কোরি অ্যান্ডারসনকে সঙ্গ দেন অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। ১২৪ রানের জুটি গড়েন এ দুই ব্যাটসম্যান।

অবশ্য জুটি বড় হওয়ার সুযোগ তৈরি করে দেন বাংলাদেশের ফিল্ডাররা। মাশরাফির পর পর দুই ওভারে কিউই অধিনায়কের ক্যাচ ছাড়েন সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবাল। দলের দুই নির্ভরযোগ্য ও সিনিয়র দুই ক্রিকেটারের ক্যাচ মিসে বড় ইনিংস খেলার সাহস ও সুযোগ পেয়ে যান অ্যান্ডারসন! সে সময়ে কিউই অধিনায়ককে ফেরানো গেলে অ্যান্ডারসনকেও অপরপ্রান্তে আটকানো যেত! ইনিংসের শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে অ্যান্ডারসন যখন ৯৪ রানে নট আউট, তখন বাংলাদেশের কপালে ভাঁজ! কারণ ফিল্ডিংয়ে চোট পাওয়ায় ব্যাটিং করার সুযোগ নেই ইমরুল কায়েস ও মাশরাফি বিন মুর্তজার! বল হাতে রুবেল হোসেন সেরা।  ৩১ রানে নেন ৩ উইকেট। বড় লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে তামিম ও সৌম্যর উড়ন্ত সূচনা। ৪.৩ ওভারে বাংলাদেশ তুলে নেয় ৪৪ রান। তবে ট্রেন্ট বোল্টের করা ওভারের চতুর্থ বলে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। বোল্টের শর্ট বলে মিড উইকেটে ক্যাচ দেন তামিম। ১৫ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় ২৪ রান করেন তামিম। দ্বিতীয় উইকেটে সাব্বির রহমান ও সৌম্য সরকার ২২ বলে তোলেন ৩৮ রান। আগের ম্যাচে ৩৯ রান করা সৌম্য আজও শুরু থেকে ছিলেন অনন্য। কিন্তু হঠাৎ পথ ভুলে বসলেন। ইশ শোধীর বলে বড় শট হাঁকাতে গিয়ে হাওয়ায় ক্যাচ তুলে দেন সৌম্য। নিজেই দৌড়ে বল তালুবন্ধী করেন শোধী। এরপর সাব্বির রহমান (১৮), মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (১৮) ও মোসাদ্দেকের (১২) আউটে ‘জয়ের’ সুযোগটিও হাতছাড়া হয় টাইগারদের।

ফিল্ডিংয়ে ক্যাচ মিস করা সাকিব শেষ ওভারে আউট হন ৪১ রানে। ৩৪ বলে ৪ বাউন্ডারিতে ইনিংসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪১ রান করেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। রঙিন পোশাকের লড়াই শেষ। ১২ জানুয়ারি থেকে ওয়েলিংটনে শুরু হবে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথম টেস্ট। পোশাক পাল্টে বাংলাদেশের ভাগ্য পাল্টায় কিনা সেটাই দেখার বিষয়।  

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৮ জানুয়ারি ২০১৭/ইয়াসিন/টিপু