খেলাধুলা

ওভাবে চিন্তা করছি না যে খারাপ হয়েছে : বিজয়

২০১৮ সালের ২৮ জুলাই সবশেষ জাতীয় দলের হয়ে খেলেছিলেন এনামুল হক বিজয়। এর এক বছর পর বাংলাদেশ দলের শ্রীলঙ্কা সফরে আবার দলে ডাক পান। ৩১ জুলাই শেষ ওয়ানডে ম্যাচে তাকে সুযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি তিনি। ২৪ বল খেলে ২ চারে ১৪ রান করে আউট হন।

তবে সুযোগ কাজে লাগাতে না পেরে হতাশ নন তিনি। ভবিষ্যতে সুযোগ পেলে যথারীতি শতভাগ দেওয়ার চেষ্টা করবেন। তার মতে এক/দুই ম্যাচের পারফরম্যান্স দিয়ে কাউকে মূল্যায়ন করা যায় না। নিয়মিত সুযোগ পেলে অনেকেই নিজেদের প্রমাণ করতে পারবে। বিষয়টি নিয়ে হা-হুতাশ করতেও রাজি নন তিনি। ক্রিকেটার হিসেবে ক্যারিয়ারে ভালো সময়, খারাপ সময় আসবেই। 

এ ছাড়া আরো বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তিনি কথা বলেন রাইজিংবিডি জ্যেষ্ঠ সহ-সম্পাদক আমিনুল ইসলামের সঙ্গে। তার চুম্বক অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল।

প্রশ্ন : দীর্ঘদিন পর জাতীয় দলে ফিরেছিলেন। কিন্তু সেই একই পারফরম্যান্স। কী ব্যাখ্যা দেবেন?

বিজয় : অনেকদিন পরে জাতীয় দলে ফিরেছিলাম। হঠাৎ করে একটা ম্যাচ খেলা। অনেক সময় আসলে অ্যাজাস্টাবল হয় না। শ্রীলঙ্কার মাটিতে কয়েকটা ম্যাচ বসে থাকার পর একটা ম্যাচ খেললাম। সেটা ভালো নাও হতে পারে। আমি আসলে ওভাবে চিন্তা করছি না যে খারাপ হয়েছে। ন্যাশনাল টিমে কামব্যাক করেছি। সবাই খুব সাপোর্ট করেছে। আমার মনে হচ্ছে আমরা একসঙ্গেই আছি। টাচেই আছি। ভালো খেলা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। যেকোনো সময় ইনশাল্লাহ ভালো একটা ইনিংস উপহার দিতে পারি।

প্রশ্ন : ড্রেসিংরুমের কোন পরিবর্তন পেয়েছেন?

বিজয় : না, না। সবাই আসলে পারফর্ম করার জন্য উদগ্রিব ছিল। তামিম ভাই অধিনায়কত্ব করেছেন। শতভাগ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। মুশফিক ভাইসহ সিনিয়র যারা তারা খুবই চেষ্টা করেছেন। হয়তো অনেকেই আমরা শতভাগ দিতে পারিনি। কিংবা হয়ে ওঠেনি। কিন্তু যারা পারফরমার তারা ইনশাল্লাহ শিগগিরই কামব্যাক করবে। খুবই ভালো করবে। জুনিয়ররা চেষ্টা করছে নিজেদের আরো পরিণত করতে। আমার মনে হয়েছে ড্রেসিং রুমটা এখন অনেক বেশি পরিণত। সবাই অনেক বেশি চিন্তা করে দেশকে নিয়ে। নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে।

প্রশ্ন : শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শেষ ম্যাচে যেভাবে আউট হয়েছেন? আপনি দুটি চার মারলেন। তৃতীয় বলে সিঙ্গেল নিলেও ওই ওভারে ১০ রান। এভাবে কি চিন্তা করি আমরা? কিন্তু...

বিজয় : আসলে টার্গেট ছিল বড়। অনেক রান বাকি ছিল। তখন তো আপনাকে অ্যাটাক করে খেলতেই হবে, ম্যাচ জিততে হলে। এখন ওয়ানডে ক্রিকেটে কিন্তু ৬ এর উপরে রান রাখাই লাগে জিততে গেলে। আমাদের টার্গেট ছিল অ্যাটাক করতে হবে। রান বের করতে হবে। যদিও আমরা দুইটা ম্যাচ হেরে গিয়েছিলাম। সে কারণে আমরা ব্যাকফুটে ছিলাম। শ্রীলঙ্কা টপে ছিল। সে কারণে আমরা ওই ম্যাচে কামব্যাক করতে পারিনি। সবার ইচ্ছা ছিল ম্যাচটি জিতে দেশে ফেরার।

প্রশ্ন : ঘরোয়া লিগে এতো রান করেন, জাতীয় দলে আসলে হচ্ছে না কেন?

