খেলাধুলা

‘আমি সব সময় বড় স্বপ্ন দেখি’

ক্রীড়া প্রতিবেদক: ‘আমি সব সময় বড় স্বপ্ন দেখি’-বলছিলেন এনামুল হক বিজয়। এজন্যই কি বড় চুল… ‘না না বড় চুল আম্মুর ইচ্ছায়।’-আবার বললেন বিজয়। জাতীয় দলে প্রায় তিন বছর পর প্রবেশ করলেন এনামুল হক বিজয়। ত্রিদেশীয় সিরিজের জন্য দলে সুযোগ পাওয়া তার জন্য ছিল অনেকটাই প্রত্যাশিত। ঘরোয়া ক্রিকেটে শেষ দুই বছরে দারুণ ছন্দে ছিলেন এনামুল। এবার জাতীয় লিগে দুটি ডাবল সেঞ্চুরিতে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ ৬১৯ রান করেছেন ২৫ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান। গত ঢাকা লিগে ৫৯৬ রান করেছিলেন ৩৭.২৫ গড়ে। রান পাওয়ার পাশাপাশি ব্যাটে ধারও বেড়েছে তার। পরিবর্তন এসেছে মানসিকতায়। দীর্ঘদিন তাকে পরীক্ষায় রেখে সুযোগ দিয়েছেন নির্বাচকরা। জাতীয় দলে ফিরে সুযোগটিকে ভালোভাবে কাজে লাগাতে চান ডানহাতি এ ওপেনার। আজ মিরপুর শের-ই-বাংলায় অনুশীলন শেষে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন বিজয়।   প্রশ্ন: চুল বড় করেছেন। জাতীয় দলে সুযোগ না পাওয়া পর্যন্ত চুল বড় করবেন এমন কোনো পরিকল্পনা ছিল নাকি? এনামুল হক বিজয়: না, আসলে চুল বড় রাখা আমার আম্মুর খুব পছন্দের। বাবা যদিও পছন্দ করে না। তবে আম্মু পছন্দ করে। আম্মুর জন্যই রাখা। আম্মু বলছে যে চুল বড়ই থাক। আম্মু বলেছে, ‘অনেক দিন পর জাতীয় দলে আসছ, বড়ই থাক। মন দিয়ে খেল। দলের জন্য ভালো কিছু করার চেষ্টা কর। পরে যদি মনে চায় ফেলে দিও।’ প্রশ্ন: চুল বড় রাখা… কাউকে কি অনুসরণ করছেন? এনামুল হক বিজয়: সেরকম কিছু না। তবে জার্সি নম্বর দেখে সেটা মনে হতে পারে। কিন্তু তা নয়। গতকালও এটা নিয়ে কথা হয়েছে। আম্মু বলল, চুল থাকুক। চুল নিয়ে চিন্তা করার দরকার নাই। ভালো করে খেল। প্রশ্ন: ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো করলেও সুযোগ পাচ্ছিলেন না। হতাশা কি চলে এসেছিল? এনামুল হক বিজয়: হতাশার চেয়ে বেশি ছিল চ্যালেঞ্জ। আমার জন্য ঘরোয়া পর্যায়ের প্রত্যেকটা আসরই চ্যালেঞ্জিং ছিল। প্রিমিয়ার লিগেই যেমন, শেষ হলেই কথা উঠত, বিজয় কতো রান করল? বা প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটেও একই কথা। বিপিএলেও সবাই দেখেছে কত করলাম। এটা আমার জন্য চ্যালেঞ্জ। নিজেকে আরো ভালো কিছুর জন্য অনুপ্রাণিত করা। ভালো খেলতে না পারাই হতাশার। জাতীয় দলে সবাই যখন ভালো খেলে, তখন আসলে নিজের জন্য হতাশ লাগে না। বরং দেশ ভালো খেললে ভালো লাগে। আমি সব সময় বড় স্বপ্ন দেখি। এ কারণে হয়তো হতাশ লাগে না। প্রশ্ন: গত তিন