খেলাধুলা

‘এমন নাঈমকে আগে দেখেনি কেউ’

ক্রীড়া প্রতিবেদক, সিলেট থেকে : ৯৬ বলে ৫০ রান, পরের ৫০ রান ১২২ বলে! নাঈম ইসলাম পৌঁছে গেলেন তিন অঙ্কের ম্যাজিক্যাল ফিগারে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ক্যারিয়ারে নাঈমের ২১তম সেঞ্চুরি। বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ইতিহাসে যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ১ সেঞ্চুরি বেশি নিয়ে শীর্ষে তুষার ইমরান। ওয়ালটন সেন্ট্রাল জোনের অধিনায়ক মোশাররফ হোসেন রুবেলের বল অন সাইডে ঠেলে ১ রান নিয়ে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন নাঈম। ডাগআউটে থাকা নাঈমের দলের কোচ জাফরুল এহসান দাঁড়িয়ে শিষ্যকে অভিবাদন জানালেন। দীর্ঘক্ষণ তালি দিলেন নাঈমের কোচ। সচরাচর এমনটা দেখা যায় না জাফরুল এহসানকে। হঠাৎ শিষ্যের ব্যাটিং দেখে গুরু এতটা আপ্লুত কেন? উত্তর জানতে চাওয়া হলো দ্বিতীয় দিনের খেলার পর। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে পড়ন্ত বিকেলে জাফরুল এহসান রাইজিংবিডিকে বললেন, ‘কেন ওর জন্য আপ্লুত হব না? কী অসাধারণ ইনিংসটি খেলল ও। পাঁচ ম্যাচে চারটি সেঞ্চুরি। কল্পনা করা যায় কতটা মানসিকভাবে শক্ত ও।’ শিষ্যকে নিয়ে গুরু প্রশংসা করতেই পারেন, কিন্তু স্বল্পভাষী জাফরুল এহসান একটুও বাড়িয়ে বলেননি। নজর কেড়ে নেবার মতোই ব্যাট চালাচ্ছেন ‘ছক্কা নাঈম’ খ্যাত নাঈম ইসলাম। ম্যারাথন ইনিংস খেললেও বাজে বল কড়া শাসন করেছেন নাঈম। শাহাদাত হোসেন রাজীবের বল হুক করে বাউন্ডারিতে পাঠিয়েছেন, মোশাররফের বল এগিয়ে এসে লং অনের ওপর দিয়ে ছক্কা মেরেছেন। আবার শরীফের বলে অন ড্রাইভ ও অফ ড্রাইভ করে পেয়েছেন বাউন্ডারির স্বাদ। শুধু বাউন্ডারিতে নজর কাড়েননি নাঈম। ফিটনেসেও যথেষ্ট প্রমাণ রেখেছেন। দীর্ঘক্ষণ উইকেটে টিকে থাকা, ডাবলস রান নেওয়া থেকে শুরু করে ম্যাচের শেষ পর্যন্ত টিকে থাকার দৃঢ় মনোভাব বড় সাফল্য পেতে নাঈমকে এগিয়ে নিচ্ছে। কোচ আবারও বললেন, ‘ও মানসিকভাবে প্রচুর শক্ত হয়েছে। খুব কাছে থেকে ওকে আমরা দেখছি। অন ফিল্ড ও অফ ফিল্ড দুটোই দারুণভাবে কাজে লাগাচ্ছে। এমন নাঈমকে আগে কেউ দেখেনি। এটা একটা ক্রিকেটারের সেরা গুণ।’ বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগে (বিসিএল) এখন পর্যন্ত ৪টি সেঞ্চুরি পেয়েছেন নাঈম। আজকের সেঞ্চুরিকে আলাদা করে মূল্যায়ন করলেও গত রাউন্ডে বিকেএসপিতে প্রাইম ব্যাংকের বিপক্ষে হাঁকানো সেঞ্চুরিটিকে সেরা বলছেন কোচ, ‘শেষ রাউন্ডে ওর সেঞ্চুরিতে আমরা ম্যাচটি ড্র করি। পাঁচ সেশন পুরো একা ব্যাটিং করেছে। একবার ভেবে দেখুন কাজটা কতটা কঠিন। উইকেট যেমনই হোক কিংবা বল যেমনই হোক। উইকেটে টিকে থাকতে হবে সেটা ভেবে কাজ করা কঠিন। ও শুধু ম্যাচটি ড্র করেনি, ওই ম্যাচ প্রাইম ব্যাংক কোনোভাবে জিতে গেলে টুর্নামেন্টের রোমাঞ্চ শেষ হয়ে যেত। ওরা পয়েন্ট তালিকায় অনেক এগিয়ে যেত। বলতে পারেন ওর কারণেই এখনো টুর্নামেন্টের রোমাঞ্চ টিকে আছে।’ শেষ দিকে শিষ্যের হয়ে গুরু একটু ব্যাটিংও করলেন, ‘এখনই সেরা সময় ওর দিকে নির্বাচকদের একটু নজর দেওয়ার। আমি বলছি না এখনই ওকে জাতীয় দলে খেলানো হোক। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে ওকে দেখছি। মানসিকভাবে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। ভালো কিছু দেওয়ার সেরা সময় হতে পারে এখন।’ ২৭৫ বলে ১৯ চার ও ১ ছক্কায় ১৩৩ রানে অপরাজিত আছেন নাঈম। দেখা যাক আগামীকাল নিজের ইনিংসটিকে কোথায় নিয়ে যান ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। রাইজিংবিডি/সিলেট/২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/ইয়াসিন/পরাগ