খেলাধুলা

ফ্রাইলিঙ্ক-ঝড়ের পর সিলেটের জয়

ক্রীড়া প্রতিবেদক, মিরপুর থেকে : এবারের বিপিএলের প্রথম ছয় ম্যাচের প্রায় সবগুলোই ছিল একপেশে। সপ্তম ম্যাচে এসে ব্যাটে-বলে দুই দলের দারুণ এক লড়াই দেখল ক্রিকেটপ্রেমীরা। শেষ বল হওয়ার আগ পর্যন্ত বলা যাচ্ছিল না কোন দল জিতবে। শেষ ওভারে ২৪ রানের সমীকরণটা শেষ বলে নেমে এসেছিল ৭ রানে। ছক্কা হলেও ম্যাচ গড়াবে সুপার ওভারে। চিটাগং ভাইকিংস অবশ্য এক রানের বেশি নিতে পারেনি। ৫ রানের রোমাঞ্চকর জয় পেয়েছে সিলেট সিক্সার্স। ডেভিড ওয়ার্নার ও নিকোলাস পুরাণের ফিফটি এবং আফিফ হোসেনের চল্লিশোর্ধ ইনিংস সিলেটকে এনে দিয়েছিল লড়াকু পুঁজি। ৪ উইকেট নিয়ে বাকি কাজটা সেরেছেন তাসকিন আহমেদ। বোলিংয়ে ৩ উইকেট নেওয়ার পর শেষ দিকে ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে চিটাগংয়ের আশা জাগিয়েছিলেন রবি ফ্রাইলিঙ্ক। তবে দলকে জয় এনে দিতে পারেননি। মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে বুধবার আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৬৮ রান করেছিল সিলেট। জবাবে ৭ উইকেটে ১৬৩ রান করতে পারে চিটাগং। হার দিয়ে বিপিএল শুরুর পর দ্বিতীয় ম্যাচে প্রথম জয় পেল সিলেট সিক্সার্স। জয়ে শুরু পর দ্বিতীয় ম্যাচে হার সঙ্গী করল চিটাগং ভাইকিংস। প্রথম ছয় ম্যাচেই টস জেতা দলে আগে বোলিং নিয়েছিল। আজ অলিখিত সেই নিয়মটা ভাঙেন ডেভিড ওয়ার্নার। সিলেট অধিনায়ক টস জিতে নেন ব্যাটিং। তবে সিলেটের শুরুটা হয় দুঃস্বপ্নের মতো। ৬ রানেই হারায় ৩ উইকেট! শুরুটা লিটন দাসকে দিয়ে। প্রথম ওভারে পেসার রবি ফ্রাইলিঙ্ককে লেগ সাইডে ফ্লিক করতে চেয়েছিলেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান। কিন্তু বল চলে যায় পয়েন্টে দাঁড়ানো ক্যামেরন ডেলপোর্টের হাতে। প্রথম ম্যাচে একাদশে ছিলেন না নাসির হোসেন। আজ সুযোগ পেয়ে সেটি কাজে লাগাতে পারেননি নাসির। দ্বিতীয় ওভারে অফ স্পিনার নাঈম হাসানকে উড়াতে গিয়ে লং অনে মোসাদ্দেক হোসেনকে ক্যাচ দেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান। পরের ওভারে ফ্রাইলিঙ্কের স্লোয়ার ডিফেন্স করতে গিয়ে প্লেড-অন সাব্বির রহমান। তিন ব্যাটসম্যানের মধ্যে দুজনই রানের খাতা খুলতে পারেননি। নাসির করেছেন ৩। প্রথম তিন ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে তখন ভীষণ চাপে সিলেট। তবে আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে সেই চাপ দূরে সরে দেন আফিফ হোসেন আফিফ মুখোমুখি চতুর্থ বলেই নাঈমকে স্লগ সুইপে ওড়ান ডিপ মিড উইকেটের ওপর দিয়ে। পরের ওভারে আরেক অফ স্পিনার সিকান্দার রাজাকে হাঁকান দুই চার। প্রথমে রিভার্স সুইপ করে, পরে সুইপ করে। এরপর পেসার আবু জায়েদ রাহীকে আছড়ে ফেলেন লং অনের ওপর দিয়ে। আরেক পেসার খালেদ আহমেদকে ছক্কা হাঁকান পুল করে। ফিফটি থেকে ৫ রান দূরে থাকতে বিপজ্জনক আফিফকে থামান খালেদ। ডানহাতি পেসারের অফ স্টাম্পের বল ব্যাক ফুটে স্কয়ার কাট করতে চেয়েছিলেন আফিফ। ব্যাটের কানায় লেগে ধরা পড়েন উইকেটরক্ষক মোহাম্মদ শাহজাদের গ্লাভসে। ২৮ বলে ৫ চার ও ৩ ছক্কায় ৪৫ রানের ইনিংসটি সাজান বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। আফিফের বিদায়ে ভাঙে ৭১ রানের চতুর্থ উইকেট জুটি। এক প্রান্ত আগলে রাখা ওয়ার্নার চালিয়ে যান লড়াই। পঞ্চম উইকেটে নিকোলাস পুরাণের সঙ্গে ৪৭ বলে ৭০ রানের আরেকটি