খেলাধুলা

মেসি বনাম রোনালদো: বহু প্রতীক্ষিত পুনর্মিলন

আগেই চ্যাম্পিয়নস লিগের নকআউট নিশ্চিত করে ফেলেছে বার্সেলোনা ও জুভেন্টাস। তাই মঙ্গলবার গ্রুপের শেষ ম্যাচে দুই ক্লাবের মুখোমুখি লড়াই আপাতদৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ মনে না-ও হতে পারে। কিন্তু এই ম্যাচ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন নির্ধারণী, তাই কিছুটা গুরুত্ব তো রয়েছেই। তবে তা ছাপিয়ে যাচ্ছে আরেকটি ব্যাপার, বহু প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে মাঠে মুখোমুখি হচ্ছেন লিওনেল মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো।

২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দুজনের দ্বৈরথ দেখা গেছে হরহামেশাই। লা লিগায় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদের লড়াইয়ে অন্যরকম উত্তাপ ছড়াতো মেসি-রোনালদোর প্রতিদ্বন্দ্বিতা। কিন্তু পরিস্থিতি পাল্টে গেছে গত দুই মৌসুম ধরে, সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে ৯ মৌসুমের সম্পর্ক চুকিয়ে যখন পর্তুগিজ উইঙ্গার যোগ দেন ইতালিয়ান চ্যাম্পিয়নদের সঙ্গে।

তাদের মুখোমুখি লড়াইয়ে মেসি জিতেছেন ১৬টি এবং রোনালদো ১০টি। এমনকি চ্যাম্পিয়নস লিগেও পাঁচবার তাদের দেখা হয়েছে, যেখানে দুজনই দুটি করে জয়ের দেখা পেয়েছেন। সবশেষ সাক্ষাৎ হয়েছে ২০১৮ সালের ৬ মে, ২-২ গোলে ড্রর ওই ম্যাচে গোল করেছিলেন মেসি-রোনালদো দুজনেই।

রোনালদোর ঠিকানা বদলের পর মেসির কণ্ঠেও ঝরেছিল হতাশার সুর। বার্সেলোনা ফরোয়ার্ড বলেছিলেন, ‘ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর সঙ্গে আমার দ্বৈরথ ছিল বিশেষ কিছু, যা সারাজীবন মনে থাকবে। অনেক বছর ধরে এটা ছিল। একইভাবে দীর্ঘদিন ধরে শীর্ষ পর্যায়ে এমন প্রতিদ্বন্দ্বিতা বজায় রাখা সহজ নয়। ক্রিস্টিয়ানোর বিপক্ষে ওই ম্যাচগুলো সবসময় ছিল বিশেষ অর্থবহ।’

দুই খেলোয়াড়ই তাদের ক্যারিয়ারের শেষ প্রান্তে। রোনালদো জুভেন্টাসে যোগ দেওয়ার পর থেকে সবার মনে সংশয়, আবার কি দেখা যাবে দুই সেরা খেলোয়াড়ের দ্বৈরথ! তাদের সংশয় উড়িয়ে দেয় গত চ্যাম্পিয়নস লিগের ড্র। প্রথমবার গ্রুপ ম্যাচে তাদের মুখোমুখি লড়াইয়ের সুযোগ করে দেন ভাগ্যদেবী! কিন্তু দুর্ভাগ্য যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন রোনালদো। তাতে তুরিনে তাদের দেখার প্রতীক্ষা আফসোসে রূপ নেয়। অবশেষে মেসি-রোনালদো মুখোমুখি হচ্ছেন। আগের দুই ম্যাচে আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ডকে বিশ্রাম দিলেও জুভেন্টাসের বিপক্ষে তাকে রাখার ব্যাপারে নিশ্চিত করেছেন বার্সা কোচ রোনাল্ড কোমান।

এই দ্বৈরথে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের পাশাপাশি ন্যু ক্যাম্পে প্রতিশোধ নিতে চান রোনালদো। গ্রুপে বার্সার সঙ্গে প্রথম দেখায় তাকে ছাড়া জুভেন্টাস ২-০ গোলে হেরেছিল। ওই ম্যাচে গোল করেছিলেন মেসি। এছাড়া গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে শেষ ষোলো খেলতে হলে ইতালিয়ান চ্যাম্পিয়নদের এই ম্যাচটি জিততে হবে অন্তত ৩-১ গোলে। 

মঙ্গলবার ন্যু ক্যাম্পে নামার আগে রোনালদো-মেসি ভিন্ন অবস্থানে। ভালো ছন্দে রয়েছেন জুভেন্টাস ফরোয়ার্ড, আর দলের ব্যর্থতায় হতাশা ঘিরে ধরেছে ফর্মহীন মেসিকে। চ্যাম্পিয়নস লিগে দিনামো কিয়েভের বিপক্ষে জুভেন্টাসের ৩-০ গোলের জয়ে ক্যারিয়ারের ৭৫০তম গোলের মাইলফলক স্পর্শ করেছিলেন রোনালদো। এই সপ্তাহে তুরিনোর বিপক্ষে গোল না পেলেও তার দল জিতেছে ২-১ গোলে। অন্যদিকে মেসির দল লা লিগায় নবাগত কাদিজের কাছে ২-১ গোলে হেরে ইতালিয়ান চ্যাম্পিয়নদের স্বাগত জানাচ্ছে।

তবে বলা বাহুল্য, সবকিছু পেছনে ফেলে এই ম্যাচ হতে যাচ্ছে শুধু মেসি-রোনালদোর প্রতিদ্বন্দ্বিতার। বহু প্রতিক্ষীত পুনর্মিলন শেষে কার মুখে হাসি ফোটে, তা দেখার অপেক্ষায় দুই সেরা ফুটবলারের ভক্তরা। উপভোগ্য এক ম্যাচ দেখার প্রত্যাশা নিয়ে কোটি কোটি চোখ থাকবে ন্যু ক্যাম্পের এই ম্যাচের দিকে।