খেলাধুলা

বাংলাদেশের বিপক্ষে নাটকীয় জয়ে ফাইনালে ভারত

ক্রীড়া প্রতিবেদক, মিরপুর থেকে : আরও একবার স্বপ্নভঙ্গ। আরও একবার ২ রানের পরাজয়ের দুঃস্মৃতি জড়িয়ে গেল বাংলাদেশের ক্রিকেটের সঙ্গে। সেটাও এশিয়া কাপের মঞ্চে। বড়রা ২০১২ সালের ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে হেরেছিল ২ রানে। শিরোপার স্বাদ পাওয়া হয়নি সেবার। এবার যুবারা সেমিফাইনালের মঞ্চে হারল ২ রানে। বৃহস্পতিবার এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠার লড়াইয়ে বাংলাদেশকে ২ রানে হারায় ভারত। ফাইনালে উঠার সহজ সুযোগ হারায় তৌহিদ হৃদয়ের দল। অথচ জয়ের কতটা কাছে ছিল বাংলাদেশ তা বলেও বোঝানো সম্ভব না। ভারতও কল্পনা করতে পারছে না কত বড় উপহার তারা পেয়েছে!   ১৭৩ রানের লক্ষ্য ছুঁতে ৪৮ বলে মাত্র ১২ রান লাগত বাংলাদেশের। হাতে ৩ উইকেট। ৪৩তম ওভারের চতুর্থ বলে হঠাৎ এলোপাথারি শট শামীম হোসেনের। বাংলাদেশকে যুব এশিয়া কাপের ফাইনালের জয়ের স্বপ্ন দেখানো শামীমকে ফিরিয়ে ভারতকে ম্যাচে ফেরান গঙ্গাপুরাম। অথচ তখনও ৪৪ বল বাকি। শামীমের ওই এক শটেই সব শেষ বাংলাদেশের! পরের ১০ বলে স্কোরবোর্ডে কোনো রানই হলো না। মাঝে সাজঘরে ফেরেন শরীফুল ইসলাম।  শেষ উইকেটে ব্যাটিংয়ে মিনহাজুর রহমান ও রকিবুল হাসান। তারা দুজন মিলে যোগ করলেন ৯ রান। জয়ের জন্য বাংলাদেশের প্রয়োজন মাত্র ৩ রান। কিন্তু পুরনো দুঃস্মৃতি আবার ফিরে আসল মিরপুরে। ভুল বোঝাবুঝিতে ৪৭তম ওভারের দ্বিতীয় বলে রান আউট মিনহাজুর। গঙ্গাপুরামের বলে খোঁচা মেরে শর্ট থার্ড ম্যান অঞ্চলে পাঠান রকিবুল। রানের জন্য দৌড় দেন মিনহাজুর। কিন্তু তার ডাকে সাড়া দেননি রকিবুল। পয়েন্টে দারুণ ফিল্ডিং করে বল বোলিং প্রান্তে ফেরত দেন বাদোনি। গঙ্গাপুরাম বল লুফে উইকেট ভাঙতে দেরি করেননি। ফাইনালে উঠার স্বপ্ন শেষ বাংলাদেশের। মিরপুর শের-ই-বাংলায় জাতীয় পতাকা হাতে গঙ্গাপুরাম দিলেন ল্যাপ অব অনার। আর ২২ গজের ক্রিজে তখনও শুয়ে মিনহাজুর ও রকিবুল। দুজনের চোখে জলে ভিজল উইকেট। নিস্তব্ধ, বিষন্ন ড্রেসিং রুম। আবার ২ রানের ক্ষতে পুড়ল বাংলাদেশ। অথচ বাংলাদেশ ম্যাচটি হেরে বসেছিল শুরুতেই। ৬৫ রান তুলতেই বাংলাদেশের ৫ ব্যাটসম্যান সাজঘরে। ষষ্ঠ উইকেটে জুটি বাঁধেন আকবর আলী ও শামীম হোসেন। দুজন জুটি গড়েন ৭৪ রানের। তাদের ব্যাটে জয় নাগালে চলে আসে বাংলাদেশের। কিন্তু ভাগ্যদেবী আজও সঙ্গে ছিল না বাংলাদেশের। জয়ের থেকে ৩৪ রান দূরে থেকে বাংলাদেশ হারায় আকবরের উইকেট। তেয়াগির বলে সুইপ করতে গিয়ে ক্যাচ দেন ৪৫ রান করা আকবর। সঙ্গী হারানোর পরও পথ হারাননি শামীম। তুলে নেন ফিফটি। কিন্তু গঙ্গাপুরামের স্লোয়ারে এলোপাথারি শটে বাংলাদেশকে বিপদে ফেলেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। মিড উইকেটের ওপর দিয়ে বড় শট খেলতে গিয়ে বাদোনির হাতে ক্যাচ দেন সর্বোচ্চ ৫৯ রান করা শামীম। এরপর আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি বাংলাদেশ। ২ রানের আক্ষেপে শেষ হয় বাংলাদেশের এশিয়া কাপের মিশন। এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ভারতের শুরুটা ভালো হয়নি। ওপেনার পাডিক্কালকে ১ রানে ফেরান পেসার শরীফুল। শুরুর ধাক্কা সামলে দ্বিতীয় উইকেটে প্রতিরোধ গড়েন জয়েসাল ও আনজু রায়াত। দুজন ৬৬ রানের জুটি গড়েন।  চোখ রাঙানো এ জুটি ভাঙেন অধিনায়ক তৌহিদ হৃদয়। তার বলে সুইপ করতে গিয়ে ক্যাচ দেন ৩৫ রান করা আনজু। এরপর ৮ রান তুলতেই ৩ উইকেট হারায় ভারত। লেগ স্পিনার রিশাদের বলে ফেরেন ভারতের অধিনায়ক সিমরন সিং (০)। হৃদয় দ্রুত ফেরান রাথোডকে (২)। দলীয় ৭৭ রানে রিশাদের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন ওপেনার জয়েসাল (৩৭)। দ্রুত উইকেট হারিয়ে ব্যাকফুটে চলে যায় ভারত। খাদের কিণারায় থাকা দলকে টেনে তোলেন বাদোনি ও সামির চৌধুরী। দুজনের ৫৯ রানের জুটি ভারতের রানের চাকা সচল রাখে। কিন্তু এ জুটি ভাঙার পর দ্রুত গুটিয়ে যায় ভারত। শেষ দিকে কোনো ব্যাটসম্যান লড়াই করতে পারেননি। ৩ বল আগে ১৭২ রানে থামে তাদের ইনিংস। সামীর চৌধুরীর ব্যাট থেকে আসে ৩৬ রান। বাদোনি করেন ২৮ রান। ভারতের ব্যাটিংয়ের লেজটা গুটিয়ে দেন বাঁহাতি পেসার মৃত্যুঞ্জয়। এছাড়া শরীফুলও শেষ দিকে নেন ২ উইকেট। বাংলাদেশের সেরা বোলার পেসার শরীফুল। ১৬ রানে নেন ৩ উইকেট। ২টি করে উইকেট নেন মৃতুঞ্জয়, রিশাদ ও হৃদয়।  রাইজিংবিডি/ঢাকা/৪ অক্টোবর ২০১৮/ইয়াসিন/আমিনুল