খেলাধুলা

কোহলি-যাদবের সেঞ্চুরিতে ভারতের দুর্দান্ত জয়

ক্রীড়া ডেস্ক : লক্ষ্যটা ছিল বেশ কঠিন, ৩৫১ রান। সেই কঠিন লক্ষ্যে খেলতে নেমে ৬৩ রানেই নেই ৪ উইকেট। সেখান থেকে কী দুর্দান্ত ইনিংসই না খেললেন বিরাট কোহলি ও কেদার যাদব। দুজনই করলেন অসাধারণ দুটি সেঞ্চুরি। পঞ্চম উইকেটে এই দুজনের ২০০ রানের জুটিতে পুনেতে আজ প্রথম ওয়ানডেতে ইংল্যান্ডের ৩৫০ রান ভারত টপকে গেল ১১ বল বাকি থাকিতেই। ৩ উইকেটের দুর্দান্ত জয়ে পাঁচ ম্যাচ সিরিজে এগিয়ে গেল ভারত। ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে কোহলির শুরুটাও হলো জয় দিয়ে। এই নিয়ে নিজেদের মাটিতে ওয়ানডেতে তৃতীয়বার ৩৫০ বা এর বেশি রানের লক্ষ্য তাড়া করে জিতল ভারত। এর আগে ২০১৩ সালে জয়পুরে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৩৫১, একই সিরিজে নাগপুরে ৩৬০ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জিতেছিল ভারতীয়রা।    বড় লক্ষ্য তাড়ায় ভারতের শুরুটা অবশ্য মোটেই ভালো হয়নি। শুরুতেই ইংলিশ পেসার ডেভিড উইলির পরপর দুই ওভারে সাজঘরে ফিরে যান দুই ওপেনার শিখর ধাওয়ান ও লোকেশ রাহুল। ভারতের স্কোর তখন ২ উইকেটে ২৪। ২০১৩ সালের পর প্রথমবার ওয়ানডে খেলতে নামা যুবরাজ সিং শুরুটা ভালোই করেছিলেন। বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ছক্কা মেরে খোলেন রানের খাতা। কিন্তু বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। লেগ স্টাম্পের বাইরে বাজে একটি বলে উইকেটকিপারকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন যুবরাজ (১৫)। সীমিত ওভারের অধিনায়কত্ব ছাড়ার পর প্রথম ওয়ানডেতে ব্যাট হাতে নেমে মহেন্দ্র সিং ধোনিও ব্যর্থ। ৬ রান করেই জেইক বলের শর্ট বলে উইলিকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ‘মাহি’। ৬৩ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে তখন ভীষণ বিপদে স্বাগতিকরা। এরপর যাদবকে সঙ্গে নিয়ে শুরু কোহলির লড়াই। দুজন শুরু থেকেই ছিলেন আক্রমণাত্মক। কোহলির চেয়ে যাদবই ছিলেন বেশি আক্রমণাত্মক। কোহলি ৪৪ বলে ফিফটি করার পর যাদব ৫০ ছুঁয়ে ফেলেন মাত্র ২৯ বলে। ফিফটির মতো আগে-পরে সেঞ্চুরিও তুলে নেন কোহলি-যাদব। ৯৯ থেকে ক্রিস ওকসকে লং অনের ওপর দিয়ে আছড়ে ফেলে কোহলি ৯৩ বলে পূর্ণ করেন ক্যারিয়ারের ২৭তম সেঞ্চুরি। এর মধ্যে ১৭টি এলো লক্ষ্য তাড়ায়। কোহলি ভাগ বসালেন ওয়ানডেতে লক্ষ্য তাড়ায় কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকারের সবচেয়ে বেশি ১৭টি সেঞ্চুরির রেকর্ডে। খানিক বাদে ওই ওকসকে চার মেরে ৬৫ বলে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ওয়ানডে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন যাদব। পরের ওভারেই স্টোকসের শর্ট বলে আউট হয়ে ফেরেন কোহলি। ১০৫ বলে ৮ চার ও ৫ ছক্কায় ভারতীয় অধিনায়ক খেলেন ১২২ রানের দুর্দান্ত ইনিংস। তখন জয়ের জন্য ভারতের চাই ৮২ বলে ৮৮ রান। কোহলি ফিরলেও যাদব তাণ্ডব অব্যাহত রেখে রানে ব্যবধান কমিয়ে আনেন। ৪০তম ওভারে অবশ্য বলের বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে স্টোকসকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন যাদব। ৭৬ বলে ১২ চার ও ৪ ছক্কায় ১২০ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলেন ৩১ বছর বয়সি ব্যাটসম্যান। শেষ ১০ ওভারে ৪ উইকেট হাতে নিয়ে ভারতের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ৬০ রান। তবে সপ্তম উইকেটে রবীন্দ্র জাদেজার সঙ্গে ২৭ ও অষ্টম উইকেটে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের সঙ্গে ৩৮ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ১১ বল বাকি থাকতেই দলের জয় নিশ্চিত করেন হার্দিক পান্ডিয়া। ৩৭ বলে ৩ চার ও এক ছক্কায় ৪০ রানে অপরাজিত থাকেন পান্ডিয়া। ১০ বলে ১৫ রানে অপরাজিত ছিলেন অশ্বিন। এর আগে টস জিতে ইংল্যান্ডকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছিলেন কোহলি। অ্যালেক্স হেলসকে সঙ্গে নিয়ে ইনিংস উদ্বোধন করতে নেমে ইংলিশদের উড়ন্ত সূচনা এনে দেন জেসন রয়। তবে উদ্বোধনী জুটি বেশিক্ষণ টেকেনি। জাসপ্রিত বুমরাহর থ্রোয়ে হেলস রানআউটে কাটা পড়লে ভাঙে ৩৯ রানের জুটি। এরপর তৃতীয় উইকেটে ৬৯ রানের জুটি গড়েন রয় ও জো রুট। রয় ৬১ বলে ৭৩ করে জাদেজার বলে ধোনির হাতে স্টাম্পড হলে ভাঙে এ জুটি। এরপর অধিনায়ক এউইন মরগান (২৮) ও জস বাটলার ভালো শুরু করলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি। দলের ২৪৪ রানে পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে ফেরার আগে রুট করেন ৭৮ রান। ইংল্যান্ড সাড়ে তিন শ’ রানের পুঁজি পায় মূলত স্টোকসের ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে। ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়ার আগে ৪০ বলে ৩ চার ও এক ছক্কায় বাঁহাতি ব্যাটসম্যান করেন ৬২। তাতে ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ইংল্যান্ড পায় ৩৫০ রানের বড় সংগ্রহ। কিন্তু অসাধারণ ব্যাটিংয়ে সেটিকেই মামুলি বানিয়ে ফেললেন কোহলি আর যাদব। রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৫ জানুয়ারি ২০১৭/পরাগ