খেলাধুলা

৩০তম জন্মদিনে মেসির সেরা ৩০ মুহূর্ত-অর্জন

আবু হোসেন পরাগ : কেউ বলে ফুটবলের জাদুকর, আবার কেউ বলে ভিনগ্রহের খেলোয়াড়। পায়ের জাদুতে পুরো ফুটবল বিশ্বকেই মাতিয়ে রাখা সেই লিওনেল মেসির আজ জন্মদিন। বার্সেলোনার আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড ৩০ বছর পূর্ণ করলেন। শুভ জন্মদিন লিওনেল আন্দ্রেস মেসি। মেসির জন্ম ১৯৮৭ সালের ২৪ জুন আর্জেন্টিনার রোজারিওতে। ২০০০ সালে চলে আসেন বার্সেলোনায়। যুব দল পেরিয়ে ২০০৪ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে নাম লেখান বার্সেলোনার সিনিয়র দলে। তারপর থেকেই পুরো ফুটবল বিশ্বকেই মাতিয়ে রেখেছেন বার্সার আর্জেন্টাইন তারকা। ৩০তম জন্মদিনে মেসির বর্ণিল ফুটবল ক্যারিয়ারের ৩০ সেরা মুহূর্ত ও অর্জন দেখে নেওয়া যাক এক নজরে : ১) মেসি বার্সেলোনার হয়ে তার প্রথম গোলটা করেন মাঠে নামার মাত্র দুই মিনিট পরই। ২০০৫ সালে মে মাসে লা লিগায় আলবাকেতের বিপক্ষে মেসির সেই গোলে সহায়তা করেছিলেন রোনালদিনহো। ব্রাজিলিয়ান গ্রেট আলবাকেতের দুই খেলোয়াড়ের মাথার ওপর দিয়ে দারুণ এক পাস দিয়েছিলেন মেসিকে। বল পেয়ে বাঁ পায়ের শটে প্রতিপক্ষ গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন ১৭ বছরের মেসি। ২) সর্বকালের সেরা গোলগুলোর একটা তালিকা করলে ২০০৭ সালের এপ্রিলে কোপা ডেল রেতে গেটাফের বিপক্ষে ম্যাচে মেসির প্রথম গোলটা নিঃসন্দেহে তালিকার সেরা তিনে থাকবে! যে গোলটাকে ডাকা হয় ‘মেসিলোনা’ নামেও! মেসি বল পেয়েছিলেন মাঝ মাঠে। সেখান থেকে একে একে গেটাফের চার খেলোয়াড়কে কাটিয়ে বক্সে ঢুকে পড়েন। বক্সে ঢুকে গেটাফের গোলরক্ষককেও কাটিয়ে অনন্য-অসাধারণ এক গোল করেন বার্সা ফরোয়ার্ড। ওই গোলটিকে ১৯৮৬ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আর্জেন্টাইন কিংবদন্দি ম্যারাডোনার গোলটির সঙ্গেও তুলনা করা হয়।

 

