খেলাধুলা

করোনার বছরে বিশ্ব ফুটবলের হালহকিকত

করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে থমকে গিয়েছিল বিশ্ব, আঁচ লেগেছিল ক্রীড়াঙ্গনেও। আতঙ্কিত সময়ে একের পর এক প্রতিযোগিতা স্থগিতের খবরে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছিল মাঠের ফুটবল। সারা বছর আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে প্রাণঘাতী ভাইরাস। কিন্তু জীবন তো থেমে থাকার নয়, তাই ফিরেছে ফুটবলও; স্বাস্থ্যবিধি মেনে। বুন্দেসলিগায় বায়ার্নের দাপট, রিয়ালের ঘুরে দাঁড়ানো থেকে শুরু করে বার্সেলোনার ভরাডুবি ছিল আলোচনায়। আর বছরের শেষ দিকে এক কিংবদন্তিকে হারানোর শোক এখনও কাটেনি। রাইজিং বিডির পাঠকদের নিয়ে ফিরে দেখা যাক, কেমন ছিল এ বছরের বিশ্ব ফুটবল-  

মাঠে ফুটবল প্রত্যাবর্তনের অগ্রপথিক বুন্দেসলিগা

করোনার কারণে ইতালিয়ান সিরি আ, স্প্যানিশ লা লিগা ও ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের পর স্থগিত হয় বুন্দেসলিগাও। তবে দ্রুত তারা মাঠে ফেরার বন্দোবস্ত করে। করোনা মহামারির মধ্যে ফুটবল ভক্তদের মনে সবার আগে স্বস্তি ফিরিয়ে আনে বুন্দেসলিগা। ১৩ মার্চ স্থগিত হওয়ার দুই মাসের বেশি সময় পর জার্মান শীর্ষ লিগ দিয়ে করোনা পরবর্তী সময়ে সবার আগে মাঠে ফেরে ফুটবল। রুদ্ধদ্বার স্টেডিয়ামে ১৬ মে থেকে শুরু হয় ফুটবল লড়াই। দর্শকশূন্য মাঠে অচেনা পরিবেশ ছাপ ফেলেনি দোর্দণ্ড প্রতাপশালী বায়ার্নের খেলায়। পর পর সাতটি জয়ে দুই ম্যাচ হাতে রেখে রেকর্ড টানা অষ্টম বুন্দেসলিগা শিরোপা উদযাপন করে বাভারিয়ানরা।

ফিরে চমকে দিলো রিয়াল

করোনাভাইরাসে জুবুথুবু ক্রীড়াঙ্গনে ফিরেছিল স্বস্তি। বুন্দেসলিগার পথ ধরে ১১ জুন মাঠে ফেরে লা লিগা। তিন মাসের এই আকস্মিক বিরতি যেন রিয়াল মাদ্রিদের জন্য পয়মন্ত হয়ে এসেছিল। নতুন করে শুরুর আগে শীর্ষ দল বার্সেলোনার চেয়ে ২ পয়েন্ট পেছনে ছিল মাদ্রিদ ক্লাব। বার্সার ছন্দ হারানোর সুযোগে রিয়াল শেষ ১১ ম্যাচে টানা ১০টি জিতে লা লিগা শিরোপা পুনরুদ্ধার করে। ১৬ জুলাই ভিয়ারিয়ালকে হারিয়ে এক ম্যাচ আগেই ৩৪তম লিগ ট্রফি হাতে নেয় প্রতিযোগিতার ইতিহাসে রেকর্ড চ্যাম্পিয়নরা। পাঁচ পয়েন্ট পেছনে থেকে রানার্স আপ হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় আগের দুই আসরের চ্যাম্পিয়ন বার্সেলোনাকে।

অস্বস্তি কাটিয়ে তিন দশকের প্রতীক্ষার অবসান

তিন দশকে প্রথম প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা জেতার স্বপ্নে লিভারপুলকে সবচেয়ে বড় ধাক্কা দিয়েছিল করোনাভাইরাস। খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফরা একের পর এক ভাইরাসে আক্রান্ত হলে ১৩ মার্চ লিগ বন্ধ করতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। তাতে দ্বিতীয় স্থানে থাকা ম্যানচেস্টার সিটির চেয়ে ২৫ পয়েন্টে এগিয়ে টেবিলের শীর্ষে থাকা লিভারপুল অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছিল। শেষ পর্যন্ত তিন মাসের বেশি সময় পর ১৭ জুন মাঠে ফেরে প্রিমিয়ার লিগ।

