খেলাধুলা

মুনিম-শান্তর ব্যাটে চড়ে সুপার লিগে আবাহনী

বৃষ্টি আইনে ৪৯ রানে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবকে হারিয়ে প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের পর দ্বিতীয় দল হিসেবে ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেটের সুপার লিগ নিশ্চিত করেছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন আবাহনী লিমিটেড।

সোমবার (১৪ জুন) মিরপুরে বৃষ্টির বাগড়ায় দুই দলের হাইস্কোরিং ম্যাচটি পণ্ড হয়। আবাহনী টস জিতে ব্যাটিং করতে নেমে ১৮.২ ওভারে ৪ উইকেটে ১৮১ রান তোলে। এরপর বৃষ্টিতে দেড় ঘণ্টা খেলা বন্ধ থাকে। ডাকওয়ার্থ লুইস মেথডে শেখ জামাল ১৩ ওভারে ১৪৮ রানের লক্ষ্য পায়। বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৯৮ রানের বেশি তুলতে পারেনি কাজী নুরুল হাসান সোহানের দল।

৯ ম্যাচে ৭ জয় নিয়ে দ্বিতীয় দল হিসেবে সুপার লিগ নিশ্চিত করলো আবাহনী। এর আগে সকালে প্রাইম ব্যাংক সবার আগে সুপার লিগ নিশ্চিত করে। তাদেরও ৯ ম্যাচে ৭ জয়ে পয়েন্ট ১৪।

আবাহনীর টানা দ্বিতীয় জয়ের নায়ক মুনিম শাহরিয়ার। ডানহাতি ব্যাটসম্যান আজও ঝড় তোলেন ২২ গজে। তার ইনিংসটিও ছিল ‘পিকচার পারফেক্ট’। ডানহাতি পেসার ইবাদতের লেন্থ বল ডিপ কভারের ওপর দিয়ে ছক্কায় উড়িয়ে হাত খোলা শুরু মুনিমের। পরের দুই বলও অফস্টাম্পের বাইরে। এবার আদায় করে নেন দুই বাউন্ডারি। পরের ওভারে নাসিরকে ডিপ মিড উইকেট দিয়ে ছক্কা উড়ানোর আগে টাইমিংয়ে গড়বড় করে লং অনে ক্যাচ দিয়েছিলেন। কিন্তু ১৭ রানে তার ক্যাচ ফেলে দেন আব্দুল হালিম। এরপর তার ব্যাটের দাপটে লন্ডভন্ড শেখ জামালের বোলিং আক্রমণ।

এক ওভার পর নাসিরকে সুইপ করে লং লেগ দিয়ে চারের পর মুনিম ইনসাইড আউট শটে কভারের ওপর দিয়ে হাঁকান ছক্কা। ওই ওভারের শেষ বলে একই শটে আদায় করে নেন আরেকটি বাউন্ডারি। তাতে ৬ ওভারে আবাহনীর রান ১ উইকেটে ৫৯। মুনিমের রান ২২ বলে ৪৬। পেসার হালিমের সপ্তম ওভারে পয়েন্ট ও গালির মাঝ দিয়ে চার হাঁকিয়ে ২৪ বলে ফিফটি তুলে নেন মুনিম। লিগে টানা দ্বিতীয় ফিফটি। 

আরেকপ্রান্তের ব্যাটসম্যান নাজমুল হোসেন শান্তও থেমে থাকেননি। জিয়াউর রহমানকে মিড অন দিয়ে চার হাঁকিয়ে প্রথম বাউন্ডারি তুলে নেন। এরপর মুনিম ডানহাতি পেসারের গতি কাজে লাগিয়ে আলতো টোকায় থার্ড ম্যান অঞ্চল দিয়ে বল পাঠান সীমানার বাইরে। নবম ওভারে নতুন বোলার ইলিয়াস সানী বোলিংয়ে এলে শান্ত ও মুনিম একটি করে বাউন্ডারি হাঁকান। ওই ওভারে আসে ১১ রান। সব মিলিয়ে ১০ ওভার শেষে আবাহনীর রান ১ উইকেটে ১০০।

