খেলাধুলা

অনবদ্য মায়ার্সে বাংলাদেশকে চমকে দিলো উইন্ডিজ

ওয়ানডেতে বাংলাদেশের কাছে পাত্তা না পেলেও ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বিতীয় সারির দল নিয়ে টেস্টে দুর্দান্ত। অভিষেকে কাইল মায়ার্সের দৃঢ় ব্যাটিংয়ে চট্টগ্রাম টেস্টে বাংলাদেশকে চমকে দিলো উইন্ডিজ। শেষ দিন বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের অনবদ্য পারফরম্যান্সে ৩ উইকেটে জিতেছে ক্যারিবিয়ানরা। লক্ষ্য থেকে ৩ রান দূরে থাকতে ২ রানের ব্যবধানে ষষ্ঠ ও সপ্তম ব্যাটসম্যান আউট হলেও মায়ার্স ২১০ রানে অপরাজিত থাকেন জয়সূচক শট খেলে। অন্য প্রান্তে থেকে রানের খাতা খুলতে পারেননিন রাকিম কর্নওয়াল। সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের তালিকায় এটি পঞ্চম।

সংক্ষিপ্ত স্কোর: প্রথম ইনিংস- বাংলাদেশ: ৪৩০, ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২৫৯; দ্বিতীয় ইনিংস- বাংলাদেশ: ২২৩/৮ ডিক্লে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ১২১ ওভারে ৩৯৫/৭ (মায়ার্স ২১০*, রাকিম কর্নওয়াল ০*)।

৩৯৫ রানের লক্ষ্যে শেষ দিনের খেলা শুরু করেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৩ উইকেটে ১১০ রানে মাঠে নামে তারা। মায়ার্সের সঙ্গে এনক্রুমা বোনারের ২১৬ রানের জুটি ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। ম্যাচ হয় বাংলাদেশের হাতছাড়া। এরপর ষষ্ঠ উইকেটে জশুয়া ডা সিলভার সঙ্গে ১০০ রানের জুটি গড়েন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। অভিষেকে ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে শেষ পর্যন্ত দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি। ৭ উইকেট হারিয়ে উইন্ডিজ করে ৩৯৫ রান।

অভিষেকে মায়ার্সের ডাবল

টেস্ট ইতিহাসের ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে অভিষেকে ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকালেন কাইল মায়ার্স। ২০০৩ সালের পর প্রথমবার কোনও ব্যাটসম্যান এই কীর্তি গড়লেন। আর লরেন্স রোওয়ের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে প্রথম টেস্টে দ্বিশতক করলেন মায়ার্স। 

আবারও চাপে বাংলাদেশ

তৃতীয় সেশনের শুরুতে এনক্রুমা বোনারকে ফিরিয়ে স্বস্তি এনে দিয়েছিলেন তাইজুল ইসলাম। তাকে অনুসরণ করে এর পাঁচ ওভার পরেই নতুন ব্যাটসম্যান জার্মেইন ব্ল্যাকউডকে সাজঘরে পাঠিয়েছেন নাইম হাসান। তার করা বল সামনে এগিয়ে এসে ডিপ মিড উইকেটে উড়িয়ে মারতে চেয়েছিলেন ব্ল্যাকউড। এরপর কাইল মায়ার্স-জশুয়া ডা সিলভা জুটি আবার হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছেন বাংলাদেশের জন্য। বাংলাদেশের চাই ৫ উইকেট। আর উইন্ডিজের প্রয়োজন ৯ ওভারে ২৪ রান।  

মায়ার্সের ১৫০

মোস্তাফিজুর রহমানের বলে চার মেরে তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগার স্পর্শ করেছিলেন। অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে নাম লেখান রেকর্ডের পাতায়। সেই ব্যক্তিগত ১৫০ রান পার করে ফেলেছেন। ২৬১ বলে মিরাজের বলে সিঙ্গেল নিয়ে দেড়শ করেন। এর আগে ১৭৮ বলে সেঞ্চুরি ও ৮৯ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন। মায়ার্সই বাংলাদেশের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছেন। বোনারকে সঙ্গে নিয়ে ২১৮ রানের জুটি গড়ে দিনের ২ সেশন কাটিয়ে দিয়েছিলেন। বোনার ফিরে গেলেও এখনো দারুণ লড়াই করছেন মায়ার্স।