লিগ পুনরায় শুরু হওয়ার পর অপেক্ষা লম্বা করেনি লিভারপুল। প্রথম দুই রাউন্ডেই প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে ইংল্যান্ডের চ্যাম্পিয়ন হয় রেডরা। সাত ম্যাচ হাতে রেখে রেকর্ড দ্রুততম সময়ে শিরোপা ঘরে তোলে তারা, এছাড়া পয়েন্টের (২৫) ব্যবধানেও রেকর্ড গড়ে ইয়ুর্গেন ক্লপের দল।

লাৎসিওর ছন্দপতন, টানা নবম স্কুদেত্তো জুভেন্টাসের

করোনা মহামারিতে সবচেয়ে বিপর্যস্ত হয়েছিল ইতালি। দেশটির শীর্ষ ঘরোয়া ফুটবল প্রতিযোগিতায় সিরি আ’তে তার প্রভাব পড়েছিল জোরেশোরে। ইউরোপের পাঁচ শীর্ষ লিগের মধ্যে সবার প্রথমে ৯ মার্চ স্থগিত হয় ওই আসর। সবার শেষে ২০ জুন মাঠে ফিরেছিল সিরি আ। শিরোপার কঠিন লড়াইয়ে লাৎসিওর সঙ্গে এক পয়েন্টের ব্যবধানে এগিয়ে শীর্ষে থেকে পুনরায় খেলা শুরু করে টানা আটবারের চ্যাম্পিয়ন জুভেন্টাস।

সেপ্টেম্বর থেকে টানা ২১ ম্যাচ অপরাজিত থাকা লাজিও বিরতির পর ছন্দ হারায়। স্থগিত হওয়ার পর মাঠে ফিরে প্রথম ম্যাচই হেরে যায় তারা। পরের সাত ম্যাচে মাত্র দুটি জেতে লাৎসিও। প্রতিপক্ষের এই ব্যর্থতার সুযোগে দুই ম্যাচ হাতে রেখে টানা নবম স্কুদেত্তো জেতে জুভেন্টাস।

অসমাপ্ত লিগ ওয়ানে চ্যাম্পিয়ন পিএসজি

ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগের মধ্যে চারটি আবার মাঠে গড়ালেও সেই ভাগ্য হয়নি ফরাসি লিগ ওয়ানের। মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে সব ধরনের ফুটবল স্থগিত করা হয়। ২৮ এপ্রিল ফরাসি লিগ কমিটি এক ঘোষণায় জানায়, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ফ্রান্সে সব ধরনের খেলাধুলা নিষিদ্ধ করে দেওয়ায় ফ্রান্সের শীর্ষ ফুটবল প্রতিযোগিতা মাঠে গড়ানো সম্ভব নয়। দুই দিন পর লিগ টেবিলের শীর্ষে থাকা প্যারিস সেন্ত জার্মেইকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয়। যা ছিল প্যারিস ক্লাবটির হ্যাটট্রিক শিরোপা।

আন্তর্জাতিক ফুটবলের এক ঝলক  

ক্লাব ফুটবলের মতো আন্তর্জাতিক ফুটবলেও পড়েছিল করোনাভাইরাসে থাবা। জুনে ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ হওয়ার কথা থাকলেও হয়নি। তা পিছিয়ে গেছে আরও এক বছর। তবে ক্লাব ‍ফুটবলের প্রত্যাবর্তনের পথ ধরে সেপ্টেম্বরে ফিরেছিল আন্তর্জাতিক ফুটবলও। নেশন্স লিগ দিয়ে মাঠে নেমেছিল ফ্রান্স, পর্তুগাল, ইতালির মতো ইউরোপের পরাশক্তিরা। গতবারের চ্যাম্পিয়ন পর্তুগাল দ্বিতীয় আসরের ফাইনালসের টিকিট কাটতে ব্যর্থ হয়েছে। আগামী বছর অক্টোবরের সেমিফাইনালে মুখোমুখি হবে ইতালি-স্পেন এবং বেলজিয়াম-ফ্রান্স। মিলানের সান সিরোতে ১০ অক্টোবর হবে ফাইনাল।