৩) মেসি বার্সার হয়ে প্রথম হ্যাটট্রিক করেন ২০০৭ সালের মার্চে। কার বিপক্ষে জানেন? বার্সেলোনার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদ! অর্ধেকের বেশি সময় ১০ জন নিয়ে খেলা ম্যাচটা ৩-৩ গোলে ড্র করেছিল বার্সা। ৪) চ্যাম্পিয়নস লিগ ম্যাচে মেসির সেরা পারফরম্যান্স কোনটা? তালিকার প্রথমে থাকতে পারে ২০১০ চ্যাম্পিয়নস লিগে আর্সেনালের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালের দ্বিতীয় লেগের ম্যাচটা। প্রথম লেগে আর্সেনালে মাঠ থেকে ২-২ গোলে ড্র করে ফিরেছিল বার্সা। ফিরতি লেগে ন্যু ক্যাম্পে বার্সা সমর্থকদের  হতাশায় ডুবিয়ে এগিয়ে যায় আর্সেনাল। এরপর? প্রথমার্ধেই মেসি পূরণ করলেন হ্যাটট্রিক। শেষ দিকে আরো এক গোল। বার্সার ৪-১ ব্যবধানে জয়ের ম্যাচে সবগুলো গোলই মেসির! ৫) ২০০৬ চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালের দলে জায়গা পাননি ১৮ বছরের তরুণ মেসি। ২০০৯ সালে তিনি প্রথমবার খেলেন চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনাল, জেতেন প্রথম শিরোপাও। রোমের ফাইনালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে বার্সার ২-০ গোলে জয়ের ম্যাচে দ্বিতীয় গোলটা ছিল মেসির। ৬) ২০০৯ চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের পরের মৌসুমে শিরোপা ধরে রাখতে পারেনি বার্সেলোনা। ২০১১ চ্যাম্পিয়নস লিগে শিরোপা পুনরুদ্ধারের মিশনে নেমে সেমিফাইনালে বার্সার সামনে পড়ে রিয়াল মাদ্রিদ। সেমির প্রথম লেগে মেসির জোড়া গোলে সান্তিয়াগো বার্নাব্যু থেকে ২-০ গোলের দারুণ জয় নিয়ে ফেরে বার্সা। পরে ওয়েম্বলির ফাইনালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষেও গোল করেন মেসি। ৩-১ গোলের জয়ে শিরোপা পুনরুদ্ধার করা বার্সা। ৭) ২০১১ সালের ডিসেম্বরে ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনালে ব্রাজিলের ক্লাব সান্তোসের মুখোমুখি হয়েছিল বার্সা। জাপানের ইয়োকোহামার নিশান স্টেডিয়ামে সান্তোসকে ৪লেন টুর্নামেন্টসেরার পুরস্কারও। মেসির প্রতিপক্ষ দলে ছিলেন কে জানেন? এখন যার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একই ক্লাবে খেলেন সেই নেইমার!

 

৮) ২০১৪ সালের মার্চে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে খেলতে গিয়েছিল বার্সেলোনা। মেসির হ্যাটট্রিকে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে ৪-৩ গোলের রুদ্ধশ্বাস জয় পেয়েছিল কাতালানরা। আর এই ম্যাচেই ‘এল ক্লাসিকো’তে আলফ্রেডো ডি স্টেফানোর সর্বোচ্চ গোলের (১৮) রেকর্ড ভেঙে দিয়েছিলেন মেসি। ওইদিন মেসির দুটি গোল ছিল পেনাল্টি থেকে, আর দুটিই ছিল দুর্দান্ত। ৯) ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনালে আর্জেন্টিনার ক্লাব স্টুডিয়ানেটসের মুখোমুখি হয়েছিল বার্সেলোনা। আবুধাবিতে অনুষ্ঠিত সে ম্যাচের ৩৭ মিনিটে ১-০ পিছিয়ে পড়েছিল বার্সা। তবে নির্ধারিত সময়ের খেলা শেষ হওয়ার মাত্র এক মিনিট আগে পেদ্রোর গোলে সমতা ফেরায় তারা। এরপর খেলা গড়ায় অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে। আর অতিরিক্ত সময়ে হেডে দারুণ এক গোল করে বার্সাকে শিরোপা এনে দিয়েছিলেন মেসি। ১০) ইউরোপের ১৬টি ভিন্ন দেশের ২৩টি শহরে গোল করেছেন মেসি। ১১) মেসিই একমাত্র খেলোয়াড় যিনি টানা আট মৌসুমে ক্লাবের হয়ে ৪০ প্লাস গোল করেছেন। ১২) মেসি ৩০০ ক্লাব গোলের মাইলফলক স্পর্শ করেন ৩৩৪ ম্যাচে। যেটি যেকোনো খেলোয়াড়ের সবচেয়ে দ্রুততম। ১৩) লা লিগার সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা মেসি (৩৪৯ গোল)। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর (২৮৫) চেয়ে ৬৪ গোল এগিয়ে আছেন বার্সা ফরোয়ার্ড। ১৪) বার্সেলোনার সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতাও মেসি, সব প্রতিযোগিতা  মিলিয়ে ৫০৭ গোল। ১৫) চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে এক ম্যাচে পাঁচ গোল করা প্রথম খেলোয়াড় মেসি, ২০১২ সালে বায়ের লেভারকুসেনের বিপক্ষে।

