খেলাধুলা

বৃষ্টিতে ম্যাচ গেল পঞ্চম দিনে

চট্টগ্রাম থেকে ইয়াসিন হাসান : হঠাৎ ঝুম বৃষ্টি।  দৌড়ে ক্রিজ ছেড়ে ঝেরে দৌড় সাকিবের। সৌম্যও তাকে অনুসরণ করলেন। চতুর্থ আম্পায়ার শারফুদ্দৌলা ওয়ালটনের বিশাল ছাতা নিয়ে ঢুকলেন মাঠে। সাকিব তা নিয়ে ধরলেন মাথার ওপর। শরীর ভিজলেও সমস্যা নেই।  ব্যাট কোনোভাবেই ভিজতে দেওয়া যাবে না। তাতে ধার নষ্ট হবে।

সৌম্য ভেতরে ঢুকে নিজ দায়িত্বে ধরলেন ছাতা। দুজন হাসতে হাসতে বেরিয়ে গেলেন মাঠ থেকে। ওই বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম টেস্টের চতুর্থ দিনের খেলা শেষ। অবশ্য বৃষ্টি ভোগাল পুরোদিন। তৃতীয় দিনের খেলা পুষিয়ে নেওয়াসহ রোববার ৪২০ মিনিট খেলা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু খেলা হলো ২৯০ মিনিট। যদি পুরোদিন খেলা হতো তাহলে হয়তো সাকিব-সৌম্যর ওই হাসি মলিন হয়ে যেত! সাকিব-সৌম্য কেন হাসছিলেন তাও অবশ্য অজানা।

তবে নিশ্চিত পরাজয়ের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা দলের অধিনায়ক ও ব্যাটসম্যানের ওমন হাসি আসার কথা না। হয়তো পরাজয় মেনেই নিয়েছেন তাইতো দিনের খেলা শেষ হওয়ার পর সংবাদ সম্মেলনে এসে সাকিব হাসতেই থাকলেন! এমন ফুরফুরে সাকিবকে তো গোটা বিশ্বকাপেও দেখা যায়নি।

ইতিহাস রচনার থেকে আফগানিস্তান মাত্র চার উইকেট দূরে। বাংলাদেশকে তারা ৩৯৮ রানের টার্গেট দিয়েছে। প্রথম ইনিংসের ব্যাটিং ব্যর্থতার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ১৩৬ রান তুলতে বাংলাদেশ হারিয়েছে ছয় উইকেট। সাকিব ৩৯ ও সৌম্য শূন্য রানে অপরাজিত থেকে গেছেন সাজঘরে।

সাকিব অবশ্য ড্রেসিংরুমেই থাকতেন যদি রশিদ খান ফিরতি ক্যাচটা ধরতে পারতেন। ১১ রানে তার ক্যাচ ছাড়েন আফগান অধিনায়ক। সানরাইজার্স হায়দরাবাদের সতীর্থর লোপ্পা ক্যাচ ছাড়লেও দ্বিতীয় ইনিংসে রশিদই বাংলাদেশকে ভুগিয়েছে। দলের সেরা তিন ব্যাটিং স্তম্ভ মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ ও মুমিনুলকে ফেরান এ লেগ স্পিনার। আর মোহাম্মদ নবী একটি ও চায়নাম্যান জহির খানের পকেটে গেছে দুই উইকেট।

দুই উইকেট হাতে রেখে আফগানিস্তান ব্যাটিংয়ে নেমেছিল আজ। বেশিদূর যেতে পারেনি তারা। ২৩ রান যোগ করে হারায় শেষ দুই উইকেট। ২৬০ রানে অলআউট হয়ে প্রথম ইনিংসের লিডসহ তাদের পুঁজিতে রান ৩৯৭।  বাংলাদেশ টার্গেট পায় ৩৯৮ রানের।