শুধু ইউরোপের দেশ নয়, আন্তর্জাতিক ফুটবল ফেরানোয় যোগ দিয়েছিল দক্ষিণ আমেরিকাও। কয়েক ধাপ পিছিয়ে অক্টোবরে শুরু হয় দক্ষিণ আমেরিকার কাতার বিশ্বকাপ বাছাই। দুই মাসের এই লড়াইয়ে দাপট দেখায় ব্রাজিল, প্রথম চার ম্যাচের সবগুলো জিতে শীর্ষে তারা। আর আর্জেন্টিনা তিন জয় ও এক ড্রয়ে ১০ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে।

বিধ্বস্ত বার্সেলোনা, ইউরোপিয়ান শ্রেষ্ঠত্ব বায়ার্নের

করোনাভাইরাসের কারণে ইউরোপের শীর্ষ লিগগুলোর মতো চ্যাম্পিয়নস লিগও স্থগিত হয় মধ্য মার্চে। বাকি থাকা শেষ ষোলোর দ্বিতীয় লেগ দিয়ে তা আবার ফেরে আগস্টের দিকে। কিন্তু প্রথমবারের মতো পাল্টে যায় কোয়ার্টার ফাইনাল ও সেমিফাইনালের ফরম্যাট। দুই লেগের বদলে একটি করে ম্যাচ হয় এই দুটি পর্বে। পর্তুগালের রাজধানী লিসবনের দুটি মাঠ জোসে আলভালাদে ও দা লুজ স্টেডিয়ামে কোনও দর্শক ছাড়াই হয় এসব খেলা, ফাইনাল হয় দা লুজে।

তবে কোয়ার্টার ফাইনালে হতবাক করার মতো ঘটনা ঘটে যায়। ৮-২ গোলে বার্সেলোনাকে বিধ্বস্ত করে বায়ার্ন মিউনিখ। ৭৪ বছরে প্রথমবার কাতালানরা এক ম্যাচে আট গোল হজম করে এবং ১৯৫১ সালের পর প্রথম ছয় গোলের ব্যবধানে হার। এই ঘটনা কাঁপন ধরিয়েছিল কাতালান ক্লাবে। ওই লজ্জার হারের তিন দিন পর চাকরি হারান কিকে সেতিয়েন।

বায়ার্ন সব বাধা পেরিয়ে ফাইনালে ওঠে। ক্লাব ইতিহাসে প্রথমবার চ্যাম্পিয়নস লিগে শিরোপার মঞ্চে খেলতে নামে পিএসজি। তাদের লড়াই টেকেনি অভিজ্ঞ বুন্দেসলিগা চ্যাম্পিয়নদের কাছে। ২০১৩ সালের পর প্রথম ও ষষ্ঠ চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা জেতে হ্যান্সি ফ্লিকের বায়ার্ন।

আলোড়ন তোলা ব্যুরোফ্যাক্স

বায়ার্নের কাছে হেরে বিধ্বস্ত বার্সেলোনা। তাতে যেন মুষড়ে পড়েছিলেন দলের অধিনায়ক লিওনেল মেসিও। ২৫ আগস্ট হঠাৎ করে এক আলোড়িত ব্যুরোফ্যাক্সে ন্যু ক্যাম্প ছাড়ার ঘোষণা দেন আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড। সারা বিশ্বকে তোলপাড় করেছিল ওই ব্যুরোফ্যাক্স। তবে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বার্সাকে বিদায়ের সিদ্ধান্ত থেকে সরে দাঁড়ান। রিলিজ ক্লজ জটিলতায় বাধ্য হয়ে আরও এক মৌসুমের জন্য থাকতে হয় তাকে।

তাছাড়া ভালোবাসার ক্লাবকে আদালতে নেওয়ার ইচ্ছাও ছিল না বলে পরে জানান মেসি। একই সঙ্গে তৎকালীন বার্সা প্রেসিডেন্ট হোসেপ মারিয়া বার্তোমেউর বিরুদ্ধে প্রতিশ্রুতি না রাখার অভিযোগ করে তাকে একহাত নেন ছয়বারের ব্যালন ডি’অর জয়ী।

মেসি-রোনালদোকে ছাপিয়ে বছরের সেরা লেভানদোভস্কি

মেসি ও রোনালদো তাদের পারফরম্যান্স দিয়ে আলোচিত থাকলেও আড়ালে থাকা রবার্ত লেভানদোভস্কি ছিলেন দ্বীপ্তিমান। বায়ার্নকে চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতানোর পর হয়তো আফসোস হচ্ছিল তার। কারণ জুলাইয়ে এক ঘোষণায় ফ্রান্সের সাময়িকী ‘ফ্রান্স ফুটবল’ জানিয়ে দেন এ বছর করোনার কারণে দেওয়া হবে না ব্যালন ডি’অর। মেসি-রোনালদোদের হাতে এতদিন ঘুরেফিরে শোভা পাওয়া এই সোনালি ট্রফিটা জেতার প্রত্যাশা করা হয়তো তার জন্য বাড়াবাড়ি ছিল না।

