খেলাধুলা

বাংলাদেশের ৩০-এ ৩০

যেমনটা চেয়েছিল তেমনটাই হলো। প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তি মিলে গেলো শতভাগ। বলে-কয়ে যে দলকে হারানোর কথা, বিজয়ের পতাকা উড়ানোর কথা তাই করতে পারলো বাংলাদেশ।

শহর বদলেছে। বদলেছে ভেন্যু। বদলায়নি বাংলাদেশের পারফরম্যান্স, বদলায়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজের ভাগ্যও। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ১২০ রানে হারিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। যে জয়ে বাংলাদেশ আইসিসি বিশ্বকাপ ক্রিকেট সুপার লিগের লড়াইয়ে দারুণ শুরু করলো।

তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে ৩০ পয়েন্ট পাওয়ার সুযোগ বাংলাদেশের। ঢাকায় দুই ম্যাচ জিতে নিজেদের কাজ এগিয়ে রেখেছিল তামিমের দল। চট্টগ্রামে অবশিষ্ট ১০ পয়েন্ট জিতে বাংলাদেশ সফলতার সঙ্গে মিশন শেষ করল।

দলনেতা তামিম শুধুমাত্র একটি জয় চাননি, চেয়েছিলেন পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা ও উন্নতি। শেষ ম্যাচে তামিমের প্রত্যাশাও পূরণ হয়েছে। দলের চার ব্যাটসম্যান পেয়েছেন ফিফটি। বোলিংয়ে ছিল ছন্দ। একাদশে ফেরা খেলোয়াড়রা সাফল্য পেয়ে দলের জয়ে অবদান রেখেছেন। ফিল্ডিংও ছিল আঁটসাট। সব মিলিয়ে বন্দরনগরীতে হওয়া ম্যাচ থেকে বাংলাদেশ একশতে একশ-ই পাবে।

টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে লিটন দাশ ও নাজমুল হোসেন শান্তর বিদায়ে শুরুতে কিছুটা ব্যাকফুটে গেলেও বাংলাদেশকে স্বরূপে ফেরান তামিম ও সাকিব আল হাসান। সাকিবের প্রস্তুতি যেমন, মাঠের পারফরম্যান্সও তেমন। গতকাল অনুশীলনে বড় শটের পরিবর্তে সিঙ্গেল ও ডাবলসে মনোযোগী ছিলেন। ২২ গজে ৫১ রানের ইনিংস সাজানোর পথে সিঙ্গেল নিয়েছেন ৩৫টি, ডাবলস ২টি। ৩টি বাউন্ডারির দুটি উইকেটের পেছনে, একটি অন ড্রাইভে। সতেজ উইকেটে বল দ্রুত এলেও সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে খানিকটা মন্থর হয়ে আসে। সাকিব মানিয়ে নিতে সময় নিয়েছিলেন।

তবে শান্তর বিদয়ের পর উইকেটে এসে হকচকিয়ে যান সাকিব। কাইল মায়ার্সের বল হঠাৎ লাফিয়ে ওঠে। সাকিবের ব্যাটে লেগে ফিরতি ক্যাচ যায়। ডানদিকে ঝাঁপিয়ে বল তালুবন্দি করতে পারেননি উইন্ডিজ বোলার। তৃতীয় উইকেটে তামিম ও সাকিবের ৯৩ রানের ইনিংস ছিল বাংলাদেশের বড় স্কোর গড়ার ভিত। দুই সিনিয়র সময় নিয়েছিলেন। তাতে মন্থর গতিতে রান এলেও উইকেট পড়েনি। তাদের জুটির একটা সময়ে ১৫ ওভারে কোনও বাউন্ডারি আসেনি। সিঙ্গেল ও ডাবলস ছিল ভরসা। সেটা খুব ভালোভাবেই করতে পেরেছেন।

দলনেতার ৪৯তম ফিফটি আসে ৭০ বলে। সাকিব ৪৮তম ফিফটি পান ৭৮ বলে। মাইলফলকে পৌঁছার পর তামিম আগ্রাসন দেখিয়ে বিপদ ডাকেন। প্রতিপক্ষের অধিনায়ক জেসন মোহাম্মদকে কভার দিয়ে ছক্কায় উড়ানোর পর পেসার জোসেফ আলজারিকে পুল করে বাউন্ডারি পান। এই পেসারকে আবার পুল করতে গিয়েই ৬৪ রানে শর্ট মিড উইকেটে ক্যাচ দেন তামিম।

সাকিবের ইনিংস থেমে যায় ৫১ রানে। রেমন রেইফারের স্লোয়ার উইকেটে টেনে বোল্ড হন। দলীয় ১৭৯ রানে সাকিব যখন আউট হন, তখন ইনিংসের বাকি প্রায় ১৪ ওভার। ওই সময়ে দলের প্রতি আক্রমণে যাওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। মুশফিকুর রহিমকে সঙ্গে নিয়ে মাহমুদউল্লাহ কাজটা করে দেন খুব সহজেই। ৬১ বলে ৭২ রানের জুটি গড়েন তারা।

এরপর সৌম্যকে সঙ্গে নিয়ে মাহমুদউল্লাহ যোগ করেন আরও ১৯ বলে ৩১ রান। মুশফিক রান তোলার গতি বাড়িয়ে ৫৫ বলে ৪ চার ও ২ ছক্কয় ৬৪ রান করেন। সত্যিকারের ফিনিশার মাহমুদউল্লাহ ৪৩ বলে ৩টি করে চার ও ছক্কায় ওই ৬৪ রানই করেন।

সাতে নামা সৌম্যর ইনিংস থামে লাকি সেভেনে। এক ইনিংসে চার পঞ্চাশোধ্র্ব ইনিংস, যা ২০১৪ এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ও ২০১৫ বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে দেখেছিল বাংলাদেশ।

বোলিংয়ে মোস্তাফিজুর রহিমের জোড়া আঘাতে অতিথিরা বিপর্যস্ত। আর অফস্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজের বল তো খেলতে রীতিমতো ভুগতে হয়েছে ব্যাটসম্যানদের। তার বোলিং ফিগার বলে সেই কথা, ১০-২-১৮-২। মোস্তাফিজ ৬ ওভারে ২৪ রানে পেয়েছেন ২ উইকেট। সফলতম বোলার ছিলেন একাদশে ফেরা সাইফউদ্দিন। নিয়েছেন ৩ উইকেট। তবে রান দিয়েছেন বেহিসেবী (৫১) ।

শেষ ম্যাচে মুশফিকের হাতে উঠেছে ম্যাচসেরার পুরস্কার। ১১৩ রান ও ৬ উইকেট নিয়ে সাকিব ষষ্ঠবারের মতো পেয়েছেন সিরিজ সেরার পুরস্কার। প্রতিপক্ষ খর্ব শক্তির ওয়েস্ট ইন্ডিজ বলেই হয়তো সিরিজ জয়ের ট্রফি নিয়ে উল্লাস হলো সাদামাটা।

তবে বিশ্বকাপ সুপার লিগের যাত্রায় কোনও পয়েন্ট না হারানোর আনন্দ ছিল চোখেমুখে। ৩০-এ ৩০ পয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বকাপ সুপার লিগের পয়েন্ট টেবিলের দুইয়ে ওঠে এসেছে। ৪০ পয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশের ওপরে আছে পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া।