খেলাধুলা

রেকর্ড গড়েই দীর্ঘ অপেক্ষা ফুরাল গুজরাটের

ক্রীড়া ডেস্ক : শারদুল ঠাকুরের অফ স্টাম্পের বাইরের শর্ট বল। বলটি কাট করলেন চিরাগ গান্ধী। পয়েন্ট দিয়ে চোখের পলকে বল চলে গেল সীমানার বাইরে। সঙ্গে সঙ্গে মুষ্টিবদ্ধ হাত বাতাসে ছুঁড়লেন গান্ধী। ছুটে এসে তাকে জড়িয়ে ধরলেন রাজুল ভাট। ড্রেসিং রুম থেকে ছুটে এসে সেই উৎসবে যোগ দিলেন অন্য সতীর্থরা। গোল হয়ে চলল আনন্দ নৃত্য। এমন বাঁধনহারা উল্লাস তো করতেই পারেন গুজরাটের ক্রিকেটাররা। নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথমবার যে রঞ্জি ট্রফি জিতল গুজরাট! তাও আবার রেকর্ড গড়ে চ্যাম্পিয়ন। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন মুম্বাই ফাইনালে গুজরাটের সামনে বেঁধে দিয়েছিল ৩১২ রানের কঠিন লক্ষ্য। কঠিন এই কারণে যে, রঞ্জির আগের মৌসুম পর্যন্ত ফাইনালে এত রান তাড়া করে জিততে পারেনি কোনো দল। সর্বোচ্চ ৩১০ রান তাড়া করে জিতেছিল হায়দরাবাদ। তাও আবার সেটা ৬৮ বছর আগে, ১৯৩৭-৩৮ মৌসুমে নাওয়ানগরের বিপক্ষে। এবার ৩১২ রান তাড়া করে জিতে গুজরাট গড়ল নতুন রেকর্ড। আর জয়ের নায়ক ইংল্যান্ড সিরিজে আট বছর পর ভারতের টেস্ট দলে ফেরা গুজরাটের অধিনায়ক পার্থিব প্যাটেল। অধিনায়কের ১৪৩ রানের দুর্দান্ত ইনিংসেই ৩১২ রান তাড়া করে গুজরাট জিতেছে ৫ উইকেটে। আর তাতেই দীর্ঘ অপেক্ষা ফুরাল গুজরাটের। ২০১৫ সালে বিজয় হাজারে ট্রফির ফাইনালেও পার্থিবের প্রথম লিস্ট ‘এ’ সেঞ্চুরিতে প্রথমবার ঘরোয়া ৫০ ওভারের প্রতিযোগিতার শিরোপা জিতেছিল গুজরাট। গুজরাট সবশেষ যখন রঞ্জি ট্রফির ফাইনাল খেলেছিল, তখন ভারতীয় ক্রিকেট দল টেস্ট জয়ের স্বাদই পায়নি। ১৯৫১ সালের মার্চে শেষ এবং একবারই রঞ্জির ফাইনাল খেলেছিল গুজরাট। ফাইনালে হলকারের কাছে হেরে শিরোপাবঞ্চিত হয় তারা। ৬৬ বছর পর এবার দ্বিতীয়বারের মতো ভারতের সর্বোচ্চ প্রথম শ্রেণির প্রতিযোগিতার ফাইনালে ওঠে গুজরাট। ফাইনালে এমনই এক প্রতিপক্ষকে পায়, যারা কিনা রঞ্জির রেকর্ড ৪১ বারের চ্যাম্পিয়ন। ১৯৯০-৯১ মৌসুমের পর থেকে ফাইনালে তাদের কেউ হারাতে পারেনি, তারপর ১১ বার ফাইনালে উঠে প্রতিবারই শিরোপা উৎসব করেছে। এবারও শিরোপার অন্যতম দাবিদার ছিল মুম্বাই-ই। তবে শেষ পর্যন্ত মুম্বাইকে হারিয়ে গুজরাট গড়ল ইতিহাস। নিজেদের প্রথম, সেই সঙ্গে ১৭তম দল হিসেবে জিতল রঞ্জির শিরোপা। আরেকটি কীর্তিও গড়ল গুজরাট। প্রথম দল হিসেবে ভারতের তিনটি বড় ঘরোয়া প্রতিযোগিতার শিরোপা জিতল তারা। ২০১২-১৩ মৌসুমে সৈয়দ মুশতাক আলী ট্রফি ও গত মৌসুমে বিজয় হাজারে ট্রফির পর এবার রঞ্জি ট্রফি। হলকার, দিল্লি, কর্নাটক ও হরিয়ানার পর পঞ্চম দল হিসেবে রঞ্জির ফাইনালে বোম্বে/মুম্বাইকে হারাল গুজরাট। নিজেদের ৪৬ বারের ফাইনালে মুম্বাই হারল পঞ্চমবার। ইন্দোরের হলকার ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ৩১২ রান তাড়ায় গুজরাটকে ভালো সূচনা এনে দেন দুই ওপেনার সামিত গোহেল ও প্রিয়াঙ্ক পাঞ্চল। উদ্বোধনী জুটিতে ৪৭ রানে অবিচ্ছিন্ন থেকে চতুর্থ দিন শেষ করেছিলেন তারা। আজ শেষ দিনে জয়ের জন্য গুজরাটের প্রয়োজন ছিল ২৬৫ রান। তবে দিনের শুরুতে আগের দিনের সঙ্গে আর কোনো রান যোগ না করেই ফেরেন পাঞ্চল (৩৪)। তিনে নামা ভারগভ মেরাইও খানিক বাদেই সাজঘরের পথ ধরেন। দলের স্কোর তখন ২ উইকেটে ৫১। মেরাইয়ের বিদায়ের পরই ক্রিজে আসেন পার্থিব। তবে দলের ৮৯ রানে তাকে একা রেখে ফিরে যান গোহেলও (২১)। এরপরই শুরু পার্থিবের লড়াই। চতুর্থ উইকেটে মানপ্রিত জুনেজার (৫৪) সঙ্গে ১১৬ ও পঞ্চম উইকেটে রাজুল ভাটের সঙ্গে ৯৪ রানের বড় দুটি জুটি গড়ে দলকে জয়ের কাছাকাছি নিয়ে যান পার্থিব। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ২৪তম সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে পার্থিক যখন ফিরছিলেন, তার নামের পাশে জ্বলজ্বল করছে ১৪৩ রানের দুর্দান্ত ইনিংস। জয় থেকে গুজরাট দূরে তখন মাত্র ১৪ রানে। গান্ধীকে (১১*) সঙ্গে নিয়ে বাকি কাজটা সারেন ভাট (২৭)*। টানা দুই চারে জয়সূচক রান আসে গান্ধীর ব্যাট থেকে। ফাইনালের নায়ক পার্থিব হলেও পুরো প্রতিযোগিতায় অসাধারণ খেলেছেন গুজরাটের ওপেনার পাঞ্চল। ২৬ বছর বয়সি ব্যাটসম্যান ১০ ম্যাচে ৮৭.৩৩ গড়ে করেছেন ১৩১০ রান। হাজার রান নেই আর কারও। গুজরাটের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে এক রঞ্জিতে সর্বোচ্চ পাঁচটি সেঞ্চুরির রেকর্ডও গড়েছেন পাঞ্চল। এর মধ্যে দুটি সেঞ্চুরিকে আবার ডাবল ও ট্রিপলে রূপ দিয়েছেন। সেরা ছয় ব্যাটসম্যানের মধ্যে আছেন গুজরাটের আরেক ওপেনার গোহেল। ১০ ম্যাচে ৬০.৯৩ গড়ে তার ব্যাট থেকে এসেছে ৯১৪ রান। তিনি ভেঙেছেন শতবর্ষী পুরোনো একটি রেকর্ড। তৃতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ইতিহাসে ইনিংসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ব্যাট করে ওপেনারের সর্বোচ্চ ইনিংসের রেকর্ড গড়েন গোহেল। ওডিশার বিপক্ষে ইনিংস উদ্বোধন করতে নেমে শেষ পর্যন্ত ৩৫৯ রানে অপরাজিত থাকেন গুজরাট ওপেনার। তিনি ভেঙে দেন ১৮৯৯ সালে সারের হয়ে সমারসেটের বিপক্ষে ইনিংসজুড়ে ব্যাট ‘ক্যারি’ করে ৩৫৭ রান করা ইংলিশ কিংবদন্তি ববি অ্যাবেলের ১১৭ বছরের অক্ষত রেকর্ড। দল চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় পাঞ্চল-গোহেলের অর্জনগুলো আরো রঙিন হলো। সংক্ষিপ্ত স্কোর: মুম্বাই প্রথম ইনিংস: ২২৮ গুজরাট প্রথম ইনিংস: ৩২৮ মুম্বাই দ্বিতীয় ইনিংস: ৪১১ গুজরাট দ্বিতীয় ইনিংস: (লক্ষ্য ৩১২) ৩১৩/৫ (পার্থিব ১৪৩, জুনেজা ৫৪*, পাঞ্চল ৩৪; সান্ধু ২/১০১)। ফল: গুজরাট ৫ উইকেটে জয়ী এবং চ্যাম্পিয়ন। ম্যান অব দ্য ম্যাচ: পার্থিক প্যাটেল। রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৪ জানুয়ারি ২০১৭/পরাগ