তবে পোলিশ স্ট্রাইকার স্বীকৃতি ঠিকই পেয়েছেন। গত মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলে ৪৭ ম্যাচে ৫৫ গোল করা লেভানদোভস্কি জেতেন উয়েফা বর্ষসেরার পুরস্কার। এখানেই শেষ নয়। ব্যালন ডি’অরের আয়োজন স্থগিত থাকলেও ফিফা অনাড়ম্বর আয়োজনে এই বছরের সেরা খেলোয়াড় বাছাই করেছে। সেখানেও শেষ হাসি ছিল গত চ্যাম্পিয়নস লিগে ১৫ গোল করা লেভানদোভস্কির। ভার্চুয়াল অনুষ্ঠান হলেও ১৭ ডিসেম্বর ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনো নিজ হাতে তাকে তুলে দেন ‘দ্য বেস্ট ফিফা মেনস প্লেয়ার’র ট্রফি।

কিংবদন্তির মৃত্যুতে শোকাচ্ছন্ন বিশ্ব

করোনার সঙ্গে বছরের শেষ ধাক্কা ছিল এক কিংবদন্তির বিদায়। পুরো ক্রীড়াঙ্গনকে শোকে ভাসিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান ফুটবল গ্রেট ডিয়েগো ম্যারাডোনা। ৩০ অক্টোবর ৬০তম জন্মদিন পালনের পর অসুস্থ হন তিনি। তাকে নেওয়া হয় বুয়েন্স আয়ার্সের একটি হাসপাতালে। মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধার কারণে অস্ত্রোপচারও করানো হয় ৮৬’র বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ককে।

সবকিছু ঠিকঠাক ছিল। সপ্তাহখানেক পর ১১ নভেম্বর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান। তার ভক্তরা উল্লাসে ফেটে পড়ে। কিন্তু তারা জানতেন না কত বড় দুঃসংবাদ শুনতে হবে তাদের। হাসপাতাল ছাড়ার দুই সপ্তাহ পর ২৫ নভেম্বর এলো ফুটবলের সবচেয়ে বড় শোকাবহ দিন। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে সবাইকে কাঁদিয়ে প্রস্থান ঘটে আর্জেন্টাইন গ্রেটে, শেষ হয় ফুটবলের একটি অধ্যায়।

ম্যারাডোনার চিরবিদায়ের শোক কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আর্জেন্টাইন ফুটবলে তৈরি হয় আরেক শূন্যতা। ৮ ডিসেম্বর মারা যান ২০১৪ সালের বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে ফাইনালে তোলা কোচ আলেসান্দ্রো সাবেলা। ম্যারাডোনার মৃত্যুর পরের দিন হৃদরোগে আক্রান্ত হলে আইসিইউতে ভর্তি করা হয় তাকে। দুই সপ্তাহ জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থেকে হার মানেন সাবেলা।

সাবেলার প্রয়াণের পরের দিন ৯ ডিসেম্বর পরপারে চলে যান ১৯৮২ সালে ইতালির বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক পাওলো রসি। ফুসফুস ক্যান্সারে ভুগছিলেন এই ইতালিয়ান গ্রেট।

পেলেকে ছাড়িয়ে মেসি

চলে যেতে চেয়েও বার্সেলোনায় থাকার সুফল কিন্তু পেয়েছেন মেসি। এক ক্লাবের হয়ে সর্বাধিক গোলের রেকর্ড গড়েছেন তিনি পেলেকে পেছনে ফেলে। ফর্মের সঙ্গে লড়াই করতে থাকা এই আর্জেন্টাইন তারকা চার দিনের ব্যবধানে দুটি গোল করে ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তিকে টপকে যান। ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে গোল করে পেলেকে ছুঁয়েছিলেন। আর গত মঙ্গলবার রিয়াল ভায়াদোলিদের বিপক্ষে বার্সার জার্সিতে ৬৪৪তম গোল করে নিজেকে নিয়ে যান অনন্য উচ্চতায়।