খেলাধুলা

নারী ক্রিকেটে দলীয় সর্বনিম্ন রানের ১০ ইনিংস (প্রথম পর্ব)

রুহুল আমিন : পুরুষদের মতো নারী ক্রিকেটের খোঁজ খবর আমরা তেমন একটা রাখি না।পুরুষদের মতো নারী ক্রিকেটেও এই পর্যন্ত অনেক রেকর্ড হয়েছে। কিছু রেকর্ড গৌরবের, কিছু লজ্জার। রেকর্ড হচ্ছে, রেকর্ড ভাঙছে। যতদিন ক্রিকেট খেলা থাকবে ততদিন রেকর্ডের এই ভাঙা-গড়া চলবে। বিশ্ব নারী ক্রিকেটে অনেক রেকর্ডের মধ্যে ওয়ানডেতে দলীয় সর্বিনিম্ন রানের ১০ ইনিংস নিয়ে, দুই পর্বের প্রতিবেদনের আজ থাকছে প্রথম পর্ব : ১. নেদারল্যান্ডস ২২ রান : ওয়েস্ট ইন্ডিজ নারী ক্রিকেট দলের সঙ্গে চার ম্যাচ সিরিজের শেষ ম্যাচ ছিল এটি। ২০০৮ সালের ৯ জুলাই নেদারল্যান্ডেসের স্পোর্টপার্ক হেট স্কুটসভেল্ড মাঠে অনুষ্ঠিত হয় এ ম্যাচ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ টসে জিতে নেদারল্যান্ডসকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানায়। নেদারল্যান্ডস ব্যাট করতে নেমে ২৩ ওভার ৪ বলে সবকটি উইকেট হারিয়ে মাত্র ২২ রানে অলআউট হয়ে যায়। দলের কোনো ব্যাটসম্যানই দুই অঙ্কের কোটায় পৌঁছাতে পারেননি। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫ রান করেন অধিনায়ক রামবালডো। দলের অন্য ব্যাটসম্যানদের রানের সংখ্যাগুলো ছিল ১, ৩, ৩, ১, ১, ০, ১, ০, ০ ও ১। দলের সর্বোচ্চ ৬ রান আসে অতিরিক্ত খাত থেকে। রান তোলার গড় ছিল ওভার প্রতি দশমিক ৯২। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে সেলমান ১০ ওভার বল করে ৫ মেডেনসহ ১১ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন। এ ছাড়া আলেকজান্দ্রা ১০ ওভার বল করে ৬ মেডেনসহ ৬ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন। পরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৪ ওভার ব্যাট করে ১ উইকেট হারিয়ে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যায়। ২. পাকিস্তান ২৩ রান : ১৯৯৭ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি মেলবোর্ন ওয়েসলি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হয়েছিল পাকিস্তান। টস জিতে অস্ট্রেলিয়া ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারের ৪ উইকেট হারিয়ে ৩৯৭ রানের পাহাড় গড়ে। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ কেইটলি (Keightley) ১৫৬ রান করে অপরাজিত থাকেন। এ ছাড়া ক্লার্ক ১৩১ ও  গোস (Goss) ৯৪ রান করেন। পাকিস্তানের পক্ষে শারমিন খান, সাইজা খান, সুলতানা ইউসুফ ও আয়শা জলিল একটি করে উইকেট পান। পাকিস্তান ৩৯৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ২৪ ওভার ১ বল খেলে মাত্র ২৩ রানে গুটিয়ে যায়। ফলে অস্ট্রেলিয়া ৩৭৪ রানের বিশাল ব্যবধানে ম্যাচটি জেতে। এই ম্যাচে পাকিস্তানের কোনো ব্যাটসম্যানই দুই অঙ্কের রান করতে পারেননি। সর্বোচ্চ ৬ রান করেন শাবানা কাউছার। অন্য ব্যাটসম্যানদের রান সংখ্যাগুলো হলো ৫, ০, ০, ৫, ০, ৪, ০, ১ ও ০। তাদের রান তোলার গড় ছিল দশমিক ৯৫। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে ম্যাগনো ৫ ওভার বল করে ১১ রান দিয়ে ৪ উইকেট পান। এ ছাড়া ব্রোডবেন্ট ৫ ওভার বল করে ৩ মেডেনসহ ৩ রান দিয়ে ২ উইকেট পান। বলে রাখা ভালো, পাকিস্তান এই ম্যাচে ১০ জন খেলোয়াড় নিয়ে খেলেছিল। ৩. স্কটল্যান্ড ২৪ : ২০০১ সালের ১০ আগস্ট ওমেন্স ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশীপের প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হয় স্কটল্যান্ড। ইংল্যান্ডের রিডিং ব্রাডফিল্ড কলেজ মাঠে ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়। এই ম্যাচে স্কটল্যান্ড টসে জিতে ইংল্যান্ডকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানায়। ইংল্যান্ড ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৬২ রান করেন। ইংল্যান্ডের পক্ষে সর্বোচ্চ অপরাজিত ৬৬ রান করেন সারাহ লুইস ক্লার্ক। এ ছাড়া লরা  হার্পার ৪১  ও স্প্রাগ ৩৩ রান