খেলাধুলা

নেটে আউট তো ম্যাচেও আউট!

ইংরেজিতে একটি কথা আছে, ‘ওয়ার্ক হার্ড, প্লে হার্ড’। রাসেল ডমিঙ্গো যেন এমন সরল বিশ্বাসে বিশ্বাসী। সঙ্গে যুক্ত করেন, ‘নো বডি ইজ পারফেক্ট। এভরিওয়ান মেক মিসটেক। আই নিড গুড বডি ল্যাঙ্গুয়েজ।’

চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের ঘটনা। মধ্যদুপুরে নেটে পাশাপাশি ব্যাটিং করছিলেন টেস্ট ওপেনার সাদমান ইসলাম ও দলনেতা মুমিনুল হক। দীর্ঘক্ষণ বল থ্রো করে হাঁপিয়ে উঠে নেটের পাশ থেকে শিষ্যদের ব্যাটিং দেখছিলেন। সাদমানের নেটে বল ছুঁড়ছিলেন ফিল্ডিং কোচ রায়ান কুক, স্পিনার নাঈম ও থ্রোয়ার রমজান।

থ্রোয়ারের শর্ট বল টাইমিংয়ে গড়বড় করে হতাশ হয়ে পড়েন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান সাদমান। কুকের পরের বলটাও মনমতো খেলতে পারেননি। ডমিঙ্গোর চোখে ধরা পড়ে সেসব। জোরে ডাক দিয়ে শিষ্যকে ভুল ধরিয়ে দেন। সঙ্গে দেন লড়াইয়ের টোটকা। সামদান ফিরে পান প্রাণ। পরের বলগুলো ওপেনার খেলেছেন স্বাচ্ছন্দ্যে। কোচও সেসব দেখে বলেছেন, ‘প্রত্যেকের কাছ থেকে আমি এমনটাই চাই।’

ভারতীয় অধিনায়ক বিরাট কোহলি একবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, ‘অনুশীলনের উইকেটকে ম্যাচ উইকেট বানিয়ে নাও। নেট বোলারদের মনে করো আন্তর্জাতিক কোনও বোলার। তাতেই ব্যাটিং হয়ে উঠবে ছন্দময়।’ কোহলি বিশ্বাস করেন, নেটে আউট তো ম্যাচেও আউট। এতটাই নিখুঁত তার অনুশীলন।

সেসব অনুশীলন এখানে দেখা যায় হরহামেশা। তবে নিবেদনে কোনেও ঘাটতি থাকে না মুমিনুলদেরও। তেমনি একটি দিন পার করলেন টেস্ট অধিনায়ক। আজ তার অনুশীলন ছিল ‘পিকচার পারফেক্ট’। একেবারে কোহলির বিশ্বাসে অনুশীলন।

শুরুটা ছিল একদম সাদামাটা। মাঠে এসে সোহান, ইয়াসির, সাদমান, ডমিঙ্গোকে নিয়ে মাঠ চক্কর দেন। কয়েকবার মাঠ ঘুরে ব্যাট-প্যাড নিয়ে সোজা নেটে। এর আগে সেখানে ব্যাটিং করেন মিথুন ও সাইফ। ব্যাটিংয়ের শুরুতে স্পিন ও মিডিয়াম পেস আক্রমণ খেলেন। এরপর চার দ্রুতগতির বোলার। দৃঢ় চেতা মনোভাব, আগ্রাসন আর ব্যাটিং নৈপুণ্যে মুমিনুলের ব্যাটিং ছিল দেখার মতো।

মনে হচ্ছিল ২২ গজে প্রতিপক্ষের বোলারদের খেলছেন। কোনও জড়তা নেই। নেই কোনও তাড়া। লাল বলে যেভাবে ব্যাটিং করা উচিত সেভাবেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন। হ্যাঁ, দুই-একটি ভুল করেছেন ঠিকই। সেগুলো ডমিঙ্গো ও কুক ধরিয়েছেন তখনই। আদর্শ ছাত্র সেসব শুধরে নিয়েছেন। 

বলা হয়ে থাকে শর্ট ও ফোর্থ কিংবা ফিফথ স্টাম্প বরাবর বল মুমিনুলের সবচেয়ে দুর্বলতার জায়গা। কিন্তু সেসব বল আজ বাঁহাতি ব্যাটসম্যান খেলেছেন মনের আনন্দে, মাঝ ব্যাটে। ইনসাইড আউট শটে স্পিনারদের অনড্রাইভ ও অফড্রাইভে ছিলেন সাবলীল। পেসারের বল ব্যাকফুট ও ফ্রন্টফুটে খেলেছেন বুক ভরা সাহস নিয়ে।

যেসব বল দুর্বোধ্য মনে হয়েছে সেগুলো ছেড়েছেন। ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়েছেন শেষ বল পর্যন্ত। ডমিঙ্গো তাকে ম্যাচ সিনারিওতে অনুশীলন করিয়েছেন। যেমন দিনের শেষ বল, চা-বিরতির আগের বল। সেসব বলে মনোযোগ ধরে রাখা সব সময়ই কঠিন, ওই বলগুলো খেলতে মুমিনুল তাড়াহুড়ো করেননি। বরং সিদ্ধহস্তে সামলে নিয়েছেন।

চট্টগ্রামে এসে মুমিনুলের ব্যাটিং এমন হবে তা জানাই । ২২ গজে এখানে তার পদার্পণ মানেই রানের ফুলঝুরি। ৪০ টেস্টে ২৮৬০ রান করা মুমিনুল চট্টগ্রামে ৯ ম্যাচে ৭৫.৪২ গড়ে করেছেন ১০৫৬ রান। ক্যারিয়ার সর্বোচ্চ ১৮১ রান এসেছে এখানেই।

প্রিয় ভেন্যুতে ফিরে তার ব্যাট সদর্পে রানের ফোয়ারা ছুটাবেন তা অনুমিতই। অন্তত আজকের অনুশীলন যদি ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া টেস্টে নিয়ে যেতে পারেন মুমিনুল, তাহলে ক্যারিবিয়ান বোলারদের ভুগতে হবে সেশনের পর সেশন।