খেলাধুলা

ধোনি-গেইলরা আরেকটি বিশ্বকাপ পাবেন তো?

প্রাণঘাতী মহামারি করোনাভাইরাস চলতি বছরের মার্চ থেকে পুরো বিশ্ব কার্যত অচল করে দিয়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে খেলাধুলা।

ধীরে ধীরে সময়ের সঙ্গে করোনা সঙ্কটকে পাশ কাটিয়ে আবার শুরু হচ্ছে সব। তবে থমকে গেল চলতি বছরের অক্টোবর-নভেম্বরে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। এক বছর পিছিয়ে আগামী বছর একই সময়ে নিয়ে যাওয়া হলো বিশ্বকাপের সূচি।

বিশ্বকাপের এই পিছিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে থেমে যাচ্ছে অনেক ক্রিকেটীয় কিংবদন্তির স্বপ্ন। যাদের স্বপ্ন ছিল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মঞ্চ দিয়ে শেষ করবেন ক্রিকেট ক্যারিয়ার। কিন্তু বিশ্বকাপ পিছিয়ে যাওয়ায় আক্ষরিক অর্থে সেই সম্ভাবনা প্রায় শেষ। কিন্তু সত্যি কি তাই? জানার চেষ্টা করবো আমরা।

ক্রিকেটীয় এই কিংবদন্তিদের মধ্যে দুইজন অধিনায়ক হিসেবে জিতেছেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। তারা হলেন ভারতের সাবেক অধিনায়ক মাহেন্দ্র সিং ধোনি (২০০৭ সালে) এবং শ্রীলঙ্কার লাসিথ মালিঙ্গা (২০১৪ সালে)। এছাড়াও দুই ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তি ক্রিস গেইল এবং ডোয়াইন ব্রাভো দুইবার পেয়েছেন এই বিশ্বকাপের স্বাদ। তারা ছাড়াও প্রোটিয়া কিংবদন্তি এবি ডি ভিলিয়ার্স এবং দুই পাকিস্তানি শোয়েব মালিক এবং মোহাম্মদ হাফিজের ক্যারিয়ার গতিপথ সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবো।

লাসিথ মালিঙ্গা ২০১৯ বিশ্বকাপের দু’একটি ম্যাচে মাঠে নেমেছিলেন। ক্রিস গেইল বিশ্বকাপের পর দু’একটি ওয়ানডে খেলেছিলেন বটে। তবে টি-টোয়েন্টিকেই পরের বিশ্বকাপ পর্যন্ত চালিয়ে নেয়ার লক্ষ্য ছিল। শুধু গেইলই নন, একই চিন্তা ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের ডিজে বয় হিসেবে পরিচিত ডোয়াইন ব্রাভোরও।

মাহেন্দ্র সিং ধোনি

অধিনায়ক হিসেবে সম্ভব সব আইসিসি ট্রফি জিতেছেন ধোনি। তবে গত বছরের ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের পর আর মাঠে নামা হয়নি এই ক্রিকেটারের। আইপিএল দিয়ে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি নেওয়ার পরিকল্পনা করা ধোনি নিয়েছিলেন স্বেচ্ছা বিরতি। কিন্তু করোনায় সব এলোমেলো হয়ে যাওয়াতে এই কিংবদন্তির ক্যারিয়ার এখন শঙ্কার মুখে।

তার উপর আইপিএলের পারফরম্যান্স দিয়ে সামনের বিশ্বকাপের জন্য জানান দিয়েও স্বস্তিতে থাকতে পারবেন না ধোনি। কারণ সামনের বছরের বিশ্বকাপের সময় ৪০ বছরের বুড়োর তকমা লেগে যাবে গায়ে। তবে ব্যাক্তি যখন ধোনি, তখন শেষ বলে কিছু থাকে না। কারণ, চরিত্রগতভাবেই ধোনি শেষে খেলতেই বেশি স্বচ্ছন্দ্য বোধ করেন।

লাসিথ মালিঙ্গা

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ১০৭টি উইকেটশিকারি বোলার হচ্ছেন মালিঙা। তিনি আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন, ২০২০ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলেই অবসরে চলে যাবেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য হয়ে এবার তার সামনে থাকছে না বিশ্বকাপ আসরের হাতছানি।