বছরে নিজের অভিজ্ঞতা… এনামুল হক বিজয়: আমার মনে হয় অভিজ্ঞতার একটা ব্যাপার আছে। লম্বা কিছু ম্যাচ খেলেছি। সম্ভবত ২০টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছি। ওয়ানডেও খেলেছি ৪০টির মতো। এটা একটা অভিজ্ঞতা। এ ছাড়া ওয়ানডে লিগে বা প্রথম শ্রেণির লিগে দলকে জেতানো বা জেতা দলে থাকা; এটাও একটা দারুণ অভিজ্ঞতা। ছোটখাটো আরো অনেক কিছু থাকে। ব্যাটিংয়ের দক্ষতা বাড়ানো, কিপিংয়ে কিছু কাজ করা; আসলে নিয়মিত খেলার মধ্যে থাকলে উন্নতির সুযোগটাই বেশি থাকে। আমার কাছে মনে হয়, উন্নতি অনেক বেশি হয়েছে। ইনিংসগুলো বড় হচ্ছে। দুইটা ডাবল সেঞ্চুরি করেছি। সব কিছুতেই নিজেকে আগের থেকে ভালো লাগছে। প্রশ্ন: চন্ডিকা হাথরুসিংহে আপনার ব্যাটিং পছন্দ করতেন না বলে শোনা যায়, তার বিদায়ে স্বস্তি… এনামুল হক বিজয়: ওইভাবে কখনো ভাবিনি। একজন একজনকে অপছন্দ করতেই পারে। এটা জোর করে কিছু হয় না। আমার জন্য পারফর্ম করে যাওয়াই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। আমার বিশ্বাস ছিলই। কোচের বিষয়ে তাই চিন্তা ছিল না। কেউ আসবে, কেউ যাবে; কিন্তু আমাকে খেলে যেতেই হবে। প্রশ্ন: নতুন বিজয়ের কাছে কেমন ব্যটিং আশা করছেন? এনামুল হক বিজয়: খেলি, দেখা যাক। দোয়া করবেন। মনে হয় ভালো কিছু করতে পারব। প্রশ্ন: ব্যাটিংয়ে টেকনিক্যালি কোনো পার্থক্য এনেছেন? এনামুল হক বিজয়: তিন বছরে অনেক কিছুই চেষ্টা করেছি। চেষ্টা করেছি নতুন কিছু করার। যদি লম্বা রান করতে পারি, যদি দলকে কিছু দিতে পারি; তখন হয়ত বোঝা যাবে কী করতে পারি। প্রশ্ন: সৌম্যর রান নেই, লিটনও সুবিধা করতে পারেনি, এই জায়গাটা লক্ষ্য করেই কি এই মৌসুমে ভালো কিছুর চেষ্টা করেছেন? এনামুল হক বিজয়: আমার সব সময়, ছোটবেলা থেকেই চেষ্টা করি যেখানেই খেলি, বড় কিছু করার। তাই সব সময়ই অনেক বড় কিছু করার চেষ্টা করি। এ জন্যই মনে হয়েছে যে, আগের বছরের চেয়ে যদি এবার ভালো কিছু করতে পারি, তাহলে হয়তো ভালো হবে। এই জিনিসটাই কাজ করে। আল্লাহর রহমতে ভালো কিছু করতে পারলে ভালো জায়গা প্রস্তুত হয়ে যায়। ভালো কিছু করতে না পারলে, কোথাও জায়গা নাই। প্রশ্ন: অনেক দিন ছিলেন না। এখন জাতীয় দলটা কেমন বদলে গেছে বলে মনে হয়? এনামুল হক বিজয়: সিনিয়র যে কজন আছে, মাহমুদুল্লাহ ভাই, মুশফিক ভাই, সাকিব ভাই, তামিম ভাই ও মাশরাফি ভাই; এরা সবাই অসাধারণ। এদের তুলনা হয় না। তারা বাংলাদেশ দলকে বদলে দিয়েছেন। এর মধ্যে মিরাজ ও মুস্তাফিজ আসছে। সাব্বির আছে। মনে হয়েছে এই দলটা সব কিছু করতে পারবে। রাইজিংবিডি/ঢাকা/৮ জানুয়ারি ২০১৮/ইয়াসিন/আমিনুল