করেন। স্কটল্যান্ডের পক্ষে লিন্ডা স্পেন্স ও সারা ম্যাকলিয়েন দুটি করে উইকেট পান। বিরতির পর স্কটল্যান্ড ২৬৩ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ২১ ওভার ৩ বলে সবকটি উইকেট হারিয়ে মাত্র ২৪ রানে অলআউট হয়ে যায়। ফলে ইংল্যান্ড ২৩৮ রানে ম্যাচ জিতে নেয়। স্কটল্যান্ডের পক্ষে সারা ম্যাকলিয়েন সর্বোচ্চ ৮ রান করেন। দলের পক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭ রান আসে অতিরিক্ত খাত থেকে। ইংল্যান্ড দলের অন্য ব্যাটসম্যানদের রানের সংখ্যাগুলো হলো ২, ০, ২, ০, ৫, ০, ০, ০, ০ ও ০। এই ম্যাচে সর্বোচ্চ ৭ জন ব্যাটসম্যান ডাক মারেন। স্কটল্যান্ডের রান তোলার গড় ১ দশমিক ১১। ইংল্যান্ডের পক্ষে লরা হার্পার ৫ ওভার ৩ বল করে ২ মেডেনসহ ৪ উইকেট নেন।   ৪. ভারত ২৬ রান : ২০০২ সালের ১০ জুলাইয়ে ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড ও ভারতের মধ্যকার ত্রিদেশীয় সিরিজ শুরু হয়। ১১ জুলাই সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হয় ভারত। নিরপেক্ষ ভেন্যু সেন্ট স্যাভয়ের গ্রেইনভিল ক্রিকেট গ্রাউন্ডে ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়। ভারত টসে জিতে নিউজিল্যান্ডকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানায়। নিউজিল্যান্ড নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৬৮ রান তুলতে সক্ষম হয়। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫৬ রান করেন অধিনায়ক এমিলি ড্রাম।  এ ছাড়া হাইডি টিফেন করেন ৩৭ রান। ভারতের পক্ষে দীপা কুলকার্নি ১০ ওভার বল করে ৩৭ রান দিয়ে ৪টি ও ঝুলান গোস্বামী ১০ ওভারে ৪৫ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন। বিরতির পর ভারত ১৬৯ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামে।  পরে ১৯ ওভার ১ বল খেলে ২৬ রান করে তাদের ইনিংস গুটিয়ে যায়। নিউজিল্যান্ড ১৪২ রানে ম্যাচ জিতে নেয়। এই ম্যাচে ভারতের কোনো ব্যাটসম্যানই দুই অঙ্কের রান করতে পারেননি। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৬ রান করে অপরাজিত থাকেন ঝুলান গোস্বামী। আর অতিরিক্ত খাত থেকেও ৬ রান আসে। ভারতীয় অন্য ব্যাটসম্যানদের রানের সংখ্যাগুলো হলো ২, ১, ০, ১, ০, ১, ০, ০, ৫ ও ৪। ভারতের রান তোলার গড় ছিল ১ দশমিক ৩৫। অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের মধ্যে রাচেল পুলার (Rachel Pullar) ৭ ওভার বল করে ৪ মেডেনসহ ১০ রান দিয়ে ৫ উইকেট নেন। তিনি একাই ধসিয়ে দেন ভারতের ব্যাটিং লাইনআপ। ৫. পাকিস্তান ২৭ রান : ম্যাচটি ছিল ১৯৯৭ সালে বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের ম্যাচ। হিরো হোন্ডা ওমেন্স বিশ্বকাপের এই ম্যাচে হায়দরাবাদের লাল বাহাদুর শাস্ত্রী স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হয় পাকিস্তান। টসে জিতে পাকিস্তান ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। ব্যাট করতে নেমে ১৩ ওভার ৪ বলে সবকটি উইকেট হারিয়ে মাত্র ২৭ রান করে পাকিস্তান। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ রান করেন নিচের দিকে ব্যাট করতে নামা কিরন আহতাজাজ। তিনি ১২ বল খেলে দুই চারের বিনিময়ে ১১ রান করে অপরাজিত থাকেন। দলের আর কোনো ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কের রান করতে পারেননি। বাকি ব্যাটসম্যানদের রানের সংখ্যাগুলো হলো ০, ১, ০, ০, ১, ৪, ২, ০, ০ ও ০। দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৮ রান আসে অতিরিক্ত খাত থেকে। পাকিস্তান দল ওভার প্রতি রান তুলে ১ দশমিক ৯৭ গড়ে। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে ম্যাগনো ১ ওভার ৪ বল করে কোনো রান না দিয়ে ৩ উইকেট নেন। পরে অস্ট্রেলিয়া ব্যাট করতে নেমে ৬ ওভার ১ বল খেলে মাত্র ১ উইকেট হারিয়ে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যায়। রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩০ জানুয়ারি ২০১৭/রুহুল/আমিনুল