খেলাধুলা

বরিশালকে হটিয়ে ফাইনালের আশা বাঁচিয়ে রাখলো ঢাকা

বিপর্যয় থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে লড়াই করার মতো সংগ্রহ পেয়েছিল বেক্সিমকো ঢাকা। লক্ষ্য নাগালে থাকলেও ফরচুন বরিশালের ইনিংসে বারবার ছন্দপতন। একাধিক ভুল করেছিল ঢাকাও। ম্যাচে ছড়ালো উত্তেজনা। রোমাঞ্চ ছড়িয়ে শেষ পর্যন্ত হাসলো ঢাকাই। 

এলিমিনেটর ম্যাচে তামিম ইকবালের বরিশালকে ৯ রানে হারিয়ে ফাইনালের আশা বাঁচিয়ে রাখলো মুশফিকুর রহিমের ঢাকা। আগে ব্যাটিং করে ঢাকা ৮ উইকেটে ১৫০ রান তোলে। লক্ষ্যে নেমে বরিশাল ১৪১ রানের বেশি করতে পারেনি।

অবশ্য দিনের শুরুতে ছিল বরিশালের আধিপত্য। টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে ২২ রান তুলতে ঢাকার টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যান সাজঘরে। পাওয়ার প্লেতে বরিশালের বোলিং চাপে ব্যাটিং যেন ভুলেই গিয়েছিল ঢাকার খেলোয়াড়রা। ব্যাট-বলের রসায়ন একটুও জমেনি। ডট বলের মিছিলের সঙ্গে ধারাবাহিক উইকেট হারায়। ৬ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ঢাকার রান মাত্র ২৪। বাউন্ডারি আসে মাত্র দুটি, ১৮টি বলই ছিল ডট।  

প্রত্যাশা মতো রান আসেনি শুরু থেকে। চাপ কমাতে ভিন্ন কিছুর চেষ্টায় স্লগ সুইপ করেন মোহাম্মদ নাঈম। ডেকে আনেন বিপদ। অফস্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজের বল টপ-এজ হয়ে শর্ট ফাইন লেগে তাসকিন আহমেদের হাতের মুঠোয় জমা হয় বল। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান এবার ৫ রানের বেশি করতে পারেননি। 

পরের ওভারে তাসকিনের অফস্টাম্পের বাইরের বল টাইমিংয়ে গড়বড় করে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন রানের খাতা না খোলা আল-আমিন। ওই ওভারে মুশফিকের উইকেটও পেয়ে যেতেন তাসকিন। ঢাকা অধিনায়কের ব্যাটে লেগে বল নিঃশ্বাস দূরত্ব দিয়ে বেরিয়ে যায়।  

পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে বোলিংয়ে এসে মন্থর গতিতে ব্যাটিং করা সাব্বির রহমানকে বোল্ড করেন সোহরাওয়ার্দী শুভ। ১৪ বলে মাত্র ৮ রান করেন সাব্বির। শুরুর ধাক্কা সামলে মুশফিক ও ইয়াসির ৫০ রানের জুটি গড়েন। বিশেষ করে মুশফিক প্রতি আক্রমণে ঢাকার রানের চাকা সচল রাখেন। পরের ৪ ওভারে তাদের রান আসে ৩০। 

কিন্তু আগ্রাসন বাড়াতে গিয়ে ঢাকার অধিনায়ক বিপদ ডেকে আনেন। কামরুল ইসলাম রাব্বীর স্লোয়ার স্লগ করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন। নিজের বোলিংয়ে ক্যাচ নিয়ে বরিশালকে এগিয়ে নেন। মুশফিক ৩০ বলে ৪ চার ও ১ ছক্কায় করেন ৪৩ রান। তখন দলের একমাত্র ভরসা ইয়াসির আলী ও আকবর আলী। দুইজন ৩৮ রান যোগ করে দলের রান একশতে নিয়ে যান। 

আকবর ২১ রানে হাল ছেড়ে দিলেও ইয়াসির পূর্ণ করেন টুর্নামেন্টে নিজের তৃতীয় ফিফটি। দলকে বিপদ থেকে উদ্ধার করলেও ইনিংস লম্বা হয়নি। শেষ ওভারে রাব্বীর বলে এলবিডাব্লিউ হন ৫৪ রানে। ৪৩ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কা হাঁকান তিনি। 

বরিশালের হয়ে বল হাতে ২টি করে উইকেট নেন মিরাজ ও রাব্বি। তাসকিন ৪ ওভারে ২১ রানে নিয়েছেন ১ উইকেট। 

১৫০ রান তাড়ায় নাসুম আহমেদকে প্রথম ওভারে দুই বাউন্ডারি হাঁকান তামিম। সাইফ হাসানের শুরুটাও ছিল দারুণ। রুবেল হোসেনকে এক বাউন্ডারি হাঁকানোর পর শফিকুল ইসলামকে সীমানার বাইরে পাঠান দুইবার। তৃতীয় চেষ্টায় নিজের উইকেট বিসর্জন দেন। অফস্টাম্পের অনেক বাইরের বল উইকেটে টেনে বোল্ড হন সাইফ। পারভেজ হোসেন ইমন দলের দাবি মেটাতে পারেননি। রবিউল ইসলাম রবিকে এগিয়ে উড়াতে গিয়ে বোল্ড হন ২ রানে। 

তামিম উইকেটে টিকে থাকলেও তার ইনিংসটি ছিল মন্থর গতির। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সঙ্গে যা একদমই বেমানান। ২৮ বলে ২ বাউন্ডারিতে ২২ রান করে মুক্তার আলীর বলে আউট হন অধিনায়ক। বরিশালের ইনিংস একাই টেনে নেন আফিফ হোসেন। খাদের কিনারা থেকে দলকে উঠিয়ে একাই লড়ে যান। তুলে নেন ফিফটি। ৩৫ বলে ৫৫ রানে সাজান নিজের ইনিংস। তার ৩ চার ৪ ছক্কার ইনিংসটি শেষ হয় শফিকুলের বলে। বাঁহাতি পেসারের বল সরে স্কুপ করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন আফিফ। 

বাকিরা পরাজয়ের ব্যবধান কমিয়েছেন মাত্র। ইনিংসের মাঝে জোড়া উইকেটের স্বাদ দেন আল-আমিন। আগের ম্যাচে ২০ বলে হাফ সেঞ্চুরি করা তৌহিদ হৃদয় (১২) ও সোহরাওয়ার্দী শুভ (০) তার বলে সাজঘরে ফেরেন। মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন ১০ বলে করেন ১৫ রান। মিরাজের ব্যাট থেকে আসে ১৫ রান।   

শফিকুল ৩৯ রানে ও মুক্তার ১৮ রানে পেয়েছেন ৩টি করে উইকেট। ২ উইকেট নেন আল-আমিন। ম্যাচসেরা হয়েছেন ইয়াসির।