খেলাধুলা

এই ম্যাচও হারল পাকিস্তান!

ক্রীড়া ডেস্ক : জয়ের জন্য দরকার ২৯ রান, হাতে ৬ উইকেট। এমন সহজ সমীকরণও মেলাতে পারেনি পাকিস্তান। আবুধাবি টেস্টে ৪ রানের নাটকীয় জয়ে তিন ম্যাচ সিরিজে এগিয়ে গেছে নিউজিল্যান্ড। চতুর্থ ইনিংসে ১৭৬ রানের লক্ষ্য তাড়ায় পাকিস্তান গুটিয়ে গেছে ১৭১ রানে। রানের হিসাবে এত কম ব্যবধানে (৪) এর আগে জেতেনি নিউজিল্যান্ড। সব মিলিয়ে এর চেয়ে কম রানে জেতার রেকর্ড আছেই মাত্র চারটি। যার দুটি ৩ রানে, একটি ২ রানে, একটি ১ রানে। অথচ লক্ষ্য তাড়ায় তৃতীয় দিন শেষে বিনা উইকেটে ৩৭ রান তুলে ফেলেছিলেন পাকিস্তানের দুই ওপেনার ইমাম উল হক ও মোহাম্মদ হাফিজ। পাকিস্তানের জন্য জয়টা তখন সহজ বলেই মনে হচ্ছিল। সবগুলো উইকেট হাতে নিয়ে জয় থেকে ১৩৯ রান দূরে থেকে সোমবার চতুর্থ দিনের খেলা শুরু করেছিল পাকিস্তান। তবে দলীয় ৪০ থেকে ৪৮, ৮ রানের মধ্যেই ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় তারা।  ইমাম (২৭) ও হাফিজের (১০) সঙ্গে ফেরেন হ্যারিস সোহেল। বাঁহাতি স্পিনার এজাজ প্যাটেলের শিকার ইমাম। লেগ স্পিনার ইশ সোধির বলে আউট হাফিজ ও সোহেল। চতুর্থ উইকেটে ৮২ রানের জুটিতে পাকিস্তানকে কক্ষপথে ফেরান আজহার আলী ও আসাদ শফিক। লাঞ্চের আগে শেষ ওভারে শফিককে (৪৫) ফিরিয়ে এ জুটি ভাঙেন পেসার নেইল ওয়াগনার। তখনো কে জানত, কী নাটকীয়তাই না অপেক্ষা করছে শেখ আবু জায়েদ স্টেডিয়ামের বাইশ গজে! জয় থেকে পাকিস্তান তখন আর ২৯ রান দূরে, হাতে ৬ উইকেট। উইকেটে আজহারের সঙ্গী বাবর আজম। এমন সময়েই আজহারের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউটে কাটা পড়েন বাবর। প্যাটেলের বল শর্ট ফাইন লেগে খেলেছিলেন বাবর। এক রান নেওয়ার জন্য ছুটে যান আজহার। বাবর শুরুতে এগিয়ে এসেও আবার থেমে যান মাঝপথে। সোধির থ্রো থেকে নন স্ট্রাইক প্রান্তের স্টাম্প ভেঙে দেন বোলার প্যাটেল, বাবর তখন অনেকটা দূরেই। প্যাটেলের পরের ওভারে ফেরেন অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদও। প্রথম ইনিংসে সুইপ খেলতে গিয়ে এই প্যাটেলের বলেই আউট হয়েছিলেন সরফরাজ। এবারও আউট হয়েছেন সেই সুইপ খেলতে গিয়েই। কট বিহাইন্ডের আবেদনে আম্পায়ার যদিও শুরুতে আউট দেননি। নিউজিল্যান্ড চায় রিভিউ। আল্ট্রাএজে দেখা যায়, বল সরফরাজের প্যাডে লাগার পর ব্যাট ছুঁয়ে উইকেটকিপারের গ্লাভসে গিয়েছিল। পরের দুই ওভারে আরো দুই উইকেট হারায় পাকিস্তান। প্যাটেলকে উড়াতে গিয়ে বোল্ড হন বিলাল আসিফ। ওয়াগনারের বলে স্লিপে রস টেলরকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ইয়াসির আলী। আজহার ফিফটি তুলে নিয়ে তখনো একপ্রান্ত আগলে রেখেছিলেন। কিন্তু তাকে সঙ্গ দিতে পারেননি হাসান আলীও। তিনি প্যাটেলকে স্লগ সুইপে উড়াতে গিয়ে মিড উইকেটে বদলি ফিল্ডার টিম সাউদির ক্যাচ হয়ে ফেরেন। তখনো জয়ের জন্য পাকিস্তানের প্রয়োজন ১২ রান। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে উইকেটে আসেন মোহাম্মদ আব্বাস। তাকে একপ্রান্তে রেখে আজহার দলকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন একটু একটু করে। ব্যবধান নেমে এসেছিল ৫ রানে। তখনই ভুলটা করলেন আজহার। প্যাটেলকে ডিফেন্ড করতে গিয়ে বলের লাইনে যেতে পারেননি ডানহাতি ব্যাটসম্যান। বল প্যাডে আঘাত করতেই নিউজিল্যান্ডের ফিল্ডারদের জোরালো আবেদনে আঙুল তুলে নেন আম্পায়ার। আজহার রিভিউ নিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। ৬৫ রান করেও তাই হারের বেদনা নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় আজহারকে। ততক্ষণে নিউজিল্যান্ড শিবির উৎসবে মাতোয়ারা। শেষ ইনিংসে ৫৯ রানে ৫ উইকেট নিয়ে নিউজিল্যান্ডের জয়ের নায়ক অভিষিক্ত প্যাটেল। ম্যাচসেরার পুরস্কারও জিতেছেন তিনিই। সোধি ও ওয়াগনার নিয়েছেন ২টি করে উইকেট। কে বলবে, এই টেস্টে নিউজিল্যান্ড প্রথম ইনিংসে ১৫৩ রানে অলআউট হয়েছিল, দ্বিতীয় ইনিংসে ২৯ রানে হারিয়েছিল শেষ ৬ উইকেট! সংক্ষিপ্ত স্কোর নিউজিল্যান্ড ১ম ইনিংস : ১৫৩ ও ২য় ইনিংস ২৪৯ পাকিস্তান ১ম ইনিংস: ২২৭ ও ২য় ইনিংস : (লক্ষ্য ১৭৬) ১৭১ ফল: নিউজিল্যান্ড ৪ রানে জয়ী সিরিজ: তিন ম্যাচ সিরিজে নিউজিল্যান্ড ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে ম্যান অব দ্য ম্যাচ: এজাজ প্যাটেল।

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৯ নভেম্বর ২০১৮/পরাগ