খেলাধুলা

‘বড় পরিসরের প্রেক্ষিতে অনেক কাজ করার বাকি’

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) টেকনিক্যাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক ডিরেক্টর হিসেবে আবারও নিয়োগ পেয়েছেন ইংলিশ বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ান পল থমাস স্মলি।

এর আগে ২০১৬ থেকে ২০১৯ বাংলাদেশের ফুটবল নিয়ে কাজ করেছেন তিনি। প্রথম মেয়াদে পরিকল্পনার ২৫ শতাংশ বাস্তবায়ন করতে পারেননি। এবার নিয়োগ পেয়ে বড় কোনো স্বপ্ন দেখাননি। দ্বিতীয় মেয়াদে ফুটবলের উন্নয়নে রুটিনমাফিক কাজ করতে চান। জাতীয় দলের পাশাপাশি মনোযোগ দিতে চান তৃণমূল ফুটবলে।

আনুষ্ঠানিক নিয়োগের পর বুধবার পল থমাস স্মালি কথা বলেন গণমাধ‌্যমে।   

আবারো বাংলাদেশ ফুটবলের টেকনিক্যাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক ডিরেক্টর হওয়ার জন্য আপনাকে অভিনন্দন। কেন আপনি ব্্রুনেই ছেড়ে বাংলাদেশে ফিরে আসলেন?

পল থমাস: ব্্রুনেইয়ে আমার দায়িত্ব ছিল মূলত জাতীয় দলের প্রধান এবং ডেভেলপমেন্ট প্রধানের। সেখানে বেশ কিছু দারুণ অভিজ্ঞতা ও স্মৃতি রয়েছে যা আমি উপভোগ করেছি। তবে করোনাভাইরাস মহামারি আকার ধারণ করায় সেখানকার ফুটবল কার্যক্রম অচল হয়ে পড়ে। ফলে আমি পরিবারের কাছে ফিরে যাওয়ার জন্য রাজি হই। আর বাংলাদেশ সবসময় আমার হৃদয়ের মধ্যস্থলে ছিল। এখন সেদেশের ফুটবলে আবার অবদান রাখার সুযোগ পেয়েছি। আমি বেশ শিহরিত যে বাফুফে সভাপতি, টেকনিক্যাল কমিটি ও কার্যনিবার্হী সদস্যদের দেওয়া একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে কাজ করব।

কোনো সন্দেহ নেই আন্তর্জাতিক ফুটবল অঙ্গনে আপনার সুনাম রয়েছে। বাংলাদেশে আপনি তিন বছর কাজ করেছেন। আপনি এ তিন বছরে কী সফলতা দেখছেন বা এ সময়ে আপনার কাজের মূল্যায়ন কিভাবে করবেন?

পল থমাস: আমার বায়োডাটা,অভিজ্ঞতা, দক্ষতা বেশ সুনাম কুড়িয়েছে ইউরোপ ও এশিয়ার ফুটবলের বাজারে। আর বাংলাদেশে এসে প্রথম ধাপে যা কিছু করেছি, তাতে আমি সন্তুষ্ট। কিন্তু বাংলাদেশের জন্য এখনো দক্ষিণ এশীয় অঞ্চল ও আরও বড় পরিসরের প্রেক্ষিতে অনেক কাজ করার বাকি। এসব বাফুফে সভাপতি, টেকনিক্যাল কমিটি, কমিটির সদস্যরা মূল্যায়ন করবেন। টেকনিক্যাল ডিরেক্টরের পক্ষে সব কিছু করা অসম্ভব। আমি অজুহাত খুঁজছি না, কিন্তু অনেক সময় অনেক ভূমিকায় কাজ করতে হয় টেকনিক্যাল ডিরেক্টরকে। তবে আমি বলব এ কাজটা আমি বেশ উপভোগ করি।

আপনাকে ২০১৬ সালে চার বছরের একটা পরিকল্পনা দেওয়া হয়েছিল অথচ এর ২৫ শতাংশ পরিকল্পনাও বাস্তবায়িত হয়নি। এ ব্যর্থতার দায়ী কে? আর আপনার পরিকল্পনা ছিল বর্ষা মৌসুমে ফুটবল লিগ যেন হয়- কেন?

পল থমাস: ঘরোয়া ফুটবলও আন্তর্জাতিক ফুটবলের জন্য একটা কাঠামোগত পরিকল্পনার সমন্বয় করতে গেলে বাংলাদেশের মতো দেশে সমালোচনা শুনতে হবে।২০১৬ সালে চার বছরের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল তাতে আমি দেখেছি অনেকেই এটার পক্ষে ছিল না। কারণ আবহাওয়ার কারণে ফুটবল ক্যালেন্ডারে পরিবর্তন আসতে পারে, তাই বাইরের দশের সঙ্গে এর সমন্বয় করা কঠিন ছিল। তাছাড়া বিজ্ঞাপনের কথা বলে ক্লাবগুলো এ জন্য অনেক সময় ব্যয় করেছে। দুর্ভাগ্য চার বছরের সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি। এখন এই পরিকল্পনা পুনর্মূল্যায়ন করে দেখতে হবে কিভাবে ভবিষ্যতে এগিয়ে যাওয়া যায়?

আপনি আসার আগে যুব ফুটবল নিয়ে কাজ হয়েছে। আপনি এসেও এই কাজ করলেন। তাহলে আপনার সাফল্য কোথায়? কেন আপনি তৃণমূল ফুটবল নিয়ে কাজ করলেন না?

পল থমাস: আমি আধুনিক ও যুগোপযোগী পদ্ধতি অনুসরণ করেছি। সবাইকে নিয়ে কাজ করতে চেয়েছি, যা ছিল দৃশ্যমান। যে উপায়ে কাজ করলে, ফুটবলের উন্নয়ন হবে, সেসব ক্ষেত্রে কাজ করেছি। তবে এটাও দেখতে হবে পাশের দেশগুলোর চেয়ে ফুটবলে আমাদের বাজেট ছিল কম। এ কাজে ধারাবাহিকতাও দরকার ছিল, কিন্তু তাও হয়নি। তবু তৃণমূল ফুটবলে বেশ কিছু কাজ হয়েছে।ভবিষ্যতে এ কাজে আরো মনোযোগ দিতে হবে।

সারাদেশের সব একাডেমিকে এক সঙ্গে যুক্ত করছে বাফুফে। আপনি কী মনে করেন, আপনার টেকনিক্যাল কমিটি সঠিক দিক নির্দেশনা দিতে পারবে?

পল থমাস: ফেডারেশন একটি একাডেমি অ্যাক্রেডিটেশন স্কিম চালু করবে। বাংলাদেশে অনেক বেসরকারি একাডেমি ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ফুটবলের বাজারের আওতায় নেই। এসব একাডেমির সঙ্গে ফেডারেশনের একটি অর্থবহ সম্পর্ক বিদ্যমান থাকবে। তৃণমূল, একাডেমি ও এলিট ফুটবলের মাঝে একটা সম্পর্কের বিস্তার ঘটাবে এই অ্যাক্রেডিটেশন স্কিম। এর মধ্যে ফেডারেশন একাডেমিগুলোকে স্বীকৃতি দেবে ও পুরস্কৃত করবে। এতে খেলোয়াড়, কর্মকর্তা, স্বেচ্ছাসেবী ও কোচদের মর্যাদা বেড়ে যাবে। আর যেসব একাডেমি বাফুফের বেঁধে দেওয়া শর্ত পূরণ করবে তাদের মধ্যে এক, দুই ও তিন তারকার স্বীকৃতি প্রদান করা হবে। এই স্কিম ফুটবলে প্রতিভা খোঁজের জন্য কাজ করবে। বাফুফে ও ক্লাবগুলোকে আরও সহায়তার জন্য জেলা ক্রীড়া সংস্থার সুযোগ সুবিধা বাড়াতে উৎসাহ প্রদান করবে এই প্রকল্প।

আগেরবার মেয়েদের ফুটবলে বেশি কাজ করেছেন। এবারো একই রকম ভূমিকা রাখতে চান?

পল থমাস: ফুটবলে টেকনিক্যালি উন্নয়নের জন্য সবসময়ই বাংলাদেশের সব গুরুত্ব¡পূর্ণ দিকে মনোযোগ দেওয়ার ইচ্ছা আমার ছিল । আর মেয়েদের ফুটবল এ মুহূর্তে বেশ গুরুত্ব¡পূর্ণ একটা অংশ। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার দিক বিবেচনায় মেয়েদের ফুটবলে অনেক সুযোগ রয়েছে। এ জন্য মেয়েদের ফুটবলে অনেক সময় দিতে হয়েছে এবং বেশ সাফল্য পেয়েছিলাম। তবে আমি বলব আমার সবসময়ই কাজের প্রতি একাগ্রতা রয়েছে। তাই ফুটবলের উন্নয়নের জন্য টেকনিক্যাল দিক দিয়ে আমি সর্বোচ্চটা প্রদাান করব।

বাংলাদেশের ফুটবল নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

পল থমাস: আমরা ২০১৬ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত যা করেছি তার মূল্যায়ন করবো প্রথমে। যা শিখলাম, তা মাথায় রাখতে হবে। এরপর এএফসি ও ফিফার সঙ্গে মিলিয়ে চার বছররে ফুটবল উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। এসবই রুটিনমাফিক কাজ। তবে এসব কাজই শেষ কথা নয়। আরও অনেক কাজ করতে হবে আমাদের।

   

ঢাকা/ইয়াসিন