খেলাধুলা

প্রতিবারই হতাশ হচ্ছেন বরিশালের ক্রিকেটপ্রেমীরা

প্রতিবারই বেরসিক বৃষ্টি বরিশালের ক্রিকেটপ্রেমীদের হতাশ করছে। বৃষ্টির কারণে বরিশাল স্টেডিয়ামে অন্তর্জাতিক ম্যাচ তো দূরের কথা, জাতীয় ক্রিকেট লিগ মাঠে গড়ানো নিয়ে শঙ্কায় আয়োজকরা। কেননা বৃষ্টির কারণে মাঠ ভেজা থাকায় বরাবরই ম্যাচের ভাগ্য হয় পরিত্যক্ত অথবা ড্র।

ফলে এখানকার ক্রিকেটপ্রেমী দর্শকদের গ্যালারিতে বসে জাতীয় কিংবা আন্তর্জাতিক ম্যাচ উপভোগ করার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাচ্ছে।

সূত্র মতে, ১৯৬৬ সালে নগরীর বান্দ রোডের পাশে চাঁদমারী এলাকায় কীর্তনখোলা নদীর তীরে ২৯.৬ একর জমির ওপর বরিশাল জেলা স্টেডিয়াম প্রতিষ্ঠিত হয়। আউটার স্টেডিয়ামসহ দেশের অন্যতম বৃহত্তম এই স্টেডিয়ামটি ২০০৭ সালে আধুনিকায়ন করা হয়। নদী তীরবর্তী মনোরম পরিবেশ, ৩৫ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতা সম্পন্ন গ্যালারি, ৫ তলা বিশিষ্ট প্যাভিলিয়ন, খেলোয়াড়দের পৃথক ড্রেসিং রুম, আন্তর্জাতিক মানের ৩টি ক্রিকেট পিচ, ম্যাচ অফিশিয়াল রুম, আম্পায়ার রুম, ৩ তলা বিশিষ্ট প্রেসবক্স, উন্নত মানের ফ্লাড লাইটসহ রয়েছে আনুষাঙ্গিক সব অবকাঠামো সুবিধা।

কিন্তু দীর্ঘ ৫৩ বছর ধরে অবহেলিত ছিল দক্ষিণাঞ্চলের আধুনিক এই স্টেডিয়ামটি। অতঃপর স্টেডিয়াম প্রতিষ্ঠার ৫৩ বছর পর প্রথমবারের মতো বরিশাল শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত স্টেডিয়ামে গেল ২৬ অক্টোবর বাংলাদেশ ও শ্রীলংকা যুব দলের ৪ দিনের ম্যাচ আয়োজন করা হয়।

প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক মানের এই ম্যাচটি দেখতে স্টেডিয়াম কানান কানায় পূর্ণ করেছিল দর্শকরা। কিন্তু সেখানেও বেরসিক বৃষ্টির হানা। প্রথম দুই দিন খেলা মাঠেই গড়ায়নি। শেষের দুই দিন খেলা মাঠে গড়ালেও ম্যাচ ড্র হয়। তবে বাংলাদেশ ও শ্রীলংকা যুব দলের ৪ দিনের ম্যাচ আয়োজনের সাফল্যে এবার আরও বড় পরিসরের আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজনের স্বপ্ন দেখছেন বরিশালের ক্রীড়া সংগঠক ও কর্মকর্তারা। কিন্তু সেই স্বপ্নকে আবারও পেছনে ফেলছে বৃষ্টি।

গত শনিবার (৯ নভেম্বর) থেকে ওয়ালটন জাতীয় ক্রিকেট লিগের ২১তম আসরের পঞ্চম রাউন্ডে বরিশাল ভেন্যুতে বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের খেলা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। এবারে এই খেলায় হানা দিল ঘূর্র্ণিঝড় বুলবুল। বুলবুলের প্রভাবে শুক্রবার থেকে বৃষ্টি হয়েছে বরিশালে। তাই শনি, রবি ও সোমবার খেলা শুরু করা যায়নি।

অতঃপর গতকাল মঙ্গলবার শেষ বিকেলে খেলা হলেও ম্যাচ হয় ড্র। আগামী ১৬ নভেম্বর বরিশাল বিভাগ ও ঢাকা মেট্রো খেলার এই মাঠেই হওয়ার কথা রয়েছে।

এর আগে ২০১৮ সালের ১৫ অক্টোবর ওয়ালটন ২০তম জাতীয় ক্রিকেট লিগের দ্বিতীয় ও তৃতীয় রাউন্ডের ভেন্যু হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছিল বরিশাল স্টেডিয়ামকে। ওই দিন জমজমাট অনুষ্ঠানের মাধ্যমে খেলার উদ্বোধন করা হলেও বৃষ্টির কারণে বরিশাল ও রাজশাহী বিভাগের প্রথম দুইদিন পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। তবে শেষের দুই দিনে মাঠে বল-ব্যাটের লড়াই হলেও ম্যাচ ড্র হয়েছিল।

এরপর ওই বছরের ২৯ অক্টোবর বরিশাল ও খুলনা বিভাগের খেলা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বৃষ্টির কারণে প্রথম দুই দিন খেলা হয়নি। ওই ম্যাচটিও ড্র হয়। প্রতিটি খেলায় এভাবে বৃষ্টি হানা দিয়ে বরিশালের ক্রিকেটপ্রেমী দর্শকদের হতাশ করছে।

উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের আগে বরিশাল স্টেডিয়ামে জাতীয় ক্রিকেট লিগের খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর জাতীয় লিগের ম্যাচের জন্য বরিশাল স্টেডিয়ামকে বিবেচনা করা হয়নি। এর অন্যতম কারণ ছিল বৃষ্টি। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল বলেন, বরিশালের শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত স্টেডিয়াম আন্তর্জাতিক ম্যাচের জন্য উপযোগী। তবে এখানকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা যদি উন্নত করে ফেলা হয় তাহলে আরও সুন্দর হবে। এখানে উন্নত ড্রেনেজ ব্যবস্থা প্রয়োজন।’

বাংলাদেশ ও শ্রীলংকা যুব দলের ম্যাচ রেফারি হয়ে বরিশালে এসে আশরাফুলের মতো একই কথা বলেছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক রকিবুল হাসানও। তিনি বলেন, আগের চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছে বরিশাল স্টেডিয়াম। নদীর তীরে মনোরম পরিবেশে এমন স্টেডিয়াম দেশে দ্বিতীয়টি নেই। তবে এখানে উন্নতমানের ড্রেনেজ ব্যবস্থা প্রয়োজন।’ একই মন্তব্য করেন বরিশাল ও চট্রগ্রাম বিভাগের খেলার ম্যাচ রেফারি সামসুর রহমান।

এ ব্যপারে বরিশালের জেলা প্রশাসক ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি এসএম অজিয়র রহমান বলেন, গেল ২৬ অক্টোবর বাংলাদেশ ও শ্রীলংকা যুব দলের ৪ দিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজনের পূর্বে স্টেডিয়ামটির ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নত করা হয়েছে। আরও উন্নতি করার জন্য অর্থ বরাদ্ধের প্রয়োজন। তবে এমনিভাবে জাতীয় লিগের ভেন্যু নির্ধারণ হলে ধীরে ধীরে এই সমস্যার সমধান করা সম্ভব। তাছাড়া এমনিভাবে বৃষ্টি আসলে কারো কিছুই করার থাকে না। বরিশাল/জে. খান স্বপন/আমিনুল