শুরুটা মন্দ করেনি বাংলাদেশ। দেখেশুনে খেলে ১০ ওভার কাটিয়ে দিয়েছিলেন লিটন ও সাদমান। ১১তম ওভারে চায়নাম্যান জহির এসে ভাঙেন উদ্বোধনী জুটি। প্রথম বলে লিটনের বিরুদ্ধে উইকেটের পেছনে ক্যাচের আবেদন করে আফগানরা। আম্পায়ার নাইজেল লং আঙুল তুলে দেন। রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান লিটন। তবে একবল পর নিজেই উপহার দিয়ে আসেন উইকেট। শর্ট বল ব্যাকফুটে খেলতে গিয়ে এলবিডব্লিউ হন ৯ রানে। তিনে ব্যাটিংয়ে আসেন মোসাদ্দেক। ডানহাতি-বাঁহাতি কম্বিনেশন তৈরি করতে এবং প্রথম ইনিংসে সবথেকে ভালো ব্যাটিং করায় মোসাদ্দেকের ওপর ভরসা করেছিল দল। কিন্তু মোসাদ্দেকই সাজঘরে ফিরেছেন সবথেকে দৃষ্টিকটু ভাবে আউট হয়ে।

জহির খানের অফস্ট্যাম্পের বাইরের বল লং অফ দিয়ে বাইরে পাঠাতে চাইলেন। ভুলেই গেলেন ম্যাচটা যে টেস্ট, টি-টোয়েন্টি নয়। ব্যাট-বলে টাইমিং না হওয়ায় আসগর আফগানের হাতে গিয়ে পড়ে বল। এরপর চা-বিরতির আগে আরও দুই উইকেট। দুটোই রশিদ খানের পকেটে। মুশফিকুর রহিম ও মুমিনুল প্রায় সাজঘরে ফিরেছেন একই বল, একই শট খেলে। মুশফিক অবশ্য আউট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রিভিউ নষ্ট করে বাইরে যান।

নিজের তৃতীয় উইকেট বিরতির আগেই পেয়ে যাচ্ছিলেন আফগান অধিনায়ক। সাকিব তার গুগলিতে ফিরতি ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন। কিন্তু ডানহাতে বল তালুবন্দি করতে ব্যর্থ। সতীর্থদের আসা-যাওয়ার মিছিলের মাঝে দ্যুতি ছড়িয়ে গেছেন সাদমান। উইকেটে থিতু হয়ে একপ্রান্ত আগলে রেখেছিলেন। কিন্তু বিরতির পর যেভাবে মনোযোগ নষ্ট করে আউট হলেন তাতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল আফগানদের বিপক্ষে লড়াইয়ের কোনো জোশই নেই এই দলে! সোজা বলে এলবিডব্লিউ হয় ফেরেন ৪১ রানে।  মাহমুদউল্লাহ আবারও ব্যর্থ। রশিদের বলে ফরোয়ার্ড ড্রাইভ করতে গিয়ে ৭ রানে ক্যাচ দেন শর্ট লেগে।  

তখনও দিনের খেলার ১৩ ওভার বাকি ছিল।  সাকিব, সৌম্য কোনোমতে দিনটা পার করে দিলেন।  বৃষ্টি আফগানদের অপেক্ষায় রাখল। বাংলাদেশকে বাঁচাল।  ম্যাচ নিয়ে গেল পঞ্চম দিনে।

চট্টগ্রাম টেস্টের ফল কি হবে তা অনুমিতই।  শেষ দিনে পুরোদিন ব্যাটিং করা প্রায় অসম্ভব একটি কাজ! এমন দৃঢ় ব্যাটিংয়ের মানসিকতায় অনভ্যস্ত বাংলাদেশ। যদি করতে পারে তাহলে নিজেদের বড় লজ্জা থেকে বাঁচাবে। অন্যথায় টেস্ট ক্রিকেটের নবীনতম সদস্যরা বিজয়ের মালা পরবে সাগর পাড়ের স্টেডিয়ামে। রাইজিংবিডি/চট্টগ্রাম/৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯/ইয়াসিন/আমিনুল