খেলাধুলা

চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ পর্বে ফেভারিট কারা?

করোনা সঙ্কট কাটিয়ে ফুটবল তার আগের জৌলুস ফিরে পাওয়ার চেষ্টায় মত্ত। ইউরোপার শীর্ষ ফুটবল লিগগুলো ইতিমধ্যে নতুন মৌসুম শুরু করে ফেলেছে। সেই পথে হাঁটছে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগও। ইতিমধ্যে ২০২০-২১ মৌসুমের ড্র অনুষ্ঠিত হয়ে গেছে।

আসন্ন মৌসুমে আটটি গ্রুপে মোট ৩২টি দল চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপার জন্য লড়াই করবে। এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগের ড্র কেমন হলো? কোন গ্রুপে কারা ফেভারিট? বিশ্লেষণ করে দেখা যাক।

কেমন হলো চ্যাম্পিয়নস লিগের ড্র?

আসন্ন মৌসুমের ড্র শেষে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হচ্ছে গ্রুপ পর্বে রোনালদো-মেসি দ্বৈরথ। চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ফুটবল বিশ্বের সেরা দুই খেলোয়াড় গ্রুপ পর্বে মুখোমুখি হতে যাচ্ছে। লিওনেল মেসির বার্সেলোনা এবং ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর জুভেন্টাস গ্রুপ ‘জি’-তে জায়গা করে নিয়েছে।

‘জি’ গ্রুপ ছাড়া আলোচনা করা যায় ‘এইচ’ গ্রুপ নিয়ে। এই গ্রুপে গেলো মৌসুমের রানার্স আপ প্যারিস সেন্ত জার্মেই’র সঙ্গী হয়েছে এক মৌসুম পরে চ্যাম্পিয়নস লিগে ফিরে আসা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। এছাড়া বাকী সব গ্রুপেই জায়ান্ট দলগুলো মোটামুটি সহজ প্রতিপক্ষ পেয়েছে।

কোন গ্রুপে ফেভারিট কারা?

গেলো মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন বায়ার্ন মিউনিখ আসন্ন মৌসুমের ড্র অনুষ্ঠানে গ্রুপ ‘এ’-তে জায়গা করে নিয়েছে। জার্মান ক্লাবটির সবচেয়ে কঠিন প্রতিপক্ষ হতে পারে অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদ। এই গ্রুপ থেকে বায়ার্ন এবং অ্যাতলেটিকোর নক আউট স্টেজে জায়গা করে নেওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তবে রেড বুল সালজবুর্গ অ্যাতলেটিকোর জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। যদিও ক্লাবটি তাদের সেরা দুই ফুটবলার এরলিং হালান্দ এবং তাকুমি মিনামিনোকে সর্বশেষ দলবদলে হারিয়েছে। এই তিন দল ছাড়া গ্রুপটিতে আছে রাশিয়ান প্রিমিয়ার লিগের রানার্স আপ দল লোকোমোটিভ মস্কো। তবে সর্বশেষ মৌসুমে গ্রুপ পর্বের তলানিতে থাকা দলটিকে নিয়ে এবারও তেমন আশা করা যাচ্ছে না।

গ্রুপ ‘বি’-তে রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গী হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে ইন্টার মিলান, শাখতার দোনেতস্ক, বরুশিয়া মনসেনগ্ল্যাডব্যাচ। এই গ্রুপে কাগজে কলমে সবচেয়ে ফেভারিট প্রতিযোগিতাটির সফলতম দল রিয়ালই। তবে অ্যান্তোনিও কন্তের অধীনে বদলে যাওয়া ইন্টার মিলানের সঙ্গে শীর্ষস্থানের লড়াইটা বেশ ভালোই জমতে পারে। এই গ্রুপ থেকে পরের স্টেজের জন্য সবচেয়ে বেশি ফেভারিট রিয়াল এবং ইন্টারই। তবে এর মাঝে কিছুটা চমক দেখাতে পারে ইউক্রেনের ক্লাব শাখতারও। বিশেষ করে ঘরের মাঠে যেকোনো দলকে হারানোর ক্ষমতা রাখে ইউক্রেনিয়ান চ্যাম্পিয়নরা। জার্মানির ক্লাব বরুশিয়া মনসেনগ্ল্যাডব্যাচকে নিয়ে অবশ্য খুব বেশি আশা করা যাচ্ছে না।

পেপ গার্দিওলার ম্যানচেস্টার সিটি, পর্তুগিজ ক্লাব এফসি পোর্তো, ফরাসি ক্লাব অলিম্পিয়াকোস এবং মার্শেই আছে ‘সি’ গ্রুপে। এই গ্রুপে ম্যানসিটির গ্রুপ সেরা হয়ে নক আউট স্টেজে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। বাকী তিন দলের মধ্যে গ্রুপ রানার্স আপ হয়ে পরবর্তী স্টেজে জায়গা করে নেওয়ার লড়াই হবে।

‘ডি’ গ্রুপে ২০১৮-১৯ মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন লিভারপুলের সঙ্গী গত মৌসুমের চমক আতালান্তা, ডাচ ক্লাব আয়াক্স এবং মিডিল্যান্ড। অলরেডদের খুব সহজে পরের রাউন্ডে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর গ্রুপ রানার্স আপ হওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে ইতালিয়ান ক্লাব আতালান্তা। তবে আতালান্তার সবচেয়ে বড় হুমকি হতে পারে আয়াক্স। এদিকে ঘরের মাঠে মিডিল্যান্ডও চমকে দিতে পারে যেকোনো দলকে।

‘ই’ গ্রুপ থেকে চেলসি এবং সেভিয়া ফেভারিট হিসেবে পরবর্তী রাউন্ডে যাওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে। এই গ্রুপের বাকী দুই দল রেনেস এবং ক্রাসোডার প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগে জায়গা করে নিয়েছে।

‘এফ’ গ্রুপে বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের সঙ্গী হিসেবে শেষ ষোলোতে জায়গা করে নেওয়ার সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনা ইতালিয়ান ক্লাব লাজিওর। তবে রাশিয়ান চ্যাম্পিয়ন জেনিথ হুমকি হতে পারে সিমোনে ইনজাগির লাজিওর। যদিও রাশিয়ান চ্যাম্পিয়নদের চ্যাম্পিয়নস লিগ রেকর্ড আশানুরুপ নয়। এই গ্রুপের তলানিতে থাকার সম্ভাবনা বেশি ক্লাব ব্রুগের।

২০২০-২১ মৌসুমে দর্শকদের সবচেয়ে বেশি নজর থাকবে ‘জি’ গ্রুপের দিকে। এই গ্রুপ থেকে খুব স্বাভাবিকভাবে বার্সেলোনা এবং জুভেন্টাসই শেষ ষোলোতে জায়গা করে নিবে। তবে দুই দলের মধ্যে শীর্ষস্থানের জন্য প্রতিযোগিতা হবে। এই গ্রুপে তৃতীয় পজিশনের জন্য লড়াই করবে ডায়নামো কিয়েভ এবং ফেরেঙ্কারোস।

‘এইচ’ গ্রুপের অনুমিতভাবেই হট ফেভারিট ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এবং প্যারিস সেন্ত জার্মেই। তবে গত মৌসুমে চমক দেখানো লাইপজিগও মাথা চাড়া দিয়ে যেকোনো দলের জন্যই হুমকি হতে পারে। ফলে এই গ্রুপের তিন দলের সম্ভাবনা আছে পরবর্তী রাউন্ডে যাওয়ার। এই গ্রুপে সবচেয়ে দুর্বল দল প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগ খেলতে আসা ইস্তানবুল বাসাকেহির।