খেলাধুলা

নির্বিষ বোলিংয়ে শ্রীলঙ্কার রেকর্ডময় দিন

টেস্টের চিরায়িত সেই কথাই যেন সত্য হলো, ‘দিনের প্রথম ঘণ্টা কাটিয়ে দাও, বাকিটা সময় নিজের করে নাও।’ পাল্লেকেলেতে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা শ্রীলঙ্কা শুধুমাত্র দিনের প্রথম ঘণ্টা রয়েসয়ে খেলল। বাকিটা সময় কড়া শাসন করলো অতিথিদের। বাংলাদেশের বোলাররাও তাদের সাহায্য করেছে। তালগোল পাকানো বোলিংয়ে অনায়েস রান আসবে এটাই স্বাভাবিক।

দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিনটি নিজেদের করে নিল দিমুথ করুণারত্নের দল।  বাংলাদেশের নির্বিষ ও হতশ্রী বোলিংয়ের দিনে শ্রীলঙ্কার রান ১ উইকেটে ২৯১।  সেঞ্চুরি পেয়ে ১১৮ রানে সাজঘরে ফিরেছেন দিমুথ করুনারত্নে। আরেক সেঞ্চুরিয়ান লাহিরু থিরিমান্নে অপরাজিত আছেন ১৩১ রানে। তার সঙ্গী ওশাদা ফার্নান্দোর ব্যাট থেকে এসেছে ৪০ রান। দুর্দান্ত ব্যাটিং রেকর্ডময় একটি দিন কাটিয়েছে শ্রীলঙ্কা।  বাংলাদেশের হয়ে একমাত্র উইকেটটি নিয়েছেন অভিষিক্ত হওয়া শরিফুল ইসলাম।

বাংলাদেশের নির্বিষ বোলিংয়ের এক অদ্ভুত প্রদর্শনীতে শ্রীলঙ্কা রেকর্ডময় দিন কাটিয়েছে। উদ্বোধনী উইকেটে করুনারত্নে ও থিরিমান্নে ২০৯ রানের জুটি গড়েন। যা বাংলাদেশের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার উদ্বোধনী জুটিতে রেকর্ড রান। তারা ছাড়িয়ে যান ২০ বছর আগের মারভান আত্তাপাতু ও সনাৎ জয়াসুরিয়ার ১৪৪ রানের জুটি। এছাড়া টানা তিন ইনিংসে তাদের জুটির রান একশ ছুঁয়েছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এমন কীর্তি আছে ১১ জুটির। শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটে প্রথম।

শেষ ম্যাচে ব্যাটিং বান্ধব উইকেটের জন্য ডিমেরিট পয়েন্ট পেয়েছিল পাল্লেকেলে। এ ম্যাচে এখন পর্যন্ত উইকেটের যা ধরণ তাতে বোলারদের জন্য খুব ভালো খবর নেই। শেষ ম্যাচে ঘাস ছিল। এ ম্যাচে একেবারেই নেই। ফ্ল্যাট উইকেট, ব্যাটসম্যানদের জন্য যেন স্বর্গ।

দিনের শুরুতে তাসকিন ও রাহীর ভালো আক্রমণ। দ্বিতীয় ওভারে তাসকিন এসে করুনারত্নকে দুইবার প্যাডে আঘাত করিয়ে এলবিডব্লিউয়ের আবেদন করেন। রাহী নিজের দ্বিতীয় ওভারে কট বিহাইন্ডের আবেদন করেছিলেন। অভিষিক্ত শরিফুল প্রথম ওভারে চতুর্থ ও পঞ্চম স্টাম্প বরাবর বল করে যাচ্ছিলেন। লাইন ও লেংথ ছিল নিখুঁত।

পানি পানের বিরতিতে যাওয়ার আগে বাংলাদেশের পেসাররা অস্বস্তিতে ফেললেন দুই বাঁহাতি ব্যাটসম্যানকে। কিন্তু এরপর তালগোল পাকালো বাংলাদেশ। প্রথম সেশনে দুই ঘণ্টার বোলিংয়ে যেন ভিন্ন দুই আক্রমণ। শুরুতে আঁটোসাঁটো বোলিংয়ে ব্যাটসম্যানদের চাপে রাখলেও দ্বিতীয় ঘণ্টায় আলগা বলে রানের ফোয়ারা। সুযোগে তরতরিয়ে রান বাড়িয়ে নেন স্বাগতিকরা। প্রথম সেশনে কোনো উইকেট না হারিয়ে ২৭ ওভারে রান ৬৬। অথচ প্রথম ঘণ্টায় রান ছিল ২২, বাউন্ডারি ১টি। দ্বিতীয় ঘণ্টায় ৮ বাউন্ডারিসহ রান ৪৪।

অথচ মধ্যাহ্ন বিরতির আগেই জুটি ভাঙার সুযোগ এসেছিল।  ২৮ রানে তাসকিন আহমেদের বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়েছিলেন করুনারত্নে। সেখানে ফিল্ডিং করা শান্ত হতাশায় ডোবান দলকে। থিরিমান্নে তাসকিনেরপরের ওভারে গালিতে ক্যাচ দিয়েছিলেন। কিন্তু ঝাঁপিয়েও মিরাজ নাগাল পাননি।  দ্বিতীয় সেশনে শ্রীলঙ্কার পারফরম্যান্স যতটা উজ্জ্বল, বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ততটাই অনুজ্জ্বল। ওভারপ্রতি ৪ করে ৩১ ওভারে তারা তুলেছে ১২২ রান। সকালের সেশনে বাংলাদেশের বোলারদের দুই-একটি সুযোগ দিলেও মধ্যাহ্ন বিরতির পর জমাট ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশকে ভুগিয়েছেন করুনারত্নে ও থিরিমান্নে। এ সময়ে করুনারত্নে তুলে নেন তার দ্বাদশ সেঞ্চুরি।

চা-বিরতির পর বাংলাদেশ পায় কাঙ্খিত ব্রেক থ্রু। লঙ্কান অধিনায়ক করুনারত্নে শরিফুল ইসলামের ভেতরে ঢোকানো বল কাট করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন। দারুণ ফর্মে থাকা এ ব্যাটসম্যান ১৯০ বলে ১৫ চারে করেন ১১৮ রান। সঙ্গী হারানোর পরপরই থিরিমান্নে তুলে নেন ক্যারিয়ারের তৃতীয় ও বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। এর আগে ২০১৩ সালে গলে ১৫৫ রান করেছিলেন তিনি। দিনের শেষ ওভারে শরিফুলের বলে এলবিডব্লিউর আবেদনে আম্পায়ার ধর্মাসেনা তাকে আউট দিয়েছিলেন। কিন্তু রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান। বলের সবকিছুই ঠিক ছিল। বাড়তি বাউন্সের কারণে উইকেট মিসিং ছিল। আর সারাদিন বাংলাদেশের বোলিং ছিল নিষ্প্রভ।