তাইজুলের ঘূর্ণিতে উইকেটের দেখা পেলো বাংলাদেশ 

অবশেষে স্বস্তি এনে দিলেন তাইজুল ইসলাম। তৃতীয় সেশনের প্রথম ওভারেই ক্রিজে থিতু হওয়া এনক্রুমা বোনারকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পেলে সাজঘরে ফেরান। এটি চট্টগ্রাম টেস্টের ৫ম ও শেষ দিনের প্রথম উইকেট। এর আগে রিভিউ নিয়ে বোনার বেঁচে গেলেও এবার আর রিভিউ নেননি। আউট হওয়ার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ২৪৫ বলে ৮৬ রান। তার আউটের মাধ্যমে ভাঙে চতুর্থ উইকেটে গড়া ২১৬ রানের জুটি।

 চাপে বাংলাদেশ

চট্টগ্রাম টেস্টে শেষ ও ৫ম দিনে প্রথম সেশনের মতো দ্বিতীয় সেশনেও কর্তৃত্ব বজায় রেখেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কাইল মায়ার্সের অভিষেক সেঞ্চুরির পর এখন সেঞ্চুরির পথে আছেন সতীর্থ এনক্রুমা বোনার। এই ম্যাচে অভিষেক হয়েছে বোনারেরও। দুজনের চতুর্থ উইকেটের জুটিতে উইন্ডিজ তোলে ২০৭ রান। এই দুজনের ব্যাটেই মূলত ব্যাকফুটে চলে যায় বাংলাদেশ। উইন্ডিজের প্রয়োজন ১২৯। আর বাংলাদেশের প্রয়োজন ৭ উইকেট। হাতে আছে এক সেশন। ওভার বাকি আছে ৩৩টি।

অভিষেকেই মায়ার্সের সেঞ্চুরি, চাপে বাংলাদেশ

অভিষেক টেস্ট খেলতে নেমেই সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন কাইল মায়ার্স। তবে নাজমুল হোসেন শান্তর হাতে জীবন না পেলে ফিফটি-ই করা হতো না। ৪৯ রানে মেহেদী হাসান মিরাজের বলে স্লিপে ক্যাচ তুলেছিলেন; শান্ত তালুবন্দি করতে পারেননি। সেই মায়ার্স ছুঁলেন তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগার। ১৭৮ বলে মোস্তাফিজুর  রহমানকে চার মেরে অভিষেক টেস্টেই সেঞ্চুরির রেকর্ডে নাম লেখান। এর আগে ১০৬ জন ক্রিকেটার অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি করেছেন। মায়ার্সের আগে ১৩ জন ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটার অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি করেন।

রিভিউ নিয়ে বেঁচে গেলেন বোনার

৮২.১ ওভারের সময় মেহেদী হাসান মিরাজের করা বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন এনক্রুমা বোনার। মিরাজদের জোরালো আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার। কিন্তু বোনার রিভিউ নিয়ে ইনসাইড এজের কারণে বেঁচে যান। মিরাজের ব্যাট ছুঁয়ে তারপর পায়ে লাগে।  এর মধ্যে বোনার তুলে নিয়েছেন হাফ সেঞ্চুরি। অভিষেক টেস্ট খেলতে নেমে দিচ্ছেন ধর্য্যের পরীক্ষা।  

ওয়েস্ট ইন্ডিজের আক্রমণে ব্যাকফুটে বাংলাদেশ

চলছে চট্টগ্রাম টেস্টের শেষ ও ৫ম দিনের খেলা। ৩৯৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে প্রথম সেশন দারুণ কাটিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কাইল মায়ার্স-এনক্রুমা বোনারের প্রতিরোধে ব্যাকফুটে বাংলাদেশ। দুজনে চতুর্থ উইকেটের জুটি থেকে তুলেছেন দেড়শর বেশি  রান। মায়ার্স-বোনার নিজের অভিষেক টেস্টে হাফ সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন। দুজনের আক্রমণে অসহায় দেখাচ্ছে মিরাজ-তাইজুলদের। মায়ার্স হাফ সেঞ্চুরির আগে জীবন পেয়েছিলেন শান্ত ক্যাচ মিস করায়। সেই ভুলের খেসারত দিচ্ছে বাংলাদেশ। 

অভিষেকে বোনারের হাফ সেঞ্চুরি 

কাইল মায়ার্সের পর অভিষেক টেস্টে হাফ সেঞ্চুরি করলেন এনক্রুমা বোনার। ১৬৬ বলে তিনি অর্ধশতকের দেখা পান। মায়ার্স-বোনারের চতুর্থ উইকেটে গড়া জুটি পোড়াচ্ছে বাংলাদেশকে। এর আগে বোনারের ওয়ানডে অভিষেক হয় বাংলাদেশের বিপক্ষেই। অভিষেক টেস্টে তিনি হাফ সেঞ্চুরির ইনিংসটি সাজিয়েছেন ৭টি চারের মারে। 

