খেলাধুলা

দল হিসেবে কেন এত জনপ্রিয় নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট!

ক্রিকেট বিশ্বে ভদ্র জাতি বলতেই নিউজিল্যান্ড জাতীয় দলের কথা মাথায় আসবে। শুধু আচরণ দিয়ে নয়, মাঠের খেলায়ও জুড়ি নেই কিউইদের।

ক্রিকেটীয় পরাশক্তি হিসেবে নিজেদের জায়গা পোক্ত করতে না পারলেও সমর্থকদের প্রিয় দল হিসেবে সবসময় জনপ্রিয় নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট। ঠিক কি কারণে দলটির এত জনপ্রিয়তা? কিছু কারণ ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করা হলো।

জাতি হিসেবে ক্রিকেট দলটির সাফল্যের মাত্রা

৪৮ লক্ষ মানুষের দেশ নিউজিল্যান্ড। দেশটির জাতীয় খেলা রাগবি। ক্রিকেট দ্বিতীয় বা তৃতীয় খেলা হিসেবে প্রাধান্য পায়। তবুও ক্রিকেটে দেশটির সাফল্য মোটামুটি ঈর্ষণীয় পর্যায়ের। এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপের স্বাদ না পেলেও কিউইরা সর্বোচ্চ ১০ বার সেমিফাইনাল খেলেছে। শেষ দুইবার তো ফাইনাল খেলে রানার্স আপ হয়েছে। এছাড়াও টেস্টে বর্তমানে দুই নম্বরে আছে দলটি। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতেও অবস্থান চারের মধ্যে।

আক্রমণাত্মক কিন্তু শান্ত কিউই শিবির

দল হিসেবে সবচেয়ে বেশি ফেয়ার প্লে অ্যাওয়ার্ড জেতা দল নিউজিল্যান্ড। মাঠে কিউই খেলোয়াড়দের সবসময় শান্ত থাকতে দেখা যায়। তাইতো বিরাট কোহলির মতো আক্রমণাত্মক ক্রিকেটারও বলতে বাধ্য হয়, ‘তাদের বিপক্ষে প্রতিশোধ নেওয়ার ইচ্ছাও জাগে না। কারণ, দল হিসেবে তারা এতোই অসাধারণ।’

তবে মাঠে শান্ত ক্রিকেটাররা খেলায় জেতার জন্য থাকে সবচেয়ে আক্রমণাত্মক। হারের আগে হারতে রাজি নয় দলটি। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত জয়ের জন্য আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলে যায় তারা। ২০১৯ বিশ্বকাপের ফাইনালে শেষ বল পর্যন্ত হাল ছাড়েনি কিউইরা। পুরো বিশ্বকাপে তাদের আচরণ বা উদযাপনে ছিলো না কোনো উগ্রতা।

প্রতিটি দলকে সম্মান করা কিউইদের কাছে ক্রিকেট শুধুই খেলা

২০১৪ সাল, শেফিল্ড শিল্ডের এক ম্যাচ খেলার সময় মাঠে বলের আঘাতে মারা যান অস্ট্রেলিয়ান ফিল হিউজ। তার ঠিক ২৪ ঘন্টা পরে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট খেলতে নামে কিউইরা। মাঠে নেমে পাকিস্তানি বোলাররা উইকেট নিয়ে উদযাপন করে। কিন্তু কিউই শিবির দেখায় ভিন্ন চিত্র। উইকেট শিকার করলেও হিউজের সম্মানে তারা ছিলো নির্বিকার। ঠিক তাই, এটাই নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট। প্রতিপক্ষ কিংবা প্রতিটি খেলোয়াড়দের সম্মান জানানো কিউইদের ক্রিকেট কেবলই একটি খেলা।

নিষ্ঠুর ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় স্বাক্ষী নিউজিল্যান্ড

২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনাল, মুখোমুখি ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড। ম্যাচে আম্পায়ারের ভুলে ভাগ্যের কাছে মার খায় কিউইরা। ম্যাচ টাই হয়ে খেলা গড়ায় সুপার ওভারে। সেখানেও টাই হয় খেলা। বিতর্কিত বাউন্ডারি আইনে ট্রফি জেতে ইংল্যান্ড। ক্রিকেট ইতিহাসে এত বড় নিষ্ঠুরতার শিকার হয়নি আর কোনো দল। কিউইদের কথা ভেবেই হয়তো মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছিলেন, ‘ঈশ্বর থাকেন ওই গ্রামে, ভদ্রপল্লীতে। এখানে তাঁহাদের খুঁজিয়া পাওয়া যাইবে না।’

‘কেন উইলিয়ামসনের’ মতো অধিনায়ক

একজন আদর্শ অধিনায়কের যতগুলো গুণ থাকা উচিত কেন উইলিয়ামসনের মধ্যে তার সবই আছে। দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া, জয়ের কৃতিত্ব ভাগাভাগি করে নেওয়া, হারের দায় অধিনায়ক হিসেবে নিজের কাঁধে নেওয়া সম্ভব সব গুণই আছে উইলিয়ামসনের। এসবের বাইরে উইলিয়ামসনের বড় গুণ নিজেকে সব পরিস্থিতিতে শান্ত রাখতে পারা। পরাজয়ের গ্লানি বা ট্রফি হারানোর বেদনাকে সঙ্গী করেও প্রতিপক্ষকে সম্মান জানানোর ক্ষমতা। আর অসাধারণ ব্যাটিংশৈলী তো রয়েছেই। এসব গুণের কারণে অধিনায়ক উইলিয়ামসন হয়ে উঠেছেন সবার প্রিয় ক্রিকেটার। তাই সমর্থকদের কাছে তার জনপ্রিয়তার পাশাপাশি বাড়ছে দলেরও জনপ্রিয়তা। ঢাকা/কামরুল/আমিনুল