বিজয় : জাতীয় দলে আসলে নিয়মিত থাকতে হবে টিমের সাথে। নিয়মিত খেলতে হবে। আপনি এক ম্যাচ বা দুই ম্যাচ যাচাইবাছাই করে বুঝতে পারবেন না যে ঘরোয়া ক্রিকেটে হচ্ছে জাতীয় দলে হচ্ছে না। এখন যারা ভালো ক্রিকেটার আছেন, তারা নিয়মিত ভালো করে করেই কিন্তু এই পর্যায়ে এসেছেন। যারা নতুন এসেছে তাদের নিয়মিত সুযোগ দিলে অবশ্যই ভালো করা সম্ভব।

প্রশ্ন : আপনার চোখে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আর ঘরোয়া ক্রিকেটের পার্থক্য কোথায়?

বিজয় : পার্থক্যটা আসলে ‘চাপ’ এর। আর কিছু না। এ ছাড়া আর কোনো পার্থক্য থাকে না যে পার্থক্যটা বড় ধরনের পার্থক্য। মানসিক কিছু পার্থক্য থাকে। তবে রানের যে অভ্যাস সেটা ঘরোয়া ক্রিকেটে যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও। উইকেট পাওয়ার ক্ষেত্রেও তাই। ঘরোয়া ক্রিকেটে যেমন খেলোয়াড়রা শতভাগ দিয়ে খেলার চেষ্টা করে, তেমনি আন্তর্জাতিকেও। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা খেলোয়াড়রা অভিজ্ঞ থাকে। তারা লম্বা সময় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলে। অনেক দর্শক থাকে, নিজের একটা প্রত্যাশা থাকে, সাংবাদিক থাকে সে কারণে আলাদা একটা প্রেসার থাকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। 

প্রশ্ন : বিশ্বকাপে ভালো ফল পায়নি বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কাতেও বিরাট লজ্জা পেয়েছে। কোথায় সমস্যা?

বিজয় : সমস্যা না। সবাই চেষ্টা করেছে। আমাদের থেকে তারা একটু ভালো ক্রিকেট খেলেছে। হোম সাপোর্ট পেয়েছে। তাদের থেকে আমরা বেটার কিছু করতে পারিনি। বিশ্বকাপে আমাদের সাকিব ভাই, মুশফিক ভাই, সাইফুদ্দিন, মুস্তাফিজ কিন্তু অনেক ভালো ক্রিকেট খেলছে। অনেকেই ভালো করেছে। সেটা আসলে ইতিবাচকভাবে নেওয়া উচিত। আমরা যদি এখনই প্রত্যাশা করি যে বিশ্বকাপ জিতে ফেলব, সেটা কিন্তু একটু বেশিই হয়ে যাবে। আর একটা ম্যাচ জিতলে কিন্তু টপ ফাইভে থাকতে পারতাম আমরা।

প্রশ্ন : অনেকদিন ধরেই সৌম্য রান পাচ্ছেন না। শুধু সৌম্য নন আরও অনেকেই  পারফর্ম করতে পারছেন না। প্রতিভাবান বলে তাদের ওপর আস্থা রাখছে দল। আপনার কি মনে হচ্ছে এখন সময় এসেছে প্রতিভাবানের পরিবর্ত যারা সামর্থ্যবান তাদের নিয়ে চিন্তা করার?

বিজয় : এটা আসলে নির্বাচকদের ব্যাপার। তারা ভালো বলতে পারবে। আমি খেলোয়াড় মানুষ, নিজের খেলা দিয়ে জায়গা ধরে রাখতে চাই।

প্রশ্ন : আপনি কি নির্বাচকদের থেকে আরো একটি সুযোগের প্রত্যাশায় থকাবেন?

বিজয় : নির্বাচকরা যদি ভালো মনে করেন নিবেন। আমি তখনও শতভাগ দেওয়ার চেষ্টা করব। তাদের যদি বিশ্বাস অর্জন করাতে পারি যে না ভালো কিছু করতে পারব ভবিষ্যতে ইনশাল্লাহ। আমার পারফরম্যান্স যদি বলে যে না জাতীয় দলে নেওয়ার মতো। তারা নিবে। এটা নিয়ে আসলে হা-হুতাশ করার কিছু নেই। ক্রিকেট প্লেয়ার। ভালো সময় আসবে। খারাপ সময় আসবে। রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৪ আগস্ট ২০১৯/আমিনুল