খেলাধুলা

দারুণ শুরুর পর বাংলাদেশের হতাশার দিন

ক্রীড়া ডেস্ক: দিনের শুরুটা ছিল দারুণ। শেষটা হলো বিষাদময়। মাঝের সময়টায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বল হাতে নির্বিষ লড়াই বাংলাদেশের। বোলারদের পারফরম্যান্সে হতাশার দিন কাটাল সাকিব আল হাসানের দল। জ্যামাইকা টেস্টে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে প্রথম দিন শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহ ৪ উইকেটে ২৯৪ রান। অথচ দিনের প্রথম সেশনেই ২ উইকেট তুলে নিয়েছিল বাংলাদেশ। পরের দুই সেশনে বাংলাদেশের ঝুলিতে যোগ হয় একটি করে উইকেট। বাংলাদেশের নির্বিষ বোলিংয়ের সামনে দেয়াল হয়ে দাঁড়ান ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট। ডানহাতি এ ওপেনার তুলে নেন টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। তার অসাধারণ ব্যাটিংয়ে আবারও দিশেহারা বাংলাদেশ শিবির। তাকে ফেরালেও ততক্ষণে রানের চূঁড়ায় ক্যারিবীয়রা। রুবেলকে বসিয়ে তাইজুলকে নিয়ে তিন স্পিনার রেখে একাদশ সাজান সাকিব। স্পিনাররা ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেবে এমন বিশ্বাসেই হয়ত এ সিদ্ধান্ত। শুরুটা সাকিবদের পক্ষেই গিয়েছিল। ৯ রানে স্বাগতিকরা প্রথম উইকেট হারায়। মিরাজের বলে ফরোয়ার্ড ডিফেন্স করতে গিয়ে শর্ট লেগে ক্যাচ দেন ডেভন স্মিথ। ২২ বলে ২ রান করেন স্মিথ। দ্বিতীয় উইকেটে ৫০ রানের জুটি গড়েন ব্র্যাথওয়েট ও কিরন পাওয়েল। মিরাজের হাত ধরে ২৫তম ওভারে এ জুটি ভাঙে বাংলাদেশ। ডানহাতি স্পিনারের সোজা বল মিস করে এলবিডব্লিউ হন ৪৯ বলে ২৯ রান করা স্মিথ। ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে দিন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সহজ হয়ে যায় উইকেট। ব্যাটিংয়ে ছিল না বাড়তি চাপ। ৩৫ ওভারে ২ উইকেটে ৭৯ রানে মধ্যাহ্ন বিরতিতে যায় ক্যারিবীয়রা। দ্বিতীয় সেশনে ফিরে আক্রমণে যায় তারা। ১১৭ বলে ৩৩ রান নিয়ে লাঞ্চে গিয়েছিলেন ব্র্যাথওয়েট। বিরতি থেকে ফিরে ১৪৯ বলে ক্যারিয়ারের ১৮তম হাফ সেঞ্চুরির ল্যান্ডমার্কে পৌঁছান। ব্র্যাথওয়েটের পাশাপাশি স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যাটিং করতে থাকেন শাই হোপ। ৭৯ রান যোগ করেন তারা। বিপদজনক হয়ে উঠা এ জুটি ভাঙেন তাইজুল ইসলাম। বাঁহাতি স্পিনারের লাফিয়ে উঠা বল শাই হোপের ব্যাট ছুঁয়ে চলে যায় সিলি পয়েন্টে। কোনো ফিল্ডার ছিল না সেখানে। কিপিং ছেড়ে বলের পিছু ছোটেন কাজী নুরুল হাসান সোহান। সামনে ড্রাইভ দিয়ে বল তালুবন্দি করেন উইকেট রক্ষক। তার দুর্দান্ত ক্যাচে শাই হোপ ফেরেন ২৯ রানে। সঙ্গী হারালেও ব্র্যাথওয়েট নিজের ব্যাটিং দ্যুতি ছড়িয়ে যান। বাংলাদেশের বোলারদের সামনে দেয়াল হয়ে দাঁড়ান। উইকেটের চারিপাশে রান তুলে দ্রুত তিন অঙ্ক ছুঁয়ে ফেলেন। ১৪৯ বলে হাফ সেঞ্চুরি ছোঁয়া ব্র্যাথওয়েট সেঞ্চুরিতে পৌঁছান ২৫৯ বলে। আরেক প্রান্তের ব্যাটসম্যান সিমরান হেটমায়ারও ছিলেন দারুণ। দুজন চতুর্থ উইকেটে যোগ করেন ১০৯ রান। তাতেই প্রথম দিনের লড়াই থেকে ছিটকে পড়ে বাংলাদেশ। দিনের শেষ ঘন্টায় সেঞ্চুরিয়ান ব্র্যাথওয়েটকে ফিরিয়ে স্বস্তি আনেন মিরাজ। ডানহাতি স্পিনারের ফুল ডেলিভারীতে স্লগ খেলতে গিয়ে মিড উইকেটে ক্যাচ দেন ব্র্যাথওয়েট। তাইজুল দারুণ ক্যাচ নিয়ে বাংলাদেশকে দেন সাফল্য। ২৭৯ বলে ১১০ রান করে আউট হন ব্র্যাথওয়েট। ক্যারিয়ারের এটি তার অষ্টম সেঞ্চুরি। ২০১৫ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন ব্র্যাথওয়েট। মিরাজের আলো ছড়ানো পারফরম্যান্সে শেষ ঘন্টায় সাফল্য পেলেও ব্র্যাথওয়েটের বিদায়ের পর আগ্রাসন দেখান হেটমায়ার। দ্রুত রান তুলেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। তবে দিনের শেষ ওভারের প্রথম বলে এ ব্যাটসম্যানকে ফেরানোর সুযোগ ছিল বাংলাদেশের। মাহমুদউল্লাহর বলে খানিকটা এগিয়ে এসে শট নিতে গিয়ে বল মিস করেন হেটমায়ার। বল লাফিয়ে সোহানের হাঁটুতে আঘাত করে। স্ট্যাম্পিংয়ের কঠিন সুযোগ হাতছাড়া করেন উইকেট রক্ষক। হেটমায়ার ৮৪ ও রোস্টন চেস ১৬ রানে অপরাজিত থেকে দিন শেষ করেছেন। দুজনের পঞ্চম উইকেটে জুটি ৪৮ রানের। দিনের শেষ প্রান্তে হেটমায়ারের উইকেট নিতে পারলে লড়াইয়ে থাকত বাংলাদেশ। সেই সুযোগটি হাতছাড়া করে সোহান ব্যাকফুটে ঠেলে দিল বাংলাদেশকে। তবে বোলারদের নির্বিষ পারফরম্যান্স সবথেকে আলোচিত। বিশেষ করে পেসারদের পারফরম্যান্স। দুই পেসার রাহী ও রাব্বী ১৮ ওভার বোলিং করলেও ছিল না বলার মতো কোনো চ্যালেঞ্জ। ধীর গতি আর সুইংয়ের অভাব স্পষ্ট হচ্ছিল বারবার। স্পিনাররাই অচেনা উইকেটে গড়েছেন প্রতিরোধ। শেষটা রাঙাতে না পারলেও শুরুটা ছিল আশা জাগানিয়া। রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৩ জুলাই ২০১৮/ইয়াসিন