 

১৬) রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনার দ্বৈরথ এল ক্লাসিকোতে সর্বোচ্চ গোল মেসির (২৩ গোল)। ১৭) মেসি সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে বার্সেলোনার হয়ে খেলেছেন ৫৮৩ ম্যাচ, যেটি কাতালান ক্লাবটির ইতিহাসে স্পেনের বাইরের খেলোয়াড়দের মধ্যে সর্বোচ্চ। ১৮) চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে বার্সেলোনার হয়ে মেসির গোল ৯৪টি। এই প্রতিযোগিতায় এক ক্লাবের হয়ে আর কোনো খেলোয়াড় এত গোল করতে পারেনি। ১৯)  ২০১১-১২ মৌসুমের লা লিগায় ৫০ গোল করেছিলেন মেসি। যেটি এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড। ২০) এখন পর্যন্ত রেকর্ড পাঁচবার বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কার জিতেছেন মেসি। ২১) লা লিগার ইতিহাসে টানা ২১ ম্যাচে গোল করার রেকর্ডও মেসির। এই সময়ে মেসি গোল করেন ৩৩টি। ২২) ২০১২ সালে মেসি গোল করেন ৯১টি। যেটি এক পঞ্জিকাবর্ষে সর্বোচ্চ। তিনি ভেঙে দেন গার্ড মুলারের রেকর্ড। ২৩) মেসি বার্সেলোনার হয়ে মোট ৪১৩ ম্যাচ জিতেছেন। ড্র করেছেন ১০৩ ম্যাচ, হেরেছেন ৬৭টি।

 

২৪) ৮টি লা লিগা ও ৪টি চ্যাম্পিয়নস লিগসহ বার্সেলোনার হয়ে মোট ৩০টি ট্রফি জিতেছেন মেসি। ২৫) মেসির ক্যারিয়ার হ্যাটট্রিক ৪০টি, বার্সার হয়ে ৩৬টি, আর্জেন্টিনার জার্সিতে ৪টি। ২৬) দেশের হয়ে বিশ্বকাপ জিততে না পারলেও অর্জন খুব কম নয় মেসির। ২০০৫ অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন মেসি। নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে শিরোপা জেতে আর্জেন্টিনা। ফাইনালে পেনাল্টি থেকে দুটি গোলসহ নকআউট পর্বের প্রতিটা ম্যাচেই গোল করেন মেসি। ২৭) আর্জেন্টিনার হয়ে ১১৮ ম্যাচ খেলেছেন মেসি। তার চেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছেন কেবল হাভিয়ের মাশচেরানো (১৩৬) ও হাভিয়ের জেনেত্তি (১৪৩)। ২৮) আর্জেন্টিনার সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা মেসি (৫৮ গোল)। ২৯) আর্জেন্টিনার হয়ে মেসির বড় সাফল্য ২০০৮ অলিম্পিক গেমসে সোনা জয়। ৩০)  শুধু মাঠে নয়, মেসির মাঠের বাইরের গল্পটাও অনিন্দ্য সুন্দর। ৩০তম জন্মদিনের সপ্তাহেই শৈশবের বান্ধবী আন্তোনেল্লা রোকুজ্জোকে বিয়ে করতে যাচ্ছেন আর্জেন্টাইন তারকা। দুজনের ঘরে আছে দুই সন্তান থিয়াগো ও মাতেও। তথ্যসূত্র : মেইল অনলাইন, ফোর ফোর টু। রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ জুন ২০১৭/পরাগ