খেলাধুলা

আলিসের হ্যাটট্রিকে ঢাকার রোমাঞ্চকর জয়

ক্রীড়া প্রতিবেদক, মিরপুর থেকে : প্রথম কয়েক দিন মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের গ্যালারি খাঁ খাঁ করছিল। তবে আজ ছিল পুরো বিপরীত চিত্র, মিরপুরের গ্যালারি ‘হাউসফুল’। অনেক দর্শক তো টিকিট না পেয়ে স্টেডিয়ামের বাইরে থেকেই ফিরে গেছেন। যারা মাঠে ঢুকেছিলেন পয়সা খরচ করে। তাদের পয়সা উসুল। রুদ্ধশ্বাস এক ম্যাচ দেখল ক্রিকেটপ্রেমীরা। ক্ষণে ক্ষণে রঙ বদলানো ম্যাচের ফয়সালা হলো শেষ বলে। রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে ২ রানের রোমাঞ্চকর জয় পেল ঢাকা ডায়নামাইটস। আর ঢাকার জয়ের নায়ক অখ্যাত এক বোলার। যিনি আজকের আগে স্বীকৃত ম্যাচই খেলেননি! প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেই সেই আলিস আল ইসলাম করেছেন হ্যাটট্রিক। বিপিএল ইতিহাসের তৃতীয় হ্যাটট্রিক। ১৮৩ রান তাড়ায় তৃতীয় উইকেটে শতরানের জুটিতে রাইলি রুশো ও মোহাম্মদ মিথুন ম্যাচটা প্রায় নিজেদের করে নিয়েছিলেন। এই দুজনের পাশাপাশি আরো ২ উইকেট নিয়ে ঢাকাকে দারুণ জয় এনে দিয়েছেন অফ স্পিনার অ্যালিস। এর আগে ঢাকার জয়ের ভিত গড়ে দিয়েছিলেন অবশ্য কাইরন পোলার্ড। তার ২৬ বলে ৬২ রানের সেঞ্চুরিতে ৯ উইকেটে ১৮৩ রান করেছিল ঢাকা। জবাবে রংপুর ৯ উইকেট হারিয়ে করতে পারে ১৮১ রান। বৃথা গেছে রুশোর ৪৪ বলে ৮৩ রানের ঝোড়ো ইনিংস। গত আসরের ফাইনালে এই রংপুরের কাছে হেরেই শিরোপা হারিয়েছিল ঢাকা। এবার প্রথম দেখায় মাশরাফি বিন মুর্তজার রংপুরকে হারিয়ে কিছুটা হলেও প্রতিশোধ নিল সাকিব আল হাসানের দল। ঢাকা জিতল প্রথম তিন ম্যাচেই। চতুর্থ ম্যাচে দ্বিতীয় হার সঙ্গী করল রংপুর। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ঢাকার শুরুটা ভালো হয়নি। প্রথম দুই ম্যাচে ফিফটি করা হজরতউল্লাহ জাজাই এবার ফিরেছেন ১ রানে। দ্বিতীয় ওভারে অফ স্পিনার সোহাগ গাজীকে কাট করার চেষ্টায় বোল্ড হন আফগানিস্তানের এই ব্যাটসম্যান। আরেক ওপেনার সুনীল নারিনও ভালো করতে পারেননি। ৮ রানে তাকে থামান মাশরাফি। এরপর রনি তালুকদার (১৮) আর মিজানুর রহমানও (১৫) ইনিংস বড় করতে পারেননি। সোহাগের বলে বিনি হাওয়েলের দুর্দান্ত ক্যাচে ফেরেন রনি। হাওয়েল পরে বোলিংয়ে এসে ফেরান মিজানুরকে। তখন ৬৪ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে ঢাকা। এরপরই অধিনায়ক সাকিবের সঙ্গে ৪১ বলে ৭৮ রানের দারুণ এক জুটি গড়েন কাইরন পোলার্ড। ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই ব্যাটসম্যান শুরুর থেকেই ছিলেন আক্রমণাত্মক। ১৩তম ওভারে বাঁহাতি স্পিনার নাজমুল ইসলাম অপুকে হাঁকান তিন ছক্কা। পরের ওভারে ফিফটি তুলে নেন মাত্র ২১ বলে। বিপজ্জনক পোলার্ডকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন হাওয়েল। এ জুটি ভাঙার পর ঝড় তোলার চেষ্টা করেছিলেন আরেক ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ব্যাটসম্যান আন্দ্রে রাসেল। তিন ছক্কায় ২৩ রান করা রাসেলকে থামান শফিউল ইসলাম। এর আগে সাকিব ফেরেন ৩৭ বলে ৪ চারে ৩৬ রান করে। