খেলাধুলা

মুশফিক মানেই সমস্যার সমাধান!

ওপেনার দ্রুত আউট। ওয়ান ডাউন ব্যাটসম্যানও ব্যর্থ। ইনিংসের শুরুতেই বড় ধাক্কা। দলের স্কোর তখন ১৫-ও পার হয়নি। একাদশের বেশিরভাগ স্বীকৃত ব্যাটসম্যানরা আগেভাগে ফিরে গেছেন। ড্রেসিংরুমে উৎকণ্ঠা জেঁকে বসেছে। চিন্তিত সবাই। স্কোরবোর্ডে বোধহয় বড় রান আর জমা হলো না!

কিন্তু শুরুর ও মাঝের এই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা সব দূর করে দিচ্ছেন একজন, তিনি মুশফিকুর রহিম। যতক্ষণ উইকেটে তিনি, ততক্ষণ যেন নির্ভরতার প্রতীক। তার চওড়া ব্যাট যেন আস্থা ও ভরসার প্রতীক হয়ে দাঁড়াচ্ছে প্রতিটি বিপদে।

সিরিজের প্রথম ম্যাচের পর দ্বিতীয় ম্যাচেও সেই একই ‘চিত্রনাট্য’। মিরপুরে প্রথম ম্যাচে দলের স্কোর যখন ২ উইকেটে ৪২ রান, তখন মুশফিক ব্যাটিংয়ে নামেন। খেলেন ৮৭ বলে ৮৪ রানের দুর্দান্ত ইনিংস। তার সেই ইনিংসের ওপর ভর করেই বাংলাদেশের দলীয় সংগ্রহ হয়েছিল ২৫৭ রান। সেই ম্যাচ জিতলো বাংলাদেশ ৩৩ রানে। ম্যাচ সেরা মুশফিক।

দুই দিন পর একই ভেন্যুতে একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ম্যাচ। টসজয়ী বাংলাদেশ দলের ব্যাটিংয়ের শুরুর সেই চিত্র প্রথম ম্যাচের মতোই। ওপেনিং জমলো না। ওয়ান ডাউনও ব্যর্থ। জুটিতে বড় রান নেই। ফিরে এলো সেই পুরোনো দুশ্চিন্তা, স্কোর বড় হবে তো?

কিন্তু মুশফিক যে তখনও নটআউট। যথারীতি এদিনও তিনিই রক্ষাকর্তা, ব্যাটিংয়ে ভরসার চিত্র। বিপদে পড়া দলকে কীভাবে টেনে তুলতে হয়, মুশফিকের সাম্প্রতিক দুটো ইনিংস তারই দুর্দান্ত উদাহরণ।

প্রতিটি বলকে তার মর্যাদা অনুযায়ী খেলা। নিজের শক্তির ক্ষেত্রকে আরও প্রসারিত করা। পরিস্থিতি অনুযায়ী খেলার ধরন বদলে নেওয়া। সাফল্যের চিন্তা করে সময়ে ঝুঁকিও নেওয়া। ‘পারফেক্ট টিমম্যান’ হিসেবে নিজেকে উজাড় করে দেওয়া। নিজের ও দলের খেলা নিয়ে পরিশীলিত চিন্তা। কঠিন পরিস্থিতিতেও লড়াই চালিয়ে যাওয়ার দৃঢ়তা ও সংকল্প- ব্যাট বলের ক্রিকেটে এসব অনুষঙ্গই মুশফিকের সাফল্যের ধারক।

৭০ বলে মাত্র ১ বাউন্ডারিতে চলে আসে হাফ সেঞ্চুরি। পরের ৪৪ বলে নামের পাশে যুক্ত হয় আরও পঞ্চাশ রান। তাতে মুশফিক পেয়ে যান সেঞ্চুরি। দৃষ্টিনন্দন একেকটি শট। ব্যাট-প্যাডের দারুণ রসায়ন এবং নিবিড় মনোযোগে মুশফিক অনন্য, অসাধারণ। মুশফিক মানেই নির্ভরতার প্রতীক। কৃতিত্বের সেই স্বাক্ষর রাখলেন ক্যারিয়ারের অষ্টম ওয়ানডে সেঞ্চুরিতে।

ইনিংসের শুরুতে নিজেকে গুটিয়ে রেখেছেন দলের প্রয়োজনে। শেষটায় আবার দলের প্রয়োজনে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসলেন। তাতে বাংলাদেশ পায় লড়াকু পুঁজি। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে মুশফিক যখন কভারে ক্যাচ দিলেন, তখন বাংলাদেশের রান ২৪৬। তার মধ্যে মুশফিকের একারই ১২৫। ধ্রুপদী এই ইনিংসে তিনি ১২৭ বল খেলে মারেন ১০ বাউন্ডারি।

গত ম্যাচের পর এবারও মুশফিকের লড়াইটি ছিল একার। মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে তার প্রথম ওয়ানডেতে জুটি ছিল ১০৯ রানের। দ্বিতীয় ম্যাচে তাদের জুটিতে আসে ৮৭ রান। আরেকটি দিক অবশ্যই বলতে হয়, মোট আট ব্যাটসম্যানের সঙ্গে মুশফিক জুটি বেঁধেছেন। একপ্রান্ত আগলে তিনি অনায়াসে রান করেছেন। পার্শ্বনায়ক হিসেবে মাহমুদউল্লাহ ও সাইফ উদ্দিন লড়াই করলেও মুশফিক একাই ছিলেন একশ! তাতে নামের পাশেও যুক্ত হয়েছে আরেকটি ‘একশ’।