খেলাধুলা

রণপ্রস্তুতিতে সৌম্য-মিথুনকে নিয়ে কোচদের দৌড়ঝাঁপ

মিরপুর শের-ই-বাংলার পরিবেশ অন্য সময়ের চেয়ে এবার বেশ আলাদা। শীতের আমেজ খুব একটা নেই, সকালের মিষ্টি রোদে সবুজ গলিচায় অনুশীলন শুরু করে বাংলাদেশ। কিন্তু ক্রিকেটারদের মনে নেই ফুরফুরে ভাবটা। ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে প্রথম টেস্টে হারের পর পাহাড়সম চাপ স্পষ্ট। যথারীতি ফুটবল খেলে গা গরম করে শুরু অনুশীলন, পরে ফিল্ডিং-বোলিং-ব্যাটিংয়ে ঝালিয়ে নেওয়া। ছিল না হাসি ঠাট্টা কিংবা খুনসুটি। 

চট্টগ্রাম টেস্ট এখন অতীত। কাল বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হবে মুমিনুল হকদের দ্বিতীয় পরীক্ষা। সাগরপাড়ে তিন উইকেটের হারের বেদনা থেকে বেরিয়ে রাজধানীতে নামতে হবে সিরিজ বাঁচাতে উইন্ডিজ বধের মিশনে। তার আগে শেষ প্রস্তুতিতে সৌম্য সরকার-মোহাম্মদ মিথুনকে নিয়ে কোচদের মধ্যে দেখা গেছে বাড়তি দৌড়ঝাঁপ। এই টেস্টে দুই পরিবর্তন নিশ্চিত। চোটের কারণে ছিটকে গেছেন সাকিব আল হাসান, আজ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) জানালো খেলবেন না ওপেনার সাদমান ইসলাম। তারও চোট।

এই দুজনের পরিবর্তে কে থাকবেন সেরা একাদশে? ব্যাকআপ ওপেনার হিসেবে দলে আছেন সাইফ হাসান। কিন্তু সাকিবের জায়গায় কে? শেষ দিনের অনুশীলনে সৌম্য-মিথুনকে নিয়ে প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর বাড়তি ব্যস্ততা বোঝায় তারা দুজনও হয়তো থাকছেন একাদশে।

সকালে মূল অনুশীলন শুরুর আগেই সৌম্যর সঙ্গে গভীর আলাপে মগ্ন থাকতে দেখা গেছে ডমিঙ্গোকে। এরপর ফুটবল খেলে গা গরম-ক্যাচ প্র্যাকটিস শেষে সৌম্য চলে যান ইনডোরের নেটে। তার পিছু পিছু ছিলেন প্রধান কোচও। নেটে দীর্ঘক্ষণ ব্যাট হাতে নিজেকে শাণিয়ে নেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। কখনও নেট বোলার আবার কখনও মেহেদী হাসান মিরাজ-তাইজুল ইসলাম বল করেছেন তাকে। কোনও ধরনের জড়তা ছাড়াই তাকে ব্যাটিং করতে দেখা গেছে। নেটে ব্যাটিং শেষে আবার সৌম্য-ডমিঙ্গো এক জায়গায় হন। কোচ বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন ভুল ত্রুটি। এরপর শিষ্যর সঙ্গে আলাপ করতে করতেই ইনডোর থেকে ড্রেসিংরুমের দিকে যান ডমিঙ্গো।

সৌম্যকে নিয়ে অনুশীলনে বাড়তি মনোযোগ ছিল কোচদের।

ইনডোরের নেটে সৌম্যর পাশে ব্যাটিং করছিলেন মিথুন। তার দিকে নজর ছিলো খোদ ব্যাটিং কোচ জন লুইসের। মোকাবিলা করছিলেন নেট বোলারদের। ছিলেন পেসার মেহেদী হাসান রানাও। পরে তাসকিন আহমেদকেও যোগ দিতে গেছে। গতকালের অনুশীলনেও লম্বা সময় ধরে ব্যাটিং করতে দেখা গেছে মিথুনকে। ব্যাটিং শেষ না হতেই তাকে ডেকে নিয়ে আসেন লুইস। এরপর মিনিট দশেক কথা বলেন দুজনে। অঙ্গভঙ্গি দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছিলেন কোন বল কীভাবে খেলবেন। দলীয় অনুশীলন হলে শেষ দিনের প্রস্তুতিতে সৌম্য-মিথুনদের দিকেই ছিল যত নজর।

নেটে ব্যাটিং অনুশীলন করতে দেখা গেছে মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবাল ও অধিনায়ক মুমিনুল হককেও। তবে তারা মিথুন-সৌম্যদের মতো লম্বা সময় ধরে ব্যাটিং করেননি। ঢাকা টেস্টে জয়ের ধারায় ফিরতে হলে এই তিনজনকে জ্বলে উঠতে হবে আপন আলোয়। নেটে যখন প্রধান কোচ-ব্যাটিং কোচ ব্যাটসম্যানদের নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন তখন শের-ই-বাংলার তৃতীয় উইকেটে পেসার দিয়ে কাজ করছিলেন বোলিং কোচ ওটিস গিবসন। মোস্তাফিজুর রহমান, আবু জায়েদ রাহীদের বোলিং তদারকি করছিলেন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে। কোনও ডেলিভারি ভালো হলে দিচ্ছিলেন বাহবা আবার কোনোটা মনমতো না হলে দেখিয়ে দিচ্ছিলেন কীভাবে কোথায় বল ফেলতে হবে। এভাবেই সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে দলের অনুশীলন। 

ওয়ানডে সিরিজে ধবলধোলাই করে অভিজাত সংস্করণ টেস্ট খেলতে নামে বাংলাদেশ। চট্টগ্রামে প্রথম টেস্টের চতুর্থ দিন পর্যন্ত কর্তৃত্ব বজায় রাখলেও শেষ দিন নিজেদের নির্বিষ বোলিং আর কাইল মায়ার্সের মহাকাব্যিক ডাবল সেঞ্চুরিতে হার মানতে হয়। তাই ঢাকা টেস্ট লাল সবুজের প্রতিনিধিদের সামনে বাঁচা-মরার লড়াই। এই টেস্ট জিতে সিরিজ কী বাঁচাতে পারবে মুমিনুল হকের দল?