ভালো জুটি গড়েন ওয়ার্নার। পাশাপাশি ছয় ম্যাচ পর টি-টোয়েন্টিতে ফিফটিও তুলে নেন অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান। ওয়ার্নারের বিদায়ে ভাঙে জুটি। ১৯তম ওভারে ফ্রাইলিঙ্ককে সুইচ হিটে খেলতে গিয়ে এক্সট্রা কাভারে মুশফিকুর রহিমের হাতে ক্যাচ দেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। ৪৭ বলে ২ চার ও এক ছক্কায় ওয়ার্নার করেন ৫৯। শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করা পুরাণ শেষ ওভারে তুলে নেন ফিফটি, ৩০ বলে। শেষ পর্যন্ত ৩২ বলে ৩টি করে চার ও ছক্কায় তার অপরাজিত ৫২ রানে ইনিংসে ভালো পুঁজি পায় সিলেট। প্রথম ম্যাচে ৪ উইকেট নেওয়া ফ্রাইলিঙ্ক আজও চিটাগংয়ের সেরা বোলার। দক্ষিণ আফ্রিকান এই পেসার ৪ ওভারে ২৬ রানে নেন ৩ উইকেট। নাঈম ও খালেদ নেন একটি করে উইকেট। লক্ষ্য তাড়ায় তাসকিন আহমেদকে ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই এক্সট্রা কাভারের ওপর দিয়ে ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন শাহজাদ। কিন্তু আফগান ব্যাটসম্যান ইনিংস বড় করতে পারেননি। এক বল পরই আবার উড়াতে গিয়েছিলেন তাসকিনকে। টাইমিং হয়নি ঠিকমতো, বল উঠে যায় আকাশে। মিড অফ থেকে পেছনে দৌড়ে দারুণ এক ক্যাচ নেন ওয়ার্নার। আরেক ওপেনার ডেলপোর্ট অবশ্য ঝড় তোলেন। তাসকিনের পরের ওভারে হাঁকান দুটি চার, একটি ছক্কা। এরপর তিনি ছক্কা হাঁকিয়েছেন নাসির, আর আল-আমিনকেও। ফিফটির পথেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু রান আউট দুর্ভাগ্যে শেষ হয়েছে তার ২২ বলে ৪ চার ও ৩ ছক্কায় ৩৮ রানের ইনিংস। তার বিদায়ে ভাঙে ৫৭ রানের দ্বিতীয় উইকেট জুটি। পরের ওভারে আক্রমণে ফিরে আশারফুলকে ফেরান তাসকিন। ডানহাতি পেসারকে পুল করে উড়াতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে সাব্বিরের হাতে ধরা পড়েন আশরাফুল। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে পাঁচ বছর পর বিপিএলে ফিরে প্রথম ম্যাচে আশরাফুল করেছিলেন ৩, আজ ২৩ বলে ৩ চারে করেন ২২ রান। টিকতে পারেননি অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। লেগ স্পিনার অলক কাপালিকে পুল করতে গিয়ে তিনি ক্যাচ দেন ডিপ মিড উইকেটে। একটা সময় ১ উইকেটে ৬৩ থেকে চিটাগংয়ের স্কোর তখন ৪ উইকেটে ৭৪! দলের স্কোর একশ হওয়ার আগে ফেরেন মোসাদ্দেক হোসেনও। ডানহাতি ব্যাটসম্যান কাপালির বলে বোল্ড হয়েছেন বাজে শটে, ৭ রান করে। ৯৪ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর চেষ্টা চালান রাজা ও ফ্রাইলিঙ্ক। শেষ ৪ ওভারে চিটাগংয়ের দরকার ছিল ৫১ রান। তবে ১৮তম ওভারে তাসকিনের পরপর দুই বলে রাজা (২৮ বলে ৩৭) ও নাঈমের বিদায়ে চিটাগংয়ের আশাও ফিকে হয়ে যায়। তবে শেষের আগে আবার আশা জাগান ফ্রাইলিঙ্ক। শেষ ওভারে ২৪ রানের প্রয়োজনে আল-আমিনের প্রথম বলে সানজামুল ইসলাম সিঙ্গেল নিয়ে পার করে দেন ফ্রাইলিঙ্ককে। পরের তিন বলের মধ্যে তিনি হাঁকান ২টি ছক্কা, একটি ডাবল। পঞ্চম বলে আরেকটি ডাবল। শেষ বলে ছক্ক হাঁকালে ম্যাচ যাবে সুপার ওভারে। তবে আল-আমিনের লো ফুলটসে ১ রানের বেশি নিতে পারেননি ফ্রাইলিঙ্ক। ২৪ বলে ৪ ছক্কা ও এক চারে ৪৪ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি। ৪ ওভারে ২৮ রানে ৪ উইকেট নিয়ে সিলেটের সেরা বোলার তাসকিন। কাপালি নেন ২ উইকেট। ম্যাচসেরা হয়েছেন পুরাণ। রাইজিংবিডি/ঢাকা/৯ জানুয়ারি ২০১৯/পরাগ