জীবন পেয়ে মায়ার্সের হাফ সেঞ্চুরি 

অভিষেক টেস্ট খেলতে নেমেই ৩৭ রানে অপরাজিত থেকে দিন শুরু করা  মায়ার্স করেছেন হাফ সেঞ্চুরি। তবে নাজমুল হোসেন শান্তর হাতে জীবন না পেলে ফিফটি-ই করা হতো না। ৪৯ রানে মেহেদী হাসান মিরাজের বলে স্লিপে ক্যাচ তুলেছিলেন; শান্ত তালুবন্দি করতে পারেননি। ৮৯ বলে মায়ার্স হাফ সেঞ্চুরি করেন। 

বাংলাদেশের চাই ৭ উইকেট 

শুরু হয়েছে চট্টগ্রাম টেস্টের ৫ম ও শেষ দিনের খেলা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এই টেস্টে জয়ের জন্য বাংলাদেশের চাই ৭ উইকেট। ৩৯৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৩ উইকেটে ১১০ রান নিয়ে দিন শুরু করেছে ক্যারিবিয়ানরা। ক্রিজে আছেন এনক্রুমা বোনার ও কাইল মায়ার্স।

অনন্য কীর্তির সামনে মিরাজ

ম্যাচের প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি পেয়েছেন মিরাজ (১০৩) । বল হাতে দুই ইনিংস মিলিয়ে এখন পর্যন্ত নিয়েছেন ৭ উইকেট। যদি আরও ৩ উইকেট নিতে পারেন তাহলে পঞ্চম ক্রিকেটার হিসেবে ম্যাচে একশর বেশি রান ও ১০ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়বেন মিরাজ। 

সর্বপ্রথম ম্যাচে ১০ উইকেট ও একশর বেশি রান পেয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার অ্যালন ডেভিডসন। ৯১ বছর বয়সি ডেভিডসন ১৯৬০ রানে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ব্রিসবেনে ১২৪ রান (৪৪+৮০) ও ১১ উইকেট নিয়েছিলেন। গ্রেট ইয়ান বোথাম ২০ বছর পর ভারতের বিপক্ষে মুম্বাইয়ে ১১৪ রান ও ১৩ উইকেট নেন। একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ফয়সালাবাদে পাকিস্তানের কিংবদন্তি ইমরান খান ১১৭ রান ও ১১ উইকেট নেন। ৩১ বছর পর সাকিব আল হাসান ঢুকেন সেই ক্লাবে। ২০১৪ সালে খুলনায় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সাকিব ১৪৩ রান ও ১০ উইকেট নেন।

এ ছাড়া ৩ উইকেট নিতে পারলে চতুর্থ বাংলাদেশি বোলার হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে ১০০ উইকেটের স্বাদ পাবেন মিরাজ। পাশাপাশি যৌথভাবে দ্রুততম একশ উইকেট নেওয়ার কীর্তিও গড়বেন। দেশের হয়ে প্রথম একশ উইকেট পেয়েছিলেন মোহাম্মদ রফিক। এজন্য ৪৮ ইনিংস লেগেছিল তার। এরপর সাকিব ৪৬ ইনিংসে এবং তাইজুল ৪৪ ইনিংসে উইকেটের তিন অঙ্কে পৌঁছান। রোববার ৩ উইকেট নিতে পারলে তাইজুলের সঙ্গী হবে মিরাজ। 

ইতিহাস গড়তে হবে উইন্ডিজকে 

প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ ৪৩০ রান করে। জবাবে প্রথম ইনিংসে উইন্ডিজ ২৫৯ রানে অলআউট হয়ে যায়। ১৭১ রানে এগিয়ে থেকে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং করতে নেমে বাংলাদেশ ২২৩ রানে ইনিংস ঘোষণা করে। উইন্ডিজের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ৩৯৫।

৩৯৫ রান তাড়া করে জয়ের জন্য ইতিহাস গড়তে হবে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। এর আগে মাত্র চারবার ৩৯৪ রানের বেশি রান তাড়া করে জয়ের ঘটনা ঘটেছে। সর্বোচ্চ ৪১৭ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড অবশ্য এই ওয়েস্ট ইন্ডিজে দখলে। ২০০৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ক্যারিবিয়ানরা ইতিহাস গড়ে। তবে ওই ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও এই ওয়েস্ট ইান্ডিজের ভেতরে আকাশ-পাতাল ব্যবধান।