শেষ ১০ ওভারে আক্রমণ বাড়াতে গিয়ে শুরুতে হোঁচট খায় শিরোপাধারীরা। ১২তম ওভারের শেষ বলে মুনিম মিড অফে ক্যাচ দেন জিয়ার বলে। ৪০ বলে ৯ চার ও ৩ ছক্কায় ৭৪ রান করেন তিনি। পরের ওভারে মুশফিক ইবাদতের বল স্লগ করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন শূন্য রানে। দ্রুত ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া আবাহনীর হাল ধরেন শান্ত ও মোসাদ্দেক। শুরুতে ধীর গতিতে রান তুললেও শেষ দিকে রীতিমত তাদের ব্যাটে ঝড়।

স্পিনার এনামুলের ওভারে সবচেয়ে বেশি রান আসে। ১৮ ওভারে স্পিনার এনামুলকে এনে বিপদে ডেকে আনেন সোহান। ওই ওভারে ২৭ রান বিলিয়ে আসেন ডানহাতি অফস্পিনার। মোসাদ্দেক হোসেন দুই ছক্কা হাঁকান। শান্তর ব্যাট থেকে আসে দুই চার। অতিরিক্ত খাতে যোগ হয় আরও ৫ রান।

শাকিলের করা ১৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলে মোসাদ্দেক পয়েন্টে ক্যাচ দিলে ভাঙে তাদের জুটি। এরপর বৃষ্টি বাগড়া। লিগের প্রথম ফিফটি হাঁকিয়ে শান্ত অপরাজিত থাকেন ৬৫ রানে। ৪২ বলে ৬ চার ও ২ ছক্কায় সাজান ইনিংসটি।

বৃষ্টি আইনে পাহাড়সম লক্ষ্য পায় শেখ জামাল। এজন্য শুরু থেকেই আক্রমণে যাওয়ার দরকার ছিল। কিন্তু প্রথম দুই ওভারে দুই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে দলটি। সৈকত আলী সাইফউদ্দিনের বলে মুশফিকের হাতে ক্যাচ দেন ১ রানে। জিয়াউর রহমান ১ চার ও ১ ছক্কায় ৪ বলে ১১ রান তুলে রানার বলে আউট হন। চারে নামা সোহান ক্রিজে এসেই ২ চার হাঁকান। তানজিব সাকিবের করা তৃতীয় ওভারে ২ ছক্কা হাঁকান ফাইন লেগ ও মিড উইকেট দিয়ে। মনে হচ্ছিল তার একার ব্যাটেই লড়বে শেখ জামাল। কিন্তু চতুর্থ ওভারে ডিপ কভারে দারুণ এক ক্যাচ ধরে তাকে থামান অফিফ। রানার বলে উইকেট থেকে সরে গিয়ে উড়াতে চেয়েছিলেন। টাইমিংয়ে গড়বড়। ক্যাচ আফিফের অনেক সামনে পড়লেও দারুণ দক্ষতায় বল তালুবন্দী করেন।

এরপর শেখ জামালের পরাজয় আটকানো যায়নি। শেষ দিকে ২৯ রান করে পরাজয়ের ব্যবধান কমান এনামুল হক। মিড অর্ডারে তানবীর (১), নাসির হোসেন (৬) ও ইলিয়াস সানীরা (৫) হাল ধরতে পারেননি।

১৬ রানে ৩ উইকেট নিয়ে আবাহনীর সেরা মেহেদী হাসান রানা। আরাফাত সানী ১৬ রানে নিয়েছেন ২ উইকেট। ১টি করে উইকেট পেয়েছেন সাইফ উদ্দিন, সাকিব ও বিপ্লব।

৯ ম্যাচে শেখ জামালের এটি চতুর্থ হার। ৫ ম্যাচ জিতে তাদের পয়েন্ট ১০। সুপার লিগ নিশ্চিত করতে হলে শেষ দুই রাউন্ডে জিততেই হবে তাদের। নয়তো লড়াইয়ে পিছিয়ে পড়বে।