খেলাধুলা

সাকিবদের হারের ধরন নিয়ে হতাশ বিসিবি

ক্রীড়া প্রতিবেদক : টি-টোয়েন্টি র‍্যাঙ্কিংয়ে আফগানিস্তান বাংলাদেশের চেয়ে দুই ধাপ এগিয়ে। এই ফরম্যাটে র‍্যাঙ্কিংয়ের সেরা বোলারও আফগানিস্তানেরই একজন। তবে অভিজ্ঞতায় আফগানদের চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। দেরাদুনে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ হারায় তাই হতাশ বিসিবির পরিচালক ও মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস। তবে সিরিজ হারের চেয়ে পরপর দুই ম্যাচে বাংলাদেশের হারের ধরন নিয়েই বেশি হতাশা বোর্ডের। দুই ম্যাচেই বাংলাদেশ হেরেছে কম রান করে। প্রথম ম্যাচে ১৬৮ রান তাড়ায় বাংলাদেশ অলআউট হয়ে যায় ১২২ রানেই। কাল দ্বিতীয় ম্যাচে বড় স্কোরের সম্ভাবনা জাগিয়েও ১৩৪ রানের বেশি করতে পারেনি সাকিব আল হাসানের দল। প্রথম ম্যাচে ৪৫ রানে হারের পর দ্বিতীয় ম্যাচ ৬ উইকেটে হেরে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই সিরিজ খুইয়েছে বাংলাদেশ। দুই ম্যাচেই টি-টোয়েন্টির সেরা বোলার রশিদ খানের স্পিনে ধুঁকেছে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিংয়ে নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী খেলতে পারেননি সাকিব, মুশফিকরা। বাংলাদেশ যে এভাবে পরপর দুই ম্যাচ হারবে, সেটা অন্তত ভাবতে পারেননি জালাল ইউনুস। আজ তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘২০১৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা এসেছিল। তাদের আমরা সিরিজ হারিয়েছি। তারাও প্রত্যাশা করেনি তাদের আমরা এভাবে একটা সিরিজ হারাব। এটা হতেই পারে। তবে আমার মনে হয়, হারের ধরনটা ঠিক ছিল না। কারণ আমরা প্রত্যাশা করিনি যে, এভাবে পরপর দুই ম্যাচে হেরে যাব। হতে পারত প্রথম ম্যাচে খারাপ খেলেছি, সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে পরের ম্যাচে জিততে পারতাম, সেটা হয়নি এবং পরপর দুই ম্যাচে হেরেছি। কম রান করে হেরেছি। হারের ধরন ঠিক নেই। টি-টোয়েন্টিতে আফগানিস্তান শক্ত প্রতিপক্ষ, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এ কারণেই তারাই ফেবারিট ছিল। কিন্তু তারপরও আমরা যেভাবে হেরেছি, সেটা আমরা মেনে নিতে পারছি না।’ বাংলাদেশের অন্তত ২-১ ব্যবধানে সিরিজটা জেতা উচিত ছিল বলে মনে করেন জালাল ইউনুস, ‘আফগানিস্তানের বিপক্ষে আমরা ২-১ ব্যবধানে হারলেও মনে করি ঠিক আছে। হোয়াইটওয়াশ না হলেও ২-১-এ সিরিজ হারতে পারি। ওটা তাদের হোম গ্রাউন্ড হিসেবে জানি আমরা। সেখানে তারা অনেকদিন ধরে অনুশীলন করছে। তারা উইকেটটা ভালো চেনে। এবং টি-টোয়েন্টিতে আফগানিস্তান অন্যতম সেরা দল। তাদের দলে বিশ্বমানের স্পিনার আছে। এ কারণে মনে করি, তারা জিততে পারে। তাদের ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। কিন্তু কথা হচ্ছে আমরা তো আরো পেশাদার, আরো অভিজ্ঞ। যে কারণে প্রত্যাশা ছিল আফগানিস্তানের বিপক্ষে আমরা হয়তো সিরিজটা জিতব। ২-১ ব্যবধানে সিরিজটা জেতা উচিত ছিল আমাদের। এটাই আমাদের প্রত্যাশা ছিল।’

 

এভাবে সিরিজ হারকে বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য অশনি সংকেত হিসেবে দেখছেন জালাল ইউনুস। বিপিএলে যারা ভালো খেলেছিলেন তাদের থেকে আফগানদের বিপক্ষেও ভালো পারফরম্যান্স আশা করেছিলেন বিসিবির শীর্ষ এই কর্মকর্তা, ‘এটা আমি বলব অশনি সংকেত। আমাদের অনেক সতর্ক থাকতে হবে। টি-টোয়েন্টির জন্য এখনো আমরা তৈরি হইনি। টি-টোয়েন্টিতে আমরা যেখানে ছিলাম, সেখানেই আছি। আমরা উন্নতি করতে পারিনি। আমরা আশা করেছিলাম বিপিএলে যারা পারফর্ম করে তারা ওখানে গিয়ে পারফর্ম করবে। কিন্তু তাদের সেই পারফরম্যান্স দেখছি না। ঘরোয়াতে ভালো করলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেভাবে দেখা যাচ্ছে না। তুলনা করলে দেখবেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তারা ভালো করছে না। এই জায়গাটায় আমাদের কাজ করতে হবে। যাদের নিয়ে আমাদের আশা, তারা আন্তর্জাতিক মানের নাকি নয়, এই জায়গাটায় পার্থক্য। এই জায়গাটা দেখে তাদের সেই মানে আমাদের নিয়ে আসতে হবে। না হলে লড়াই করতে পারব না।’ তবে এই সিরিজ হারে সবকিছু শেষ হয়ে যায়নি। এই ক্রিকেটারই বাংলাদেশের জন্য বড় বড় সব সাফল্য বয়ে এনেছেন, সেটাই মনে করিয়ে দিলেন জালাল ইউনুস, ‘দেখেন এরা কিন্তু আমাদের জন্য বড় বড় জয় নিয়ে এসেছে, সাফল্য নিয়ে এসেছে। তাদের সাফল্যের অনেক গল্প আছে। আপনি হঠাৎ করে বলতে পারেন না যে, এই ম্যাচটা খারাপ করেছে বলে তারা আগামীতে আরো ম্যাচ খারাপ করবে। তাদের প্রতি আমাদের কোনো নেতিবাচক মনোভাব নেই, হবেও না। আমরা আশা করি, এরা আমাদের সার্ভিস দেবে। সামনের বছর বিশ্বকাপ আছে। আমাদের দৃষ্টি সেখানেই। আমরা একটা সিরিজ হেরে গেছি মানে এমন নয় যে, আমরা আগামীতে খারাপ করব।’ ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে এগোনোর পরামর্শও দিলেন তিনি, ‘এখান থেকে তাদের শিক্ষা নিতে হবে। যেটা বলা হচ্ছে তারা ম্যাচের মধ্যে নেই, এটা যেন আগামী ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে বা এশিয়া কাপে না থাকে। কারা কী খেলছে আমার মনে হয় সেদিকে নির্বাচকদের নজর দেওয়া উচিত। উপযুক্ত খেলোয়াড়রাই যেন সুযোগ পায়, সেদিকে নজর দিতে হবে। যেন সঠিকভাবে দল নির্বাচন হয়।’ রাইজিংবিডি/ঢাকা/৬ জুন ২০১৮/পরাগ