সর্বশেষ বিশ্বকাপ শেষে খেলেছেন দুই-তিনটা ম্যাচ। বয়স প্রায় ৩৮ ছুঁলেও অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার মেলে ধরছেন এখনো। গত বছরে আইপিএলে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সকে চ্যাম্পিয়ন করিয়েছেন। বিশ্বকাপেও ছিলেন দারুণ ফর্মে। এরপর গত সেপ্টেম্বরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টানা চার বলে চার উইকেট নিয়ে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন। ফিটনেস উতরাতে পারলে তাই হয়তো পরের বিশ্বকাপও খেলতে পারেন লঙ্কান এই গ্রেট।

ক্রিস গেইল ও ডোয়াইন ব্রাভো

‘ইউনিভার্স বস’ খ্যাত ক্রিস গেইল এরই মধ্যে ৪০ বসন্ত পার করে ফেলেছেন। ইনজুরিও সমস্যা হয়ে আছে তার। এবছরের বিশ্বকাপ দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে থামার পরিকল্পনা করেছিলেন তাই। কিন্তু বিশ্বকাপ স্থগিত হয়ে যাওয়ার কারণে গেইল কি তার ক্যারিয়ার আর লম্বা করবেন? এমন প্রশ্ন উঠেই আসছে।

এদিকে গেইলের সতীর্থ ডোয়াইন ব্রাভোও আগে থেকে ঘোষণা দিয়ে রেখেছিলেন ২০২০ বিশ্বকাপ খেলে ব্যাট-প্যাড তুলে রাখবেন। কিন্তু বিশ্বকাপ স্থগিত হওয়ার কারণে কি তার ক্যারিয়ারেরও শেষ দেখছেন অনেকে।

এবি ডি ভিলিয়ার্স

ক্রিকেট খেলতে খেলতে ক্লান্তি ভর করেছে, এমন কথা তুলে ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগে নিয়েছিলেন অবসর। ফলে খেলতে পারেননি ইংল্যান্ডের মাটিতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ। তবে এরপরই ঘোষণা দেন ২০২০ বিশ্বকাপ খেলতে চান তিনি। এই লক্ষ্যে মাঠেও ফেরেন। দলে ফিরে আসার একটা সময়সীমাও দেন। ফলে এই বছর বিশ্বকাপ হলে ভিলিয়ার্সের খেলার সম্ভাবনা ছিল শতভাগ। কিন্তু বিশ্বকাপ এক বছর পিছিয়ে যাওয়ার কারণে এই প্রোটিয়ানের ফেরার সম্ভাবনাটাও কমে গেলো। তবে ফিটনেস ধরে রাখতে পারলে মধ্য ৩৬-এও আগামী বিশ্বকাপে ঝড় তুলতে পারেন এই ক্রিকেট কিংবদন্তি।

মোহাম্মদ হাফিজ এবং শোয়েব মালিক

চলতি বছরের বিশ্বকাপ খেলে অবসরে যাবেন হাফিজ এবং মালিক, এটা প্রায় নির্ধারিত ছিল। তবে বিশ্বকাপ পিছিয়ে যাওয়ায় নতুন করে আবার পরিকল্পনা করতে হবে এই দুই ক্রিকেটারকে। আসছে অক্টোবরে ৪০ বছরে পা দেওয়া হাফিজের অবশ্য তাতে কোনো সমস্যা নেই। তিনি জানিয়ে দিয়েছিলেন, যদি বিশ্বকাপের সূচি পরিবর্তন হয়, তাহলে অবসরের চিন্তাটাও নতুন করে করবেন তিনি। তবে দলে জায়গা ধরে রাখতে পারবেন তো?

একই প্রশ্ন উঠে আসে শোয়েব মালিকের ক্ষেত্রে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে এই পাকিস্তানি ক্রিকেটারের বয়স হবে ৩৯। ফর্ম এবং ফিটনেস ধরে রাখা তাই বড় চ্যালেঞ্জ হবে তার সামনে। এছাড়াও গত বিশ্বকাপের মাঝপথে ওয়ানডে থেকে নিতে হয়েছে অবসর। একই ঘটনার শিকার আরেক বিশ্বকাপেও নিশ্চয় হতে চাইবেন না তিনি। ঢাকা/কামরুল