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারানোয় শেষ পাঁচ ওভারে ঢাকা যোগ করতে পারে মাত্র ৪১ রান। শেষ ওভারে শফিউল নেন ৩ উইকেট। ডানহাতি পেসার রাসেলের পর ফেরান শুভাগত হোম ও নুরুল হাসান সোহানকে। চার ওভারে ৩৫ রানে ৩ উইকেট নেন শফিউল। হাওয়েল ২৫ রানে ও সোহাগ ২৮ রানে নেন ২টি করে উইকেট। মাশরাফি চার ওভারে ২২ রানে নেন একটি উইকেট। লক্ষ্য তাড়ায় রংপুরের শুরুটা ভালো হয়নি। প্রথম ম্যাচে ১ রান করা ক্রিস গেইল এদিন মুখোমুখি প্রথম ছয় বলে করেন ২ রান। এরপরই তৃতীয় ওভারের প্রথম বলে অফ স্পিনার শুভাগত হোমকে উড়ান লং অফের ওপর দিয়ে। দ্বিতীয় বলে তাকে এলবিডব্লিউ দিয়েছিলেন আম্পায়ার। গেইল চান রিভিউ। রিপ্লেতে দেখা যায়, বল স্টাম্পের অনেক বাইরে গিয়ে যেত। পরের বলেই রাসেলের অবিশ্বাস্য প্রচেষ্টায় ফেরেন গেইল। স্ট্রেইট শটে উড়িয়েছিলেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। ছক্কা হবে বলেই মনে হচ্ছিল। বাতাসে ভাসতে ভাসতে বল সীমানা পেরিয়ে যাচ্ছিল। রাসেল লং অফ থেকে কিছুটা দৌড়ে সীমানা দরির ওপর শূন্যে লাফিয়ে বলটা ধরেই ছুড়ে দেন আকাশে। লং অন থেকে যাওয়া পোলার্ড বল জমান হাতে। আরেক ওপেনার মেহেদী মারুফও টেকেননি। পরের ওভারে রাসেলকে আপার কাট করতে গিয়ে তিনি (১০) ক্যাচ দেন উইকেটকিপার সোহানকে। তবে প্রথম দুই ম্যাচেই অপরাজিত ৭৬ ও ২০ রান করা রুশো এদিনও শুরু থেকেই উজ্জ্বল। ষষ্ঠ ওভারে নারিনকে তার দুই ছক্কা ও এক চারে পাওয়ার-প্লেতে ২ উইকেটে ৫৮ রান তোলে রংপুর। অষ্টম ওভারে শুভাগতর তিন বলের মধ্যে দুটি সহজ ক্যাচ ফেলেন আলিস। দুবারই ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ মিথুন। রুশোর ২২ বলে ফিফটিতে রংপুরের স্কোর পেরিয়ে যায় একশ। রুশো যেভাবে খেলছিলেন এই বিপিএলে প্রথম সেঞ্চুরিটা তিনি করে ফেলবেন বলেই মনে হচ্ছিল। তবে ৮৩ রানে অফ স্পিনার অ্যালিসকে টাউন দ্য উইকেটে খেলতে গিয়ে স্টাম্পড হয়ে যান দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যান। রুশোর বিদায়ে ভাঙে ৭২ বলে ১২১ রানের বড় জুটি। ৪৮ বলে ৮ চার ও ৪ ছক্কায় ৮৩ রানের ইনিংসটি সাজান তিনি। জয়ের জন্য তখন ২৮ বলে ৩৮ রান দরকার রংপুরের, হাতে ৭ উইকেট। কিন্তু পরের ওভারে সাকিব ফেরান রবি বোপারাকে। পরের ওভারেই আলিসের সেই হ্যাটট্রিক। চতুর্থ বলে ৪৯ রান করা মিথুনকে বোল্ড করার পরের বলে উড়িয়ে নিয়ে যান মাশরাফির স্টাম্পের বেল। হ্যাটট্রিক বলে স্লিপে সাকিবকে ক্যাচ দেন ফরহাদ রেজা। ১৯তম ওভারে নারিন ফেরান সোহাগ গাজী আর হাওয়েলকে। শেষ ওভারে ১৪ রানের প্রয়োজনে শফিউল প্রথম দুই বলে অ্যালিসকে চার হাঁকালে জমে উঠে ম্যাচ। ৪ বলে বলে রংপুরের দরকার ৬। পরের তিন বলে শফিউল-নাজমুল নিতে পারেন ২ রান। শেষ বলে চাই ৪। তবে ১ রানের বেশি নিতে পারেননি শফিউল। ৪ ওভারে ২৬ রানে ৪ উইকেট নেন আলিস। ৪০ রানে ২ উইকেট নেন নারিন। রাইজিংবিডি/ঢাকা/১১ জানুয়ারি ২০১৯/পরাগ