খেলাধুলা

সুনামির তাণ্ডব থেকে কপালজোরে বেঁচেছি: কুম্বলে

২৬ ডিসেম্বর ২০০৪। ভারত মহাসাগরের ভূমিকম্পে মহাপ্রলয়ঙ্কারী সুনামির সূত্রপাত হয়। প্রায় ৩০ মিটার (১০০ ফুট) উচ্চতার ঢেউগুলো আছড়ে পড়ে ভারত মহাসাগরের বিভিন্ন উপকূলে৷ সুনামিতে এশিয়ার ১৪টি দেশের ২ লক্ষেরও বেশি মানুষ মারা যান। ভারতে ১০, ১৩৬ জন সুনামিতে মারা যান।

সুনামির তাণ্ডবের শুরুর সময় চেন্নাইয়ে সমুদ্রের কাছে এক রিসোর্টে ছিলেন ভারতের সাবেক অধিনায়ক ও কোচ অনীল কুম্বলে। সেদিন পরিবার নিয়ে বেঁচে ফিরেছেন কুম্বলে। তবে মহাপ্রলয়ঙ্কারী সুনামির আঁচ কিছুটা হলেও টের পেয়েছেন তিনি। সেদিনের ঘটনা নিয়ে দীর্ঘদিন পর কথা বললেন সাবেক এ লেগ স্পিনার। ভারতের বর্তমান স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিনের অনলাইন শো ‘ডিআরএস উইথ অশ্বিন’ – এ যোগ দিয়ে সেদিনের স্মৃতিচারণ করেন কুম্বলে। 

তার ভাষ্যে, ‘আমি তখন ফিশারম্যান্স কোবে (চেন্নাই) ছিলাম। আমার সঙ্গে ছিল স্ত্রী ও ছেলে। ছেলের বয়স তখন মাত্র দশ মাস। আমরা বিমানে চেন্নাই গিয়েছিলাম। ফিরেছিও বিমানে। ওখান থেকে ফিরতে বাই রোডে ছয় ঘণ্টার মতো প্রয়োজন হয়। কিন্তু আমরা চাইনি ছেলে এতোটা পথ গাড়িতে কাটাক। আমরা বেশ ভালো ছুটি কাটিয়েছিলাম এবং যেদিন সুনামি আঘাত করেছিল সেদিনই আমাদের চেন্নাই ছেড়েছি। আমাদের সাড়ে এগারটায় ফ্লাইট ছিল। তাই সাড়ে নয়টায় হোটেল ত্যাগ করি।’

‘কোনো না কোনো কারণে আমার স্ত্রীর সারারাত সেদিন ঘুম আসেনি। ভেতর থেকে স্বস্তিবোধ করছিল না। বারবার আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল, ঘড়িতে কয়টা বাজে? আমি ভালো অনুভব করছি না।’ এজন্য আমরা খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে যাই এবং সমুদ্র পাড়ে দাঁড়িয়ে কফি পান করি। তখন পরিবেশ একদম শান্ত, মেঘাচ্ছন্ন। তবে সমুদ্রের গর্জন টের পাচ্ছিলাম।’

‘সকাল সাড়ে আটটায় আমরা ব্রেকফাস্টে যাই। তুমি (অশ্বিন) তো জানোই, ব্রেকফাস্টের জায়গাগুলো সচরাচর সৈকতের কাছে হয়। আমরা যখন টেবিলে তখন প্রথম বড় একটি ঢেউ আঘাত করে। আমি খেয়াল করিনি প্রথমে। এরপর একটার পর একটা ঢেউ আঘাত করতে থাকে। আমরা দ্রুত নাস্তা করে হোটেল চেক আউট করি। তখন অনেক তরুণ দম্পতিতে দেখি স্নানের পোশাকে উঠে আসছে। তারা প্রত্যেকেই ভিজে একাকার এবং ভীত।’

‘আমি তখনও ধারণা করতে পারছিলাম না কী হতে যাচ্ছে! আমরা দ্রুত চলে আসি এবং গাড়িতে উঠে বসি। ফিশারম্যান্স কোব থেকে বেরিয়ে আমাদেরকে একটি ব্রিজ পাড় হতে হয়। শুনলে অবাক হবে, ওই ব্রিজে প্রায় পানি উঠে এসেছিল। হয়তো মাত্র একফুটের দূরত্বে পানি। পানির উচ্চতা এতোটা বেড়ে গিয়েছিল তখন।’

‘আমরা ওই সময়ে খেয়াল করলাম আশপাশের মানুষ দৌড়াদৌড়ি শুরু করেছে। আমরা সিনেমায় দেখেছি, মানুষ বিপদের সময় দ্রুত হাতের সামনে যা পায় তা নিয়ে ছোটাছুটি করে। রাস্তায় আমরা সেরকম দৃশ্যগুলো দেখছিলাম। ঘরের জিনিসপত্র দ্রুত সরাচ্ছে। বাচ্চাকে কাঁধে জড়িয়ে রেখেছে, ব্যাগ টানাটানি করছে…‘

‘আমাদের ড্রাইভার সারাক্ষণ মোবাইলে কথা বলছি। তাকে ওপ্রান্ত থেকে বলছিল, পানি চলে এসেছে। সব ডুবিয়ে নিচ্ছে। আমরা তাকে মোবাইল রেখে গাড়ি চালানোর পরামর্শ দেই। তখন বৃষ্টি ছিল না। কোনো সংকেত ছিল না কিছুর। তাই আমরা বুঝতে পারিনি কিভাবে কি হচ্ছিল।’

‘আমরা ব্যাঙ্গালুরুতে ফেরার পর টিভিতে খবর শুনতে পাই, সুনামি আঘাত করেছে। চেন্নাইয়ে তছনছ হয়েছে। আমরা ধারণাও করতে পারিনি এমন কিছু হতে যাচ্ছে। খুব কাছেই ছিলাম। রীতিমত কপালজোরে বেঁচেছি।’

 

ঢাকা/ইয়াসিন