খেলাধুলা

প্রস্তুতি ম্যাচেও বিবর্ণ বাংলাদেশ

ক্রীড়া প্রতিবেদক : দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যান-বোলারদের পারফরম্যান্স ছিল একদম বিবর্ণ। ওয়ানডে সিরিজের আগে একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচেও সেটির কোনো বদল নেই। ক্রিকেট দক্ষিণ আফ্রিকা আমন্ত্রিত একাদশের কাছে বাংলাদেশ হেরেছে ৬ উইকেটে। ব্লুমফন্টেইনে বৃহস্পতিবার আগে ব্যাট করতে নেমে পুরো ৫০ ওভারও ব্যাটিং করতে পারেনি বাংলাদেশ। ১১ বল বাকি থাকতে অলআউট হয় ২৫৫ রানে। তাও সেটা সাকিব আল হাসান ছিলেন বলে। টেস্ট সিরিজে তিনি বিশ্রামে ছিলেন। খেলবেন রঙিন পোশাকের ক্রিকেটে। দলের মান বাঁচিয়েছেন সাকিবই। ইনিংস সর্বোচ্চ ৬৮ রান আসে তার ব্যাট থেকেই। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫২ রান করেন সাব্বির রহমান। পঞ্চাশ ছুঁতে পারেননি আর কেউই! ব্যাটিংয়ের মতো বাংলাদেশের বোলিংয়ের শুরুটাও ভালো হয়নি মোটেই। স্বাগতিকদের উদ্বোধনী জুটি ভাঙতেই বাংলাদেশের লেগেছে ২৫.৫ ওভার! অভিষেকে টেস্ট সিরিজের দুর্দান্ত ফর্মটা প্রস্তুতি ম্যাচেও টেনে এনেছেন এইডেন মার্করাম। ম্যাথু ব্রেটজেকের সঙ্গে মার্করামের ১৪৭ রানের উদ্বোধনী জুটিই ম্যাচের ফল নির্ধারণ করে দেয়। ৬৮ বলে ৮২ রান করা মার্করামকে নিজের ফিরতি ক্যাচ বানিয়ে জুটি ভাঙেন নাসির হোসেন। এরপর দ্রুত ব্রেটজেককে (৭১) বোল্ড করে দিয়েছিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। কিন্তু দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান জেপি ডুমিনি ও এবি ডি ভিলিয়ার্স দলকে জয়ের দিকে নিয়ে যান সহজেই। তৃতীয় উইকেটে দুজন গড়েন ৬২ রানের জুটি। ডুমিনিকে (৩৪) ফিরিয়ে এ জুটি ভাঙার পর ডি ভিলিয়ার্সকেও (৪৩) ফিরিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। ইনিংসের সফল বোলারও মাহমুদউল্লাহই। ৪ ওভারে ১৩ রান দিয়ে তিনি উইকেট ২টি নিয়েছেন। মাশরাফি ৯ ওভারে ৪৭ রান দিয়ে নিয়েছেন ১ উইকেট। নাসির ৯ ওভারে ১ উইকেট নিতে রান দিয়েছেন ৫২। মুস্তাফিজ ৭ ওভারে দিয়েছেন ৪৩ রান। সাকিব ৫ ওভারে ৩০, সাইফউদ্দিন ৪.৩ ওভারে ২৭ ও রুবেল ৮ ওভারে দিয়েছেন ৪১ রান। দুই টেস্টেই টস জিতে বোলিং নিয়েছিলেন মুশফিকুর রহিম। এ নিয়ে সমালোচনাও কম হয়নি। প্রস্তুতি ম্যাচে ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি অবশ্য ভুল করেননি, টস জিতে ব্যাটিংই বেছে নিয়েছেন। কিন্তু আবার ব্যর্থ বাংলাদেশের টপ অর্ডার। দ্বিতীয় টেস্টে ব্যর্থ সৌম্য সরকার হতাশ করেছেন প্রস্তুতি ম্যাচেও। বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ১৩ বলে করেছেন ৩ রান। তামিম ইকবাল প্রস্ততি ম্যাচে খেলবেন না, এটা জানা গিয়েছিল আগেই। তার জায়গায় খেলা আরেক ওপেনার ইমরুল কায়েস শুরুটা করেছিলেন ভালোই। কিন্তু ইনিংস বড় করতে পারেননি। ৩১ বলে ৬ চারে করেছেন ২৭। অষ্টম ওভারে রবি ফ্রাইলিংকের পরপর দুই বলে ফিরেছেন সৌম্য-ইমরুল। বাংলাদেশের সংগ্রহ তখন ২ উইকেটে ৩১! জোড়া ধাক্কার পর দলকে কিছুটা টেনে নিয়েছিলেন লিটন দাস ও মুশফিকুর রহিম। কিন্তু দলের স্কোর পঞ্চাশ পার হওয়ার পর আবার জোড়া ধাক্কা। পরপর দুই ওভারে ফিরে যান লিটন (৮) ও মুশফিক (২২)। ৬৩ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে তখন ভীষণ চাপে দল। এরপর মাহমুদউল্লাহকে সঙ্গে নিয়ে দলের হাল ধরেন সাকিব। একশর আগে আর কোনো উইকেট পড়তে দেননি দুজন। দলের ১২০ রানে মাহমুদউল্লাহ এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন ব্যক্তিগত ২১ রানে। এরপরই ইনিংস সর্বোচ্চ ৭৬ রানের জুটিটা এসেছে সাকিব ও সাব্বিরের ব্যাটে। দুজন যেভাবে খেলছিলেন তাতে এক সময় তিনশ দূরের পথ বলেও মনে হচ্ছিল না। কিন্তু সাকিবের বিদায়ে এ জুটি ভাঙার পরই আবার পথ হারায় বাংলাদেশ। ৫৯ রানে শেষ ৫ উইকেট হারিয়ে ৪৮.১ ওভারেই অলআউট হয়ে যায় সফরকারীরা। দলে ফেরা নাসির ২৩ বলে করেন ১২। অধিনায়ক মাশরাফি ১৩ বলে একটি করে চার ও ছক্কায় ১৭ না করলে বাংলাদেশের আড়াইশও হতো কি না সন্দেহে! পেস অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ১৩ রানে অপরাজিত ছিলেন। সাকিব ৬৭ বলে ৯ চারে ৬৮ রানের ইনিংসটা সাজান। আর সাব্বিরের ৫৪ বলে ৫২ রানের ইনিংসে ২টি চারের সঙ্গে ছিল ৩টি ছক্কার মার। দক্ষিণ আফ্রিকা আমন্ত্রিত একাদশের হয়ে চারজন বোলার নেন ২টি করে উইকেট। ওয়ানডে সিরিজের আগে এটি ছিল বাংলাদেশের জন্য আত্মবিশ্বাস ঠিক করে নেওয়ার ম্যাচ। টেস্ট সিরিজে যেটি অনেকটাই নড়বড়ে হয়ে গেছে। কিন্তু বিবর্ণ পারফরম্যান্সে নড়বড়ে আত্মবিশ্বাসটা কতটা ঠিক করা গেল! আগামী রোববার কিম্বার্লিতে প্রথম ওয়ানডে। সংক্ষিপ্ত স্কোর: বাংলাদেশ: ৪৮.১ ওভারে ২৫৫ (সৌম্য  ৩, ইমরুল ২৭, লিটন ৮, মুশফিক ২২, মাহমুদউল্লাহ  ২১, সাকিব ৬৮, সাব্বির রহমান ৫২, নাসির হোসেন ১২, মাশরাফি ১৭, সাইফউদ্দিন ১৩, মুস্তাফিজ ০)

দক্ষিণ আফ্রিকা একাদশ: ৪৬.৩ ওভারে ২৫৭/৪ (মার্করাম ৮২, ব্রিটজেক ৭১, ডুমিনির ৩৪, ডি ভিলিয়ার্স ৪৩; মাহমুদউল্লাহ ২/১৩, মাশরাফি ১/৪৭, নাসির ১/৫২)।

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১২ অক্টোবর ২০১৭/পরাগ