খেলাধুলা

আমিনুলের স্বপ্ন মাহদির কাঁধে

বাবা মানেই এমন এক শক্ত খুঁটি, যার ওপর পাহাড়সম দায়িত্ব। আর তিনি সন্তানদের পরম নির্ভরতার ছাউনি। বাবা শুধু তার নিজের স্বপ্নের বাহক-ই নন, তাকে পরম মমতা ও যত্নের সঙ্গে লালন করতে হয় পরিবারের প্রতিটি স্বপ্নকে।

আর বাবার স্বপ্ন?

হ্যাঁ, সন্তান যদি বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে পারেন তাহলে তো কথাই নেই, গর্বে বুক ফুলে যায় বাবাদের। সেই দলের সদস্য হওয়ার পথে বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল। তার ছেলে মাহদি ইসলাম হাঁটছেন বাবার দেখানো পথেই। বাবা যেমন ব্যাট-বল নিয়ে দেশের পতাকা উড়িয়েছেন, মাহদিও একই স্বপ্ন লালন-পালন করে বড় হচ্ছেন।

রাইজিংবিডি’র ‘যেমন বাবা তেমনি ছেলে’–আয়োজনের দ্বিতীয় পর্বে আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও মাহদি ইসলামের গল্প জানাবো।

বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি আসে আমিনুল ইসলামের ব্যাট ধরে। ছিলেন বাংলাদেশের অধিনায়কও। বাংলাদেশের অন‌্যতম সফলতম ব‌্যাটসম‌্যানদের একজন তিনি। সেই সাথে ক্রিকেট ফেরি করে বেড়িয়েছেন বিভিন্ন দেশে। আইসিসি এবং এসিসির শীর্ষ কর্মকর্তা হিসেবে ক্রিকেট ছড়িয়ে দেওয়ার কাজও নিবিড়ভাবে করেছেন সাবেক এ ক্রিকেটার।

বলার অপেক্ষা রাখে না ক্রিকেট তার কাছে নিউক্লিয়াস। আর তার পরিবারের কেউ ক্রিকেটের পতাকা বহন করবে না তা কী করে হয়! রক্তেই তো ক্রিকেট। তাইতো ছোট ছেলে মাহদি ইসলাম যুক্ত ক্রিকেটের সঙ্গে। ক্রিকেটার হওয়ার পথে অনেক দূরই এগিয়ে গেছেন মাহদি। বাবার মতো ডান হাতেই ব‌্যাটিং করেন। সাথে যুক্ত ডান হাতে মিডিয়াম পেস বোলিং।

বাবা আমিনুল ইসলাম বর্তমানে আইসিসির ম‌্যানেজার হিসেবে অস্ট্রেলিয়ায় কর্মরত। চাকরিসূত্রে তার পরিবারের আবাস্থল অস্ট্রেলিয়ায়। সেখানেই মাহদি ইসলাম গড়ছেন ক্রিকেট ক‌্যারিয়ার। এরই মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার অনূর্ধ্ব-১৫ দলের হয়ে ইনডোর টুর্নামেন্ট খেলেছেন। এছাড়া ড্যানিডং ক্রিকেট ক্লাবে খেলছেন। ক্লাবটির হয়ে প্রিমিয়ার লিগের তৃতীয় দলে খেলছেন। আগামী বছর দ্বিতীয় দলের হয়ে খেলবেন।

এরপর বাবার ইচ্ছে ছেলেকে বাংলাদেশে খেলতে পাঠাবেন। সে লক্ষ্যেই মাহদিকে তৈরী করছেন আমিনুল ইসলাম, ‘এটা পরম সৌভাগ্যের ব্যাপার হবে যদি আমার ছেলে বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে খেলতে পারে। এ মুহূর্তে ও খেলা শিখছে, সেটা শিখুক। আমি অবশ্যই ওকে বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব-১৯ দলে ট্রায়ালের অংশগ্রহণের ব্যবস্থা করবো। এরপর যদি সুযোগ হয় তাহলে বাংলাদেশের জার্সি গায়ে খেলার সুযোগ কে হাতছাড়া করবে? তবে সবার আগে তাকে খেলা বুঝতে হবে। তারপর অতদূরের চিন্তা। এ মুহূর্তে তার খেলা শেখার ব্যাপারে আমি বেশি আগ্রহী।’

অস্ট্রেলিয়ার পেসার পিটার সিডল ও জেমস প‌্যাটিনসন যে ক্লাবে অনুশীলন করেন সেখানেই নিয়মিত হাত পাকাচ্ছেন মাহদি। ওখানকার সুযোগ-সুবিধার কথা তুলে ধরে বুলবুল বলেন, ‘এখানে ১৭টি নেট আছে টার্ফের। চার থেকে পাঁচটি সিনথেটিক উইকেট আছে। দুইটি বড় বড় মাঠ আছে। ছোটোখাটো স্টেডিয়াম আছে। সব মিলিয়ে এখানে ক্রিকেটার হয়ে ওঠার সুযোগ-সুবিধা দারুণ।’ ২০১৮ সালে বাবার সাথে দেশে এসেছিলেন মাহদি। বিজয় দিবস ক্রিকেটে বাবার হাত ধরে গিয়েছিলেন মিরপুরের শের-ই-বাংলায়। সেদিন নিজের ব‌্যাটিং আইডল হিসেবে আমিনুল ইসলামের নামই বলেছেন মাহদি, ‘বাবার খেলা দেখতে বেশ ভালো লাগে। আমি বাবার খেলা অনুসরণ করি। বাবাই আমার আইডল। তিনি আমার কোচ।’

বাবার মতো ছেলেরও ইচ্ছা লাল-সবুজকে প্রতিনিধিত্ব করার, ‘বাংলাদেশেই আমার জন্ম। আমি একজন বাংলাদেশি। বাবার মতো আমিও স্বপ্ন দেখি বাংলাদেশের হয়ে খেলার। বাবার পথ ধরে এগিয়ে যেতে পারলে নিজেকে ভাগ‌্যবান ভাববো এবং তার দেখানো পথ চলতে ভালো লাগে।’

মাহদির স্বপ্নগুলো ক‌্যানভাসে রঙ ছড়াচ্ছে। ইচ্ছেগুলো ডানা মেলছে। লাল-সবুজের জার্সি গায়ে জড়ালে পূরণ হবে পিতা-পুত্রের স্বপ্ন। আপাতত দুজনের মুখে একটাই স্লোগান, ‘বড় মঞ্চের জন‌্য তৈরী হওয়া।’

 

ঢাকা/ইয